আবদুল হাকিম (মাসুম)
নদী সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ও মানুষের মধ্যে নদী ভাবনা তৈরি করতে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব নদী দিবস।’
আর এই নদী দিবসে স্থানীয়ভাবে এর প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করা হয়েছে ‘দূষণমুক্ত নদী-সুস্থ জীবন।’

নদী রক্ষায় নাগরিকদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৮০ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের শিক্ষক ও দেশপ্রেমিক মার্ক অ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে সেপ্টম্বর মাসের চতুর্থ রোববার দিবসটি পালনের সূচনা হয়। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় তা ছড়িয়ে পড়ে ।

২০০৫ সালে জাতিসংঘ নদী রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘জীবনের জন্য জল’ দশক ঘোষণা করে। এরপর থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে। যা দিন দিন বিস্তৃতি লাভ করছে। গত বছর বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে পালন করা হয়েছে বিশ্ব নদী দিবস । বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে।

সারা বিশ্বের যে কোন দেশে নদী মানুষের জীবনের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। নদী এ কুল ভাঙে আবার ঐ কুল গড়ে । তেমনি নদী মানুষের জীবনেও আনে দুঃখ বেদনা এবং গড়ে তুলে আনন্দ মধুরতা।

নদীর অববাহিকায় দেখা যায় দিগন্ত জুড়ে নয়ন জুড়ানো ফসলের ক্ষেত। নদীর তটে বিভিন্ন গাছের সারি। শোনা যায় পাখির কূজন ও বিভিন্ন সরিসৃপ প্রাণীর পদচারণা। সাথে থাকছে বিশুদ্ধ বায়ুর বিশাল সমারোহ । যারফলে সুস্থতা ফিরে পায় প্রাণীকুল, সুস্থ জীবন পায় মানবকুল ।

কিন্তু সেই নদীই আজ হয়ে উঠেছে প্রাণীকুল বিধ্বংসী মরণ ফাঁদে। প্রাণ চঞ্চল নদী আজ দুর্গন্ধময় পঁচা জলাশয়, বর্জ্য পদার্থের বিশাল আধার । সেই গভীর নদী এখন ভরাটে বিরাট ধুধু বালুচর। যারফলে নদীতে নেই ক্ষেতের সেচযোগ্য পানি, নেই সবুজ বেষ্টনীর উদ্ভিদের সমারোহ, দেখা মেলেনা হরেক রকম সরিসৃপ প্রাণীর, শুনা যায়না সকাল-সন্ধ্যা পাখির কোলাহল ।

যার ফলশ্রুতিতে সংকট আজ বিশুদ্ধ বায়ুর, সংকট ফসলের, সংশয় ছড়িয়ে পড়া নানান দুরারোগ্য ব্যধির, সবচেয়ে সংকটাপন্ন মানুষের সুস্থ জীবনের।

এ সবগুলোর সংকটের মূলে রয়েছে নদী সম্পর্কে মানুষের সচেতনতার অভাব । সব কিছুর মূলে রয়েছে নদী সম্পর্কে মানুষের দুর্ব্যবহার । অবৈধভাবে পাহাড় কাটার কারণে নদী ভরাট, কলকারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর পানি অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়া, শহরের নর্দমার আবর্জনা নদীতে ফেলার কারণে নদীর পানি পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো, অবৈধভাবে নদী দখলে নিয়ে ভরাট করে নদীর প্রকৃতি বিনষ্ট করণ ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূলে একমাত্র দায়ী কিছু অসাধু মানব।

‘একে জনে করে নষ্ট সবে কষ্ট পায়’। সমাজের এ এক-দুই জনের অপরাধের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সেই নদীর বৈশিষ্ট্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ‘দুষণমুক্ত নদী- সুস্থ জীবন’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে সবাই একসাথে আওয়াজ তুলি- নদী বাঁচাই, নিজে বাঁচি।

আবদুল হাকিম (মাসুম)
মানবাধিকার কর্মী
কক্সবাজার ।