হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:
প্রবল ইচ্ছে শক্তি, অদম্য সাহস, মানবিক চেতনা ও সামাজিক মূল্যবোধ থাকলে জনকল্যাণ করার জন্য চেয়ার বা পদমর্যাদার অধিকারী হওয়া লাগেনা। এমনটাই প্রমাণ করে চলেছেন সারাদেশের কওমী ওলামায়েকেরাম ও শিক্ষার্থীরা।কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের তরুণ ওলামায়েকেরামের স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামের অবহেলিত ও চলাচল অনুপযোগী সড়ক সংস্কার তেমনই একটি যুগান্তকারী মানবিক দৃষ্টান্ত।ইসলাম অনুরাগী তারুণ্যের সুসংহত কাফেলা দ্বীনি, স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক সংগঠন কাউয়ারখোপ ইসলামী তরুণ প্রজন্ম পরিষদের সদস্যরা এ মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেন। দিবানিশি কুরআন-হাদীসের শিক্ষাদান ও গ্রহনে আত্মনিবেদিত পবিত্র মনের এ মানুষগুলো নিজেরাই কুদাল, ঝুড়ি ও বস্তা নিয়ে বালি ভরাট করে, নিজেদের কাদে বালি বহন করে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের গ্রামের অবহেলিত বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কার করে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে সামাজিক অঙ্গনে। সারা বছর তাঁরা কওমী শিক্ষাঙ্গনে যে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চর্চা করেন একটুখানি অবকাশ পেলেই তা বাস্তবায়নে তাঁরা মাঠে নেমে পড়েন।
সংগঠনটির উদ্যোগে সোমবার (১৩জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কাউয়ারখোপ ভিলিজার পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন ভিলিজার পাড়া-মওলাঘোনার সুদীর্ঘ ৩শ ফুট সংযোগ সড়কটি বালির বস্তা দিয়ে মেরামত করেন। এ মানবিক উদ্যোগের ফলে সড়কটি দিয়ে নিত্য চলালচলকারীদের দূর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। সেই সাথে উন্নয়নের জোয়ারের এ সময়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটুখানি সুনজরের অভাবে জনবহুল গ্রামের সুদীর্ঘ একটি রাস্তা কিভাবে অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে তাও স্পষ্ট হয়ে গেলো।
এ সংগঠনের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ইতিপূর্বে পূর্ব কাউয়ারখোপ লামারপাড়া আব্দুল খালেক মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও দীর্ঘ রাস্তা মেরামত করেন।
এবিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলাম ও তৈয়ব উল্লাহ জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত অনেক সমস্যার মধ্যে ছিলাম। আমাদের বাচ্চাদের স্কুল, মাদ্রাসায় যেতে হাঁটু সমান কাদাময় রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হতো। আমাদের এই সমস্যা সমাধানে মাদ্রাসার ছাত্র ও তরুণ আলেমরা এগিয়ে এসেছেন। আমরা তাঁদের জন্য দু’আ করছি। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
স্বেচ্ছাশ্রমে এ মানবিক উদ্যোগে শামিল ছিলেন, সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা মুফতি বেলাল উদ্দিন, এলাকাবাসীর মধ্যে মোহাম্মদ ইসলাম, মোহাম্মদ ইউনুছ, তৈয়ব উল্লাহ, মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, ওই সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে মুফতি রিয়াজ কামাল, মাওলানা শাকের মাহমুদ, মাওলানা হানিফ আল মাহমুদ, মাওলানা আব্দুল হক, মাও সাইফুল ইসলাম, হাফেজ ওসমান গনি, মাওলানা রহমত উল্লাহ, মাওলানা কামাল উদ্দিন, মাওলানা আতাউল্লাহ, মাওলানা রাশেদ উল্লাহ, হাফেজ জামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, হাফেজ হেলাল উদ্দীন জুনাইদ, হাফেজ ছালামত উল্লাহ, হাফেজ মুবিনুল হক, মুহাম্মদ তারেক জামিল মাহমুদ, মুহাম্মদ গোলাম মাওলা, মুহাম্মদ রায়হান উদ্দিন, মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন, মুহাম্মদ আলী, মুহাম্মদ হামিদুল হক, মুহাম্মদ তারেক প্রমুখ।
সংগঠনের দায়িত্বশীলবৃন্দ জানান, ঈমানী কর্তব্য ও মানবিক চেতনাবোধ থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা এগিয়ে এসেছি। পরিপূর্ণরূপে কোন রাস্তা মেরামত করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না হলেও এলাকার জনমানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘবে আমাদের এই প্রয়াস। আমরা গ্রামের অবহেলিত সড়কগুলোর যথাযথভাবে পূণঃনির্মাণ ও সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর প্রতি জোর দাবি জানাই।
ওলামা-তুলাবাদের স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামের অবহেলিত সড়ক চলাচল উপযোগী করার এ যুগান্তকারী পদক্ষেপ অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে মানবিক চেতনার উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এভাবেই আলেমসমাজের মাধ্যমে জনকল্যাণের ধারা বিকশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
কবি যেমন বলেছেন-
“নদী যেমন দুই কুলে তার বিলিয়ে চলে জল
ফুটিয় তুলে সবার তরে শস্য ফুল ও ফল।
তেমনি করে মোরাও সবে পরের ভালো করব ভবে
মোদের সেবায় উঠবে জেগে এই ধরণী তল।”

লেখক-
সভাপতি
রামু লেখক ফোরাম