তাওহীদুল ইসলাম নূরী, চট্টগ্রাম থেকেঃ

প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ১০০ দিনের মাথায় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১৫৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে শুধু গত ১০ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২১৯২ জন।

০৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে চট্টগ্রামে বেড়ে চলছে করোনা রোগীর সংখ্যা। ০৩ এপ্রিল থেকে ০৩ মে প্রথম মাসে ৮৬ জনের মাঝে করোনাভাইরাস শনাক্ত হতে দেখা যায় এখানে।

এরপর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ০৪ মে থেকে গতকাল ১৩ জুলাই পর্যন্ত এই দুইমাস ১০ দিনে চট্টগ্রামের ১১৫১১ জনের মাঝে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। আগের ৮৬ জনসহ যেটির সংখ্যা ১১৫৯৭ জনে হল।

সংসদ সদস্য,আওয়ামীলীগ, বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতাকর্মী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,চিকিৎসক,আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পপতি,পুলিশ,বন্দর এবং গার্মেন্টসে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীসহ প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষ রয়েছেন চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে। এরমধ্যে অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীর মৃত্যুও হয়েছে করোনায়।

দেখা যাচ্ছে ২/১ টা দিন ছাড়া ০৩ এপ্রিল থেকে ১৩ জুলাই এই ১০০ দিনের প্রতিদিনই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। গতকাল পর্যন্ত যার সংখ্যা ১১৫৯৭ জনে গিয়ে ঠেকল।

উপরের তথ্যটি নিছক চট্টগ্রামের। কিন্তু প্রতিদিন চট্টগ্রামে শনাক্ত হয় আরও বিভিন্ন জেলার করোনা রোগী।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন চট্টগ্রাম ছাড়াও লক্ষ্মীপুর,বান্দরবান,রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী,ফেনীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যারমধ্যে প্রায় প্রতিদিনই এসব জেলার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে।

গত ০৩ এপ্রিল থেকে ০৩ মে পর্যন্ত প্রথম একমাসে ৮৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। ০৪ মে থেকে ০৩ জুন পর্যন্ত দ্বীতিয় মাসে আগের চেয়ে প্রায় ৪২ গুণ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় চট্টগ্রামে। তৃতীয় মাসে ০৪ জুন থেকে ০৩ জুলাই পর্যন্ত এই সময়ে ৫৮৬৮ জনের মাঝে করোনা শনাক্ত করা হয়। আর, সর্বশেষ গত দশদিনে ২১৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রামে।

অর্থাৎ প্রথম মাসে ৮৬ জন, দ্বিতীয় মাসে ৩৪৫১ জন, তৃতীয় মাসে ৫৮৬৮ জন এবং শেষ দশদিনে ২১৯২ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। দিন দিন এভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটা চিন্তার শুধু নয় বরং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং আতঙ্কেরও।

জানা যায়, প্রথম দিকে শুধুমাত্র চট্টগ্রামে বিআইটিআইডিতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হত৷ কিন্তু, বর্তমানে বিআইটিআইডির সাথে সাথে চমেক এবং সিভাসুর পাশাপাশি কয়েকটি বেসরকারি ল্যাবেও করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

বিশিষ্টজনরা বলেছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা এবং জনগণের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার ফলেই দিন দিন অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।অনেক সময় দেখা যায় একই ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন ল্যাবে পজেটিভ এবং নেগেটিভ দুই ধরনের রিপোর্ট আসতেছে। আর, বেশির ভাগের রিপোর্ট আসতেছে হয় সুস্থ হওয়ার পর,নয় মৃত্যুর পর। আর, শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার এই হালের কারণই দিন দিন আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, গত তিন মাসে চট্টগ্রামে ১১৫৯৭ জনের মাঝে করোনা শনাক্ত করা হয়। যারমধ্যে ২১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩৯৭ জন সুস্থ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানে চট্টগ্রামে ৯৯৮৪ জন করোনা রোগী রয়েছেন। সুস্থ হওয়াদের বেশির ভাগই বাসা বাড়িতে আইসোলশনে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হচ্ছেন বলে জানা গেছে।