ফখরুল করিম 


বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্র ২০০১ সালের ২৪ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। তখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২১ একর জায়গার উপরে অবস্থিত কেন্দ্রটির শুভ সূচনা করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশে ছোট পাহাড়ের উপর শহর থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে বেতার কেন্দ্রটি পুরাতন টেকনাফ রোডের পাশে অবস্থিত। বাংলাদেশ বেতারের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারের প্রচারণামূলক কাজের পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতির লালন পালন ও বিকাশ ঘটানো কিন্তু সুদীর্ঘ ১৯ বছরেও কক্সবাজার বেতার কেন্দ্র টি একটি পূর্ণাঙ্গ  কেন্দ্রে পরিণত হতে পারেনি। জনবল স্বল্পতা সহ রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। শিল্পীবান্ধব করার জন্য যে নিয়মিত কর্মসূচি রয়েছে নানাবিধ কারণে দীর্ঘদিন তা করা হয়নি, নেওয়া হয়নি কোন ধরনের শিল্পীদের অডিশন ও গ্রেডেশন ফলে বেতার কেন্দ্রটি খোঁজে পায় নি নতুন নতুন শিল্পীর কন্ঠস্বর, যা ইথারে ছড়িয়ে যাবে শ্রোতাদের কাছে। গত জানুয়ারি/ ২০২০ এ উপস্থাপনার অডিশন ও গ্রেডেশন নেওয়া হয়, অনেক পুরনো ঘোষক/ ঘোষিকা গ্রেডেশন পেয়েছেন আর উপস্থাপনা শাখায় যুক্ত হয়েছে একঝাঁক নতুন প্রজন্মের শিল্পী। যাদের পদচারণায় কক্সবাজার বেতার কেন্দ্রটি মুখরিত হচ্ছে, অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে নানাবিধ পদক্ষেপ। বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো কক্সবাজারের শিল্পী সমাজ ও সুশীল সমাজ। শিল্পী সমাজের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে তিনমাস পর পর বেতার কেন্দ্রে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও নানাবিধ বর্তমান সমস্যার সমাধান নিয়ে অংশগ্রহণমূলক সমন্বয় সভার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় কিন্তু করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য বিশ্ব বেতার দিবসের পর আর কোন সমন্বয় সভা করা সম্ভব হয়নি। সংগীত শিল্পীদের ও নাট্য শিল্পীদের জন্য নেওয়া হয়েছে অডিশন ও গ্রেডেশনের পরিকল্পনা কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রে জাতিসংঘ শিশু তহবিল তথা ইউনিসেফের রয়েছে নানা ধরনের কর্মসূচি। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য নানা ধরনের সচেতনতামূলক বেতার অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের সংগীতশিল্পী, নাট্য শিল্পী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, উন্নয়ন কর্মীদের অংশগ্রহণে করা হয়।  ইউনিসেফের বেতার কর্মসূচি বাস্তবায়ন খুবই ইনোভেটিভ এবং চ্যালেঞ্জিং কারণ বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রে নির্মিত অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় লিংক দেওয়া হয়, যার সাথে জড়িত থাকে বেতারের সুনাম। এসব অনুষ্ঠান নির্মাণে নিজের সৃজনশীলতায় বিভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছি, যা এখন সর্বত্র প্রশংসিত। একটি বেতার কেন্দ্র কে শিল্পী বান্ধব করার জন্য চাই নিজস্ব শিল্পী সত্ত্বা তাহলেই বেতার হবে শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম স্থান। একটা কথা বিশ্বাস করি শিল্পীদের চাওয়া পাওয়ার তেমন কিছু নেই কিন্তু রয়েছে প্রচন্ড শক্তিশালী মান সম্মান ও অভিমান। এসব জয় করেই বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করার সময় পেয়েছি তাঁদের কাছ থেকে ভালবাসা ও সহযোগিতা। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে কক্সবাজার বেতার শিল্পী সমন্বয় পরিষদের সাথে গেট টুগেদার ( পিকনিক), যা পূর্বে কখনো এখানে হয়নি। প্রশাসনিক অহংবোধ দূরে  রেখে শিল্পী সত্ত্বা মন মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় এবং বেতার হয় সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের। তবেই আসবে সাফল্য আর অর্জিত হবে বাংলাদেশ বেতারের সুনাম।

অন্যদিকে বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের করতে হয় বহুমাত্রিক কমিউনিকেশন । এখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবস্থান করায় তাঁদের মানবিক সহায়তায় কাজ করছে কয়েক শ দেশী বিদেশী এনজিও। বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রটি একমাত্র রাষ্ট্রীয় মাধ্যম বিধায় রয়েছে অডিও সম্পর্কিত  বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মনিটরিং করার দায়িত্ব। কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা পূর্ণবাসন ও প্রত্যাবাসন কমিশন ( আর আর সি) অফিসে এফ. ডি সেভেন জমা দিয়ে কমিউনিকেশন এর নামে অনেকেই অডিও সম্প্রচার করছে, যা জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ এর সাথে যায় না এমন কি অডিও বা তথ্য সম্প্রচার অথবা  যোগাযোগের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি/ অনুমোদনও নিচ্ছে না। একমাত্র কমিউনিটি রেডিও স্টেশন হিসেবে যেটি রেডিও নাফ করতে পারে এবং করছে। এসব বিষয়ে কিভাবে সমন্বয় করা যায়, সে বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে ছিলাম। ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার, রেডি নাফ, ডয়েচে ভেলে একত্রে  আইএসসিজি এর কমিউনিকেশন উইথ কমিউনিটিস ওয়ারকিং গ্রুপের সাথে একটা গাইডলাইন/ সম্পাদনা পর্ষদ গঠন করে সরকারের প্রচারণামূলক কাজের পাশাপাশি স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বেতার অনুষ্ঠানকে শ্রোতা বান্ধব করার চেষ্টা অব্যাহত ছিল।

বিশ্ব মহামারী কভিড: ১৯ এ  বাংলাদেশ বেতার সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্র জেলা প্রশাসন ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ ও নিয়মিত প্রচার করছে। প্রতিদিন নিয়মিত কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের কভিড: ১৯ এ করনীয় ও অন্যান্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে অডিও ক্লিপ প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত ভাবে স্পষ্ট, পিএসএ, ফোন ইন, পুঁথি পাঠ, ম্যাগাজিন, কানেক্টিং এআরএলসি ইত্যাদি। বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য দপ্তরের সাথে  সুসম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। করোনা কালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রচারণামূলক সব ধরনের প্রস্তুতি বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রের রয়েছে।উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিধায়  বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় একমাত্র জনসচেতনতামূলক মাধ্যম হিসেবে গণমানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সদর দপ্তরের নির্দেশনায় ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্রে শ্রোতাপ্রিয় অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতার সবার জন্য সবসময় সবখানে- এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে শিশু, নারী, কিশোর ও কিশোরী, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলকে নিয়ে কক্সবাজারের আনাচে কানাচে ইথারে ইথারে ছড়িয়ে পড়ছে বেতার অনুষ্ঠান আর শ্রোতাবৃন্দ জীবন মান পরিবর্তনে ও সচেতনতায় এগিয়ে আসছে রেডিও সেটের সামনে অথবা মোবাইল সেটে টিউন করছে এফ.এম ১০০.৮ । বেতার একটি ঘুমন্ত হাতি ,,,,  শুধু একে জাগিয়ে তুলতে পারলেই সরকারের উন্নয়ন প্রচারণামূলক কর্মসূচির বাস্তবায়ন এবং সমাজ সংস্কৃতির আমুল পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ মাধ্যমে শিল্পী সত্ত্বার ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবেই ঘটবে।


 লেখক: উপ আঞ্চলিক পরিচালক ( আঞ্চলিক পরিচালকের  দৈনন্দিন কার্যাবলীর দায়িত্বে) বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার।