কোয়ারান্টাইনের বদ্ধ পরিবেশ যেন অস্বস্তি হইয়া উঠিতেছি। জীবন যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাইবার জন্য আজ ঘরকোনা হইয়া রহিয়াছি। আর আমারই দ্বারা অন্যজনের প্রাণ ঝুঁকিতে না হইবার জন্য অসময়ে আবদ্ধ হইয়া আছি। সময় খানি যেন অফুরন্ত। ঘড়ির কাঁটাটি যেন ক্লান্ত হইয়া গিয়াছে। যেন চলিতে চলিতে থামিয়া যায়। দিবা রাত্রি যেন এক করিয়া ফেলি নিদ্রার প্রতিটি ক্ষণে। উপলব্ধি হইতেছে যেন কলমখানিও আমারই স্পর্শে আসিবার চাইনা। তবে আমারই সংকলনে লিপিবদ্ধ কাব্য গুলো অনুভূতিতে স্পর্শরত হয় প্রতিনিয়ত।
আজ আমারই ইচ্ছে গুলোকে আমি ঠাই দিতে পারিনা।

আমি উপলব্ধি করিয়াছি বন্ধি পাখির সহস্র মিনতি। শত আর্তনাদ। ঐ মুক্ত আকাশের টানের মায়া কান্না যেন কাহারো কর্ণ প্রহরে পৌঁছাইনা। ডানা থাকিতেও বন্ধির দুঃখ যেন উড়ন্ত পক্ষির হৃদয়ের বারংবার দাগ কাটে।
কেহ শুনিবার চাইনা। কেহ বুঝিবার চাইনা।তবে আমি বুঝিয়াছি আবদ্ধ থাকিয়া উড়ন্ত পক্ষির যন্ত্রণা।

আমি উপলব্ধি করিয়াছি অবস মানবের শত যন্ত্রণা। পা থাকিবার পরেও হাটিতে না পারার শত অসুখ।
পদস্পর্শে শুষ্ক ধুলো গুলো আন্দোলিত না করিতে পারার শত যন্ত্রণা। সবুজ ক্ষেতে আর নদী পারাবার হইবার আমেজ খানি যেন দিন দিন শীতল হইয়া যায় অবস মানবের। দেহে গুপ্ত থাকা অন্তরাত্মার শত কান্না যেন কেহ শুনিবার চাইনা। বুঝিবার চাইনা। সবাই চলিতে থাকে যে যাহার মতো সচল দেহখানি লইয়া। আর আবদ্ধ পড়িয়া থাকে সেই অবস দেহখানি। তবে আমি উপলব্ধি করিয়াছি আজ আমিও আবদ্ধ হইয়া রহিয়াছি বলে।

আমি উপলব্ধি করিয়াছি অন্ধ মানবের এক আকাশ সমান দুঃখ। কাহারো চক্ষু থাকিবার পরেও দৃষ্টিশক্তি না থাকিবার অভাবের যন্ত্রণা। দিবা হউক আর রাত্রি যাহার কোনো হিসেব থাকেনা। হিসেব শুধুই একটিই থাকে সেটি হইলো আলো বিহীন অন্ধকার। যেন এক আঁধারে বন্ধি জীবন। তবে আজ দৃষ্টি শক্তি থাকিবার পরেও আমি অন্ধের কাতার রহিয়াছি। আবদ্ধ রহিয়াছি বলিয়া আজ তাহার যন্ত্রণা উপলব্ধি করিবার পারিয়াছি।

আমি আবারো উপলব্ধি করিয়াছি খৎনা করা বালকের অফুরন্ত স্থির ক্ষণের মনকথা। যেন মনখানি বারবার ছুটিয়া যায় চতুর্ভূজ আকৃতির খেলার মাঠে। মনখানি ছুটিয়া যায় সহপাঠীর দলের দুষ্টামীর মূহুর্তে। কবে মিলবে মুক্তি। কবে হবো সুস্থ এই প্রতীক্ষা যেন আমারি সাথে মিলিয়া যায়। আজ আমিও উপলব্ধি করিয়াছি আবদ্ধ বলিয়া।

আমি উপলব্ধি করিয়াছি জেলখানার বন্দি কয়েদীদের মুক্তি মিলবার শত প্রতীক্ষা। বাহিরের আলো বাতাস হাতছানি দিয়ে ডাকিলেও স্পর্শ করিবার উপায় নেই। উন্মুক্ত মনে আনমনা পথিকের বেশে হাটিবার শত ইচ্ছে থাকিলেও ইচ্ছে টুকু পূর্ণ করিবার উপায় নেই। আমি এইসব উপলব্ধি করিয়াছি কারণ আমিও আজ বন্ধি হইয়া রহিয়াছি বলে।

বেশক’দিন ধরিয়া রহিয়াছে আবদ্ধ। মাঝে মাঝে বৃষ্টিখানি ছুঁয়ে দেখিতে মন চাই। মন চাই নদীর পাড়ে আবারো সন্ধ্যার সময়টুকু হাঁটিয়া পার করিতে।
মন চাই আবছা আলোতে ডুবন্ত সূর্যের সাথে উন্মুক্ত পরিবেশ একলা বসিয়া
“দ্য আলকেমিস্ট” বইটির শেষের বাকি পৃষ্ঠা টুকু পড়িয়া ফেলিতে। তবে, আগে সুস্থ হওয়াটা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
খুব শীগ্রই ইতি টানুক এই ক্ষণের।

লেখক: শফিকুল ইসলাম নয়ন, শিক্ষার্থী: কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
Facebook: Abir Si Noyan