আবুল কালাম , চট্টগ্রাম :

নগরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এর উদ্যোগে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার উদ্ভোদনের পর নগরীর হালিশহরের পোর্ট কানেকটিং সড়কে প্রিন্স অব চিটাগং নামে একটি কমিউনিটি সেন্টারকে আরও ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলেছেন এক দল তরুণ। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিট-১৯) তে নগরীতে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত। রাজধানী ঢাকার পর এবার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম।

করোনা রোগীদের ভাড়ে ন্যুয়ে পরেছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালের বারান্দায়, হুইল চেয়ারে বসেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে করোনা আক্রান্ত রোগী। এমন বাস্তবা উপলব্দি করেছে চট্টগ্রামের একদল তরুণ-যুবক। তারা ১০ দিনের প্রানপণ চেষ্টায় গড়লেন একটি ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’। তাদের মধ্যে কেউ শিক্ষার্থী, কেউ চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। বিত্তবান ও আগ্রহীদের সহযোগিতা নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে তোলা এই আইসোলেশন সেন্টারে রোববার (১৪ জুন) থেকে করোনায় আক্রান্তদের ভর্তি করা হবে। দেয়া হবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা।

শনিবার (১৩ জুন) বিকেলে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে করোনা আইসোলেশন সেন্টার, চট্টগ্রাম নামে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণিসহ সংগঠনটির একদল নেতাকর্মী, ডাক্তার-আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিকরাও।

উদ্যোক্তাদের একজন সাজ্জাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের চিকিৎসা দিতে ক্রমাগত অসহযোগিতার কারণে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে গত একমাস ধরে। করোনায় আক্রান্তরা তো চিকিৎসা পাচ্ছেনই না, আক্রান্ত নন এমন রোগীরাও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় গত ২৪ মে একটি আইসোলেশন সেন্টার গড়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই। দুদিন পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন ভাইয়ের মাধ্যমে প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারের মালিককে উনার প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারে রাজি করাই। এর মধ্যে আরও ১০-১৫ জন আমার সঙ্গে নিজ আগ্রহে যুক্ত হন। ১ জুন থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মপ্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করি। ৪ জুন থেকে আমরা ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার বানানোর কাজে নেমে পড়ি।’

উদ্যোক্তারা জানান, ১০০ শয্যার মধ্যে ৬৫ শয্যা প্রস্তুত হয়েছে। বাকি ৩৫টি শয্যা আগামী সপ্তাহে এসে পৌঁছবে। আইসোলেশন সেন্টারে অক্সিজেন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, পালস অক্সিমিটার, নেবুলাইজার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে। ১২ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক করোনায় আক্রান্তদের সেবা দেবেন। রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে পরিবহন করা হবে। আইসোলেশন সেন্টারে তাদের পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হবে।

আইসোলেশন সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আইসোলেশন সেন্টারে করোনায় আক্রান্ত মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামীকাল (রোববার) থেকেই রোগী ভর্তি করা হবে। চট্টগ্রাম শহরে এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য হাহাকার চলছে। এই মুহূর্তে আইসিইউ শয্যার চেয়েও বেশি প্রয়োজন এইডিইউ সেবা। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রার অক্সিজেন প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। ভেন্টিলেটর নয়, হাইফ্লো নজল ক্যানুলা ও নন বিব্রেদার অক্সিজেন মাস্কের প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেই তীব্র উপসর্গে ভুগতে থাকা রোগীদের জীবন বাঁচানো সহজতর হবে।’

আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোগের সঙ্গে আরও আছেন নাজিমুদ্দিন মাহমুদ শিমুল, নুরুল আজিম রণি, আইনজীবী জিনাত সোহানা চৌধুরী, ও টি আর খান, জাওয়াদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, ইকরাম উল্লা, তৌহিদুল ইসলাম, জাফর আল তানিয়া, নুরুজ্জামান, গোলাম সামদানি জনি, সাবিনা আক্তার, সুমন চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম এবং সাদ শাহরিয়ার।

ইতোমধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিনসহ রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার বিশিষ্টজনেরা আইসোলেশন সেন্টার পরিদর্শন করে উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন।