শ্যামল রুদ্র ,খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার এক নম্বর রামগড় ইউনিয়নের খাগড়াবিল বাজারের পাশে লালছড়ি সংযোগ সড়কে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে গ্রামীণ রাস্তা পনের মিটার দৈর্ঘ্য সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতু নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নকশা বর্হিভূত নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারসহ নির্ধারিত দুইমাসে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও দীর্ঘ নয় মাসেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক গ্রামের কৃষক, ফলবাগান মালিক-মৌসুমী ফলব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। এ প্রসঙ্গে রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কারবারী বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনে নানা অনিয়ম আমার নজরে এসেছে। ওই এলাকার লোকজন ভীষণ কষ্টে আছেন। পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা)কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সকল ধরনের অনিয়মের উর্দ্ধে ওঠে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে। তাকে বলেছি,দেখভালে যেন কোন ধরনের ক্রুটি-বিচ্যুতি না হয়।

স্থানীয় মেম্বার (ইউপি সদস্য) মো. আবদুল হান্নান জানান, গ্রামবাসীর সুবিধার্থে খালে বাঁধ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হলেও তা টেকসই ছিল না। সেতু নির্মাণ প্রলম্বিত হওয়ায় পাহাড়ী ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু পুনরায় মেরামত না করায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। ফলে চরম দুর্বিসহ অবস্থায় রয়েছেন স্থানীয় জনগণ। বৃষ্টিতে জল-কাদা খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে এখন পুরো নিমার্ণ স্থল। পা’য়ে হেটে চলাচলও মুশকিল।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খাগড়াছড়ির রানজনী এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর বিকেন দেওয়ানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর সেল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পিআইও মো. মনসুর আলী এই প্রতিনিধিকে বলেন, ঠিকাদারের সেল ফোন বন্ধ, প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সাব-ঠিকাদার ইলিয়াছ মুন্সীকে বলেছি জনদুর্ভোগ লাঘবে স¦চ্ছতার মাধ্যমে দ্রুত কাজ শেষ করতে। ঠিকাদার ইলিয়াছ মুন্সি সাংবাদিকদের জানান, করোনার কারণে সঠিক সময়ে নির্মাণ শ্রমিক না পাওয়ার বিলম্বিত হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মনসুর আলী আরও বলেন, সরেজমিন নিমার্ণ স্থলে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাজের তাগদা দিয়েছি। অনিয়মের ব্যাপারে ছাড় দেয়া হবেনা। ঠিকাদারকে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা অধিদপ্তরের অর্থায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে গত অর্থবছরের প্রতিটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রামগড় ইউনিয়নে ৩টি সেতু নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহবান করা হয় ।এরমধ্যে খাগড়াবিল-লালছড়ি একটি। লটারির মাধ্যমে খাগড়াছড়ির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানজনী এন্টারপ্রাইজ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পান। ওই সময় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সেতু নির্মাণে বিলম্বসহ নকশা বর্হিভূত কাজ করা ,পুরোনো সেতু অক্ষত রেখে এর ওপরই নতুন ভাবে নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া, নিম্নমানের রড, বালু, পাথরের ব্যবহার সহ বিকল্প সেতু (সাময়িক চলাচলের জন্য) নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠে।

ইউপি মেম্বার আবদুর জলিল ও খাগড়াবিল বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, শুরুতেই ঠিকাদারের লোকজন নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২ মাস পর নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর কাজ শুরু করেন। ওই সময় বাধা দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার কয়েকদিন পরপর মর্জিমত নির্মাণ কাজ শুরু করে আবার উধাও হয়ে যান। তাঁরা জানান, গুরত্বপূর্ণ ও কৃষি নির্ভর এলাকা হওয়াতে বিষয়টি বিশেষগুরুত্ব দিয়ে বিকল্প সেতু করা হলেও তা সঠিক হয়নি। ঠিকসময়ে সেতু নির্মিত হলে গ্রামবাসীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতোনা। এখন স্থানীয়রা বিক্ষোদ্ধ হয়ে ওঠেছেন। এব্যাপারে তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।

রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী আরও বলেন,সরেজমিন খোঁজ নিয়ে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছি। উপজেলার গুরত্বপূর্ণ এই সেতু নিমার্ণে কোনধরনের অনিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।