এড. ফারহানা কবির চৌধুরী

সব মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু তবুও  কি কোন মৃত্যু থামানো যায়!!আমরা অকল্পনীয়ভাবে খুব আপন জনকে হারিয়ে ফেলি।করার কিছুই থাকে না, নিষ্ঠুর প্রকৃতির নিয়ম।
সে সময়ে ইচ্ছে করে  পৃথিবী র সব কিছু ধ্বংস করে দেই।ঐ মূহুর্তে নিজের বেঁচে থাকা টা খুব অর্থহীন মনে হয়।
আপনজনের বিচ্ছেদ কতটা যন্ত্রণাদায়ক সেটা যার যায় সেই বুঝে।
কক্সবাজাররে গতকাল  কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সবার পরিচিত  প্রিয় মুখ ডালিম ভাই মারা গেলেন।আল্লাহ পাক ডালিম ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।   তিনি সুচিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। এর আগে ও আাইসিও র অভাবে এখানে কয়েকজনের মৃত্যু ঘটেছে।
কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্হান। পর্যটন  নগরী, সীমান্তবর্তী স্হান, বাংলাদেশের একমাত্র  পাহাড়ি দ্বীপ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলা ভূমি এ অঞ্চল।
কিন্তু এ অঞ্চল  অনেক দিক দিয়ে নিগৃহীত।
এর কারন এ অঞ্চলের মানুষের কাপুরুষতা, সম্মোহনী সম্পন্ন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাব। এখনকার মানুষ  এত ভীতু নিজের  মৌলিক অধিকারনিয়ে কিছু বলে না। এখানে কোন  ঘটনা হলো দুদিন আবেগ থাকবে, আবেগে ফেইসবুক ভরে যাবে। চারপাশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠবে।তারপর দিন যাবে, প্রতিবাদ বা আবেগ আস্তে আস্তে হালকা হবে। এভাবে এক বছর হবে। তারপর দেখা যাবে আস্তে আস্তে বিষয় টা সবাই ভুলে গেছে।
আমাদের সড়কের বেহাল দশা। এটা নিয়ে কিছুদিন আমার মতো পাগল রা খুব লিখলো, মানে পারলে ফেইসবুকে নতুন রাস্তা নিজেরাই নির্মান  করে ফেলবে। কিন্তু  হলো কি, রাস্তা যা ছিলো তা ই আছে।বারবারই আমরা হেরে যায় জিতে যায়  আমাদের  কাপুরুষতা।
২০১৬ সালের ২১ মে  আমার মায়ের, ব্রেইন হেমারেজ হয়।  খুব সম্ভবত গভীর রাতে হয় কিন্তু খুব ভোরে আমরা বিষয় টি জানতে পারি। এরপর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়, ভেবেছিলাম হয়তো আইসিও পাব কিন্তু ওখানে নিয়ে কোন সুবিধা করতে না পেরে চলে গেলাম জেনারেল হাসপাতালে, সেখানে ও কোন  আই সিও নেই।

ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর রাত সাড়ে সাতটায় বললো, ওনাকে চিটাগাং নিয়ে যান।এ মূহুর্তে ওনার আইসিও খুব দরকার। রাত ১ টা বাজে চিটাগাং মেট্রোপলিটন হসপিটালে পৌছালাম, নেয়ার সাথে সাথে আমার মা কে দিয়ে দিলো লাইফ সার্পোটে। তার ছয়দিন পর আমার মা মারা যায়।মায়ের মৃত্যু র পর বেইন হেমারেজ নিয়ে জানতে আগ্রহ  হলো,বিভিন্ন তথ্য  পড়ে যেটা জানলাম, ব্রেইন হেমারেজের রোগী কে স্থানান্তর বা খুব বেশি নাড়াচাড়া  করলে খুব দ্রুত রোগীর রক্ত ক্ষরণ    বেড়ে যায়।
সাথে রোগীর কষ্ট ও। আমার মা কে যদি কক্সবাজার হাসপাতালে  হেমারেজের প্রথম পর্যায়ে আইসিও তে রাখা যেতো, হয়তো আমার মা বাঁচতো বা জীবনের অন্তিম মূহূর্তে চিকিৎসা নিয়ে এত কষ্ট ভোগ করতে হতো না। তখন শুনেছিলাম, মা  যখন চিটাগাং আইসিও তে কক্সবাজাররে আইসিও শাখার উদ্ধোধন হচ্ছে।
চার বছর পরের কথা,  কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় কক্সবাজার হাসপাতালের আইসিও তে ভর্তি ছিলেন।  আমি প্রায় দেখতে যেতাম।  সেখানে আইসিও বলতে যা  বুঝায়,   শুধু  অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন দেয়া ছাড়া আর কিছু নেই।
আর লাইফ সার্পোটের যে সীট টা আছে তার যাবতীয় সামগ্রী অনেকটা গুটিয়ে  রাখা হয়ছে।
কেন জেনে যেটা জানলাম, তা হলো টেকনিশিয়ান নেই।
আমাদের কক্সবাজারে, অনেক বড় ব্যবসায়ী, নেতা আছেন, তাছাড়া আমাদের  পাঁচ জন এমপি,একজন মেয়র, একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, একজন কউক চেয়ারম্যান।তারা বা তাদের পরিবারের কোন সদস্য যদি কোন কারনে আমার মায়ের মতো অবস্থা র সম্মুখীন হন,তাহলে কি করবেন।    এয়ার  এম্বুলেন্সে ঢাকা বা সিংগাপুর নিবেন, কিন্তু তার আগে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে আইসিও লাগবে।আমাদের জন্য না হলেও নিজের বা পরিবারের স্বাস্থ্য বা  অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে  সদর হাসপাতালে উন্নত দেশের আদলে আইসিও শাখা তৈরী করুন।
বর্তমান উখিয়া ফিল্ড  হসপিটাল যেখানে আইসিও ব্যবস্হা আছে  মুলত রোহিংগাদের  জন্য নির্মিত, যার সুবিধা কক্সবাজার বাসী কিছু পাচ্ছে।  না হয় তাও পেতো না।
রোহিঙ্গাদের  সার্বিক খোঁজ খবর নিতে  আমাদের কক্সবাজারে প্রায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত ব্যক্তির আগমন ঘটে।  তার জন্য আন্তর্জাতিক মানের হোটেল – মোটেল সব রয়েছে।
তাদের কেউ যদি হটাৎ অসুস্থ হয়ে আইসিও র দরকার হয়, আর আইসিও র অভাবে যদি কোন বিখ্যাত ব্যক্তির কক্সবাজারে মৃত্যু হয় তখন আপনারা কি করবেন।
আমাদের কক্সবাজাররে বর্তমানে হাজার হাজার কোটি টাকার  উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এ সময়ে সদর হাসপাতালে র জন্য যদি বিশটা বা এিশটা র মতো আইসিও সীট নির্মানের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আমি নিশ্চিত বলতে পারি,সেটা গৃহীত হবে।তাছাড়া এখানে যে আন্তর্জাতিক এনজিও রয়েছে  তারা ও বড় অংকের ডোনেশন দিতে বাধ্য। কারন তারা হাজার কোটি  টাকার ব্যবসা করছে কক্সবাজারে।
আমরা নিজেদের টাকায়  পদ্মা সেতুর মতো বড় সেতু নির্মান করতে যাচ্ছি। এর প্রধান কারণ আমদের মাননীয়  প্রধানমন্ত্রী  খুব সাহসী আর ভীষন আশাবাদী একজন  মানুষ।
আমাদের  কক্সবাজারের জনগন হলো ভীষন কাপুরুষ। কোন অধিকার  আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না। এই যে ডালিম ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে খুব হৈচৈ  করছে ফেইসবুকে। কিন্তু  এটা এক সপ্তাহের মধ্যে থেমে যাবে। আবার হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত  কোন মৃত্যু ঘটবে  আইসিও র অভাবে , আপনারা তখন আবার হৈচৈ করবেন, তারপর আবারও থেমে যাবে।
আমরা এভাবেই হেরে যেতে থাকবো, আর জিততে থাকবে  আমাদের কাপুরুষতা।

লেখক: আইনজীবি, কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ।