মাহদী হাসান রিয়াদ

পুরো পৃথিবীই আজ অসুস্থ। চারদিক লকডাউন। পাড়ার দোকানটাও খুলছে না৷ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে, বন্ধুদের সাথে যে একটু আড্ডা দেব, সেসুযোগটাও নেই। করোনার ভয়াল থাবায় পুরো বিশ্বে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ছিন্নমূল মানুষগুলো ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণায় ধুঁকে-ধুঁকে মরছে। অর্ধাহারে হলেও তারা বাঁচতে চায়। একটু শান্তিতে বাঁচতে চায় অল্প কিছুদিন।

বাঁচার উপায় খুঁজতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষই আজ হিমশিম খাচ্ছে। কারণ, বন্ধ হয়েছে আয়ের উৎস। দুমুঠো আহার জোগাড় করার জন্য তাদের হাতে নেই কোনো অর্থকড়ি। পকেট ফাঁকা। তাই বলে তো আর পেটের চাহিদা বন্ধ হয়নি। ক্ষুধার যন্ত্রণা বারংবার ব্যথিত করছে ওই ক্ষুধার্ত অনাহারীকে। যেভাবেই হোক, ক্ষুধা নিবারণ করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে করবে? আছে কী উপায়? কিংবা কোনো মাধ্যম?

সময় থমকে না যাওয়ার ফলে, রমজান শেষে খুশির বার্তা নিয়ে ঠিকই ঈদ এসেছে। তবে, আমরা কী পেরেছি এই খুশির বার্তাকে স্বাদরে গ্রহণ করতে? কিংবা হেসেখেলে ঈদকে বিদায় জানাতে? হয়তো এক জবাবে, ঐকতানে সকলেই বলতে বাধ্য হবো যে—’ না, আমরা কোনোটাই পারিনি। বরঞ্চ ব্যর্থ হয়েছি।’ কারণ, যার ভেতর ক্ষুধার যন্ত্রনা নেই, তার ভেতর আছে করোনার আতঙ্ক। তাই ঈদ আমাদের কাছে স্বাভাবিক দিনের মতোই একটি দিন। বরং তারচেয়েও বিষাদময়।

রাস্তার পাগলটাও ক্ষুধার্ত হলে চটপট করে। এ-দোকান থেকে ও-দোকানে যায়। স্টেশনের প্রতিটি দোকানেই সে আহার তালাশ করতে থাকে। মরণপণ আহারের সন্ধানে সে চেষ্টা চালিয়ে যায়৷ একটুও পিছু হটে না। তা-ও খুব অসহায় হয়ে। অসহায়ের বেশে। অন্তত ওই সময়টাতে হলেও তার পাগলামি কিছুটা কমে৷ কমাতে সে বাধ্য হয়৷ পাগলটাও জানে— এক পৃথিবী পরিমাণ ক্ষুধা নিয়ে পাগলামি করাটা অনুচিত। তদ্রূপ আমরাও জানি— এক পেট ক্ষুধা আর একবুক আতঙ্ক নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠাটাও অনেকটা অনুচিত। এবং বোকামিও বটে। এই অনুচিত কাজ করার জন্য, অন্তত আমাদের মন কখনোই রাজি হয় না।

মনোবল আর গায়ের জোর হচ্ছে মানুষের অন্যতম শক্তি। এই দুই শক্তিকে একত্রিত করে, মানুষ বিশ্ব জয় করে। অসাধ্যকে সাধন করে। দুই শক্তি ছাড়া মানুষ অচল। অনেকটা ইঞ্জিন বিহীন গাড়ির মতোই৷

মনে রাখতে হবে মশাই; গায়ের জোর আর মনোবল না থাকলে, যতো খুশিই আপনার সামনে আসুক না কেনো, তবুও বিষাদময় লাগবে৷ তিত করলা আর নিমপাতার মতোই তিক্ত হয়ে ধরা দিবে। তাই আমাদের কাছে ঈদ আসলেও, আনন্দটা ঠিক আসেনি। এসেছে নিষ্ঠুর এক জঘন্যতম বাস্তবতা।

পৃথিবী সুস্থ হোক। অসুস্থরাও সুস্থ হয়ে উঠুক। আমরাও সুস্থ থাকি। বেঁচে থাকলে আরো হাজারটা ঈদ আসবে। আসবে হাজারো খুশির দিন৷ অতীতের মতো আগামীতেও উপলক্ষ্য সমূহকে উপভোগ করবো স্বাচ্ছন্দ্যে, নিশ্চিন্তে। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই। হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে সচেতনতা অবলম্বন করাটাই হচ্ছে বেঁচে থাকার প্রধানতম মাধ্যম।
নিজে সচেতন হোন৷ অপরকেও সচেতন করুন।