এম. মোস্তাক আহমদ

পবিত্র ঈদ উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে জানাই আন্তরিক সালাম, অভিবাদন, শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।বিশ্ব জাহানের মালিক মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর জন‍্য কায়মনোবাক‍্যে কামনা করি সর্বাঙ্গীন সুখ- শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং কামনা করি বিশ্বব‍্যাপী “করোনাভাইরাসের ” মত মহামারী ও আসন্ন নিচ্ছিত “বিশ্বমন্দা” থেকে মহামুক্তি। বিশ্বব‍্যাপী সংক্রমিত মহামারী ও আসন্ন নিশ্চিত বিশ্বমন্দা কাটিয়ে উঠে শান্তি-শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক ভারসাম‍্যপূর্ণ নিরাপদ বিশ্ব পরিচালনার সুবিধার্থে সম্মানিত দেশ ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ব অর্থনীতি বিশারদগণকে বর্তমান সূদ ভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে সূদমুক্ত মানব ক‍ল‍্যানমুখী হালাল অর্থনীতি প্রবর্তনের প্রস্তাব পেশ করছি।

যেহেতু বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্ পাক হযরত মুসা (আ:), হযরত ঈসা (আ:)ও সর্বশেষ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(স:) এর মাধ‍্যমে বিশ্বমানবগোষ্টির কল‍্যাণে শান্তি-শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক ভারসাম‍্যপূর্ণ নিরাপদ বিশ্ব পরিচালনার লক্ষ‍্যে রমজানুল মোবারকের রহমত, মাগফেরাত ও মুক্তির বিশ্ব প্রশিক্ষন কর্মশালার স্হায়ী বিধান করে ভারসাম‍্যপ‍ূর্ণ যে সূদমুক্ত অর্থনীতি বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেছেন, বিশ্বের সকল জাতি. ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবমণ্ডলীর জন‍্য তা-ই একমাত্র কল‍্যাণকর অর্থনীতি হিসাবে গ্রহণযোগ‍্য হতে পারে। বিশ্বব‍্যাপী কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই ক্রান্তিলগ্নে আমি বিশ্বের সম্মানিত রাষ্ট্র প্রধান, রাষ্ট্র ও বিশ্বের অর্থনীতিবিশারদ, বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্হা সমুহ এবং বিশেষ করে ” জাতি সংঘের অধীন জি- 20 সম্মেলন ” ও “ওআইসির অধীন ডি-এইট সম্মেলনের সম্মানিত সদস‍্যগণের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক মহান আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী সূদভিত্তিক অর্থনীতির প্রকৃতি ও কুফল এবং সূদমুক্ত অর্থনীতির সুফল ও বৈশিষ্ট‍্যসমূহ বিশ্ববাসীর কল‍্যাণে বিনয়ের সাথে উপস্হাপন করছি।

বিশ্বের মালিক মহান আল্লাহ্ পাক তাঁর শ্রেষ্ঠ গ্রন্হ আল কোরআনে ব‍্যবসাকে হালাল (বৈধ) এবং সূদকে হারাম (অবৈধ) ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ পাক দ‍‍্ব‍্যর্থহীনভাবে এরশাদ করেছেন-“আল্লাহ সূদকে ধ্বংস করেন এবং ছাদাকাহ্কে বৃদ্ধি করেন।”

মূলত: বিশ্বমন্দা সূদের প্রকৃতি থেকেই নি:সরিত। সূদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট‍্যই হচ্ছে গরীব, মিসকিন, অন্ধ, এতিম ও অসহায় থেকে তার বিত্ত কৌশলে ছিনিয়ে নিয়ে ধনীর ভান্ডারে জমা করা, যা সম্পূর্ণ মানবাধিকার ক্ষুন্নকারী ও জুলুম।

সূদ অর্থনীতির মেরুদন্ড নয়-বরং মেরুদন্ডে সৃষ্ট একটি দুষ্ট ক্ষত – যা অহরহ তাকে খেয়ে যাচ্ছে।

কোন জাতির জন‍্য সূদ কল‍্যাণকর নয়। এটি গুটি কয়েক প্রভাবশালী লোকের স্বার্থে সমগ্র সম্পদ কুক্ষিগত করে গোটা মানবগোষ্ঠীর মধ‍্যে অভাব সৃষ্টি করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্হিতিশীল করে তোলার একটি প্রয়াস মাত্র, যা মানবতার জন‍্য ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনে।

সূদখোর ব‍্যক্তি, মহাজন ,সংস্হা বা প্রতিষ্ঠান সমূহ ব‍্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়ার পরিবর্তে রূঢ় আচরণের মাধ‍্যমে বিপদের সুযোগে অবৈধ মুনাফা লাভের চেষ্টায় মত্ত থাকে। ভাল-মন্দ পরিচয় ভুলে ‍যায়। সূদের অশুভ পরিনাম সম্পর্কে থাকে উদাসীন।

সূদ নৈতিকতা বর্জিত গুণাবলী যেমন- ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চুরি,ডাকাতি-লুটতরাজ,মিথ‍্যা ও প্রতারনা সহ মানবাধিকার লঙ্ঘন-মুলক কর্মকান্ডে উৎসাহিত করে বিশ্বকে মানুষের বাস অনুপযোগী করে তোলে।

যে ব‍্যক্তি,পরিবার,সমাজ বা রাষ্ট্র সূদের সঙ্গে জড়িত থাকে তার ধ্বংস অনিবার্য। যেহেতু সূদখোর/সূদভিত্তিক অর্থনীতি যখন অবক্ষয়ে পড়ে তখন মাথা তুলে দাঁড়াবার আর সুযোগ থাকে না ।ভারসাম‍্যহীন ও অস্হিতিশীল অবস্হায় তার পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ইহার ব‍্যতিক্রম নয়।

ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের মালিক মহান আল্লাহ পাক বিশ্বাসীদের সম্বোধন করে বলেছেন–” হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাকে ভয় কর এবং সূদের বকেয়া অংশটুকু ছেড়ে দাও। যদি তা করতে তোমরা ব‍্যর্থ হও তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (স:)বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যাও।” আসলে বিশ্ব মানবমন্ডলী আল্লাহর বিরুদ্ধে মোকাবেলায় কখনো সক্ষম ও সফল হবেনা। যার ফলশ্রুতিই হচ্ছে বিশ্বব‍্যাপী সংক্রমিত বর্তমান ভয়াবহ মহামরী সহ আরো বহুবিধ দুর্যোগ ও আসন্ন নিশ্চিত বিশ্বমন্দা। সূদের জগদ্বল পাথর বুকে ধারন করে বিশ্ববাসী আজ প্রতারিত। বড়ই ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়ে জিম্মি দশায় অপ্রতিরোধ‍্য মহামারী ও নিশ্চিত বিশ্বমন্দার কবলে নিপতিত।

আজ বিশ্বব‍্যাপী এ কথা স্বীক‍ৃত সত‍্য যে, ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলে আইন ও নিধান কার্যকর একমাত্র আল্লাহর ই। সুতরাং আসুন! বিশ্বব‍্যাপী সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন সেই মহান সত্বার প্রনীত আইন ও বিধানের নিকট আমরা আত্মসমর্পন করি। তিনি বিশ্ববাসীর জন‍্য তাঁর আসমানের দুয়ার অর্থাৎ রহমতের দুয়ার খুলে দিবেন এবং কোভিড-19 এর কবলে নিপতিত বিশ্ববাসীকে তিনি নাজাত দিবেন ইনশা’ল্লাহ্। এ কথা

তিনি তাঁর বিশ্বগ্রন্হ আল- কোরআনে ওয়াদা করেছেন-নিশ্চয় আল্লাহ্ ওয়াদা খেলাপ করেন না।।

প্রনিধানযোগ‍্য যে, সূদের মত ঘূষও মানবতার গায়ে একটি দুষ্ট ক্ষত। বিশ্বের শ্রেষ্ট মহা মানব. শ্রেষ্ট শাসক ও শ্রেষ্ট রাসুল হযরত মুহাম্মদ (স:) এরশাদ করেছেন- “ঘুষ দাতা এবং গ্রহিতা দুজনই জাহান্নামী।” বস্তুত : ঘূষের কারণে আইনের প্রয়োগ শিথিল হয়ে যায় এবং সরকারের অর্জন ম্লান হয়ে যায়।

বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দ রমজানুল মোবারককে সম্মান করেন এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর জন‍্য শুভেচ্ছা বানী প্রেরণ করেন। রমজানুল মোবারকে আসমানী গ্রন্হ তাওরাত, ইঞ্জিল ও আল্ কোরআন অবতীর্ণ করা হয় বিশ্ব মানবগোষ্টির কল‍‍্যাণে -ই । রমজানুল মোবারক মানুষকে সংযম-ধৈর্য,ত‍্যাগ,আনুগত‍্য ও শাসন- শৃঙ্খলা যেমন শিক্ষা দেয় তেমনি তার বুকে নিহিত রয়েছে মানব সমাজের জন‍্য চিরস্হায়ী ও সর্বোচ্ছ কল‍্যাণকর সূদমুক্ত অর্থনৈতিক বিধান। যা বিশ্বকে সম্পুর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, বিনা রক্তপাতে সন্ত্রাসমুক্ত যেমন রাখতে পারে, তেমনি বর্তমান মহা দুর্যোগ ও বিশ্বমন্দা কাটিয়ে ভারসাম‍্যপূর্ণ অর্থনীতি প্রবর্তনের মাধ‍্যমে নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার গ‍্যারান্টিও প্রদান করে।

সূদমুক্ত অর্থনীতির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট‍্যই হচ্ছে ইনসাফ, সুষম বণ্টন,মানবতার প্রতি দরদ ও ভালবাসা সৃষ্টি এবং ত‍্যাগের মহান নীতিতে উদ্বুদ্ধ করে ধনীর সম্পদ থেকে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক কর্তৃক নির্ধরিত হার ও পন্হায় দরিদ্র, এতিম,মুসাফির ও অসহায়

মানুষের অধিকার আদায়/প্রদান করে ব‍্যক্তি, পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমৃদ্ধি অর্জনসহ মানুষের জাগতিক ও পারলৌকিক জীবনে শান্তি সম্ম‍ৃদ্ধি ও কল‍্যান আনয়ন করে -যা মানবাধিকারের একমাত্র গ‍্যারান্টি ও রক্ষাকবচ।

সূদমুক্ত অর্থনীতির এই প‍্যাকেজটিই বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের সরকারগুলোকে তাঁদের ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করে তাঁদের কাঙ্খিত “আদেশ- নিষেধের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন ” নিশ্চিত ‘ করতে পারে এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও

অর্থনীতিবিশারদ্গণকে সূদের কারণে সৃষ্ট উদাসীনতা কাটিয়ে বিশ্বব‍্যাপী এক অভাবহীন শান্তি সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথে উত্তরণের দুয়ার উম্মুক্ত করে দিতে পারে, যা অকল্পনীয়। এটা পারে বিচারহীনতায় স‍ৃষ্ট অরাজক পৃথিবীর অরাজকতার অবসান ঘটাতে এবং ভয়াল ও অপ্রতিরোধ‍্য মহামারীর প্রতিরোধ করতে ‘ আর পারে- ভারসাম‍্যহীন বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা কাটিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল করে মানবগোষ্ঠির প্রভূত কল‍্যাণ সাধন সহ মানবাধিকার সংরক্ষণ ও নিচ্ছিত করতে।

বিশ্বব‍্যাপী মানবতাকে সূদ ও ঘুষের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দান এবং দেশে দেশে ও জাতিতে জতিতে বিচারহীনতার অক্টোপাশ থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দান এবং সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার লক্ষ‍্যে ” সূদমুক্ত অর্থনীতি প্রবর্তনের ” মহৎ প্রক্রিয়া সম্পাদনে সম্মানিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও অর্থনীতি বিশারদগণ, বিশেষ করে ” জাতিসংঘ এবং ও আই সি ” এর সদস‍্যভূক্ত রাষ্ট্র প্রধানগণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঐক‍্যবদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম‍্যপূর্ণ,সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধও নিরাপদ বিশ্ব গড়ার সুযোগ সৃষ্টির যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ্পাক বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সহ বিশ্ববাসীকে এই সাহসীকতাপূর্ণ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করার তৌফিক দিন । আমিন ।

লেখক: এম. মোস্তাক আহমদ ,গবেষক,আল কোরআন রিচার্স সেন্টার, বাংলাদেশ।