মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক

একটি বছর পেরিয়ে ফিরে এলো বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় প্রধান উৎসব ‘ঈদুল ফিতর’। রমজানের পর ঈদ আসে মুসলমানের মাঝে আনন্দ ও উৎসবের বার্তা নিয়ে। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদ যেন অন্য রকম অনুভূতির সাথে খুশির জোয়ার নিয়ে আসে। প্রতিবছর এ উৎসবে শহরের কর্মজীবী কোটি মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে বাসে, ট্রেনে এবং লঞ্চে। মহাসড়কে গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে থাকে। ঈদযাত্রার হাজারও পরিশ্রম আর অসহ্য ক্লান্তির পরও মানুষের মনে এক নির্মল শান্তি বিরাজ করে। দীর্ঘ বিরতির পর পরিবার-পরিজনদের সাথে সময় কাটাতে মুখিয়ে থাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু প্রতি বছরের মতো নয়, এবারের ঈদ উৎসবের স্রোতের প্রবাহ একটু মন্থর। বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন। যা থেকে বাদ যায়নি আমারদেশ বাংলাদেশও।
ঈদের গল্পটা সবার কাছেই ভিন্ন কারণ আমাদের নিকট ঈদ তখনি আসল যখন করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিশ্বে তিন লাখের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। বাংলাদেশেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, সবার মনে বাসা বেঁধেছে সংক্রমণের শঙ্কা। করোনার আতঙ্কও বিরাজমান, তাই এবারের ঈদ উৎযাপনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সবার। আগে জীবন বাঁচাতে হবে। উৎসব এক দিনের হলেও এই দিনকে ঘিরে থাকে অনেক দিনের প্রস্তুতি। যাতে উৎসবমুখরিত দিনটাকে ভালোভাবে উৎযাপন করা যায়। গত বছরের ঈদ যেখানে সম্পূর্ণ আনন্দের সাথে পালন করেছিলাম সেখানে ভাবতেও পারিনি এবারের ঈদটা এমন সাধারণ ভাবেই কাটাতে হবে। অথচ ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে গোসল করা, সেমাই-ফিরনিতে মিষ্টিমুখ করা, নতুন পাঞ্জাবি-পাজামা পরে ঈদের নামাজ আদায়, নামাজ শেষে কোলাকুলি, খাবারের তালিকা করা, পরিবার, বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনাসহ আরো কতো কি। পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেয়া- এসবে যে কত শান্তি সুখ আর আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না! এই অনাবিল শান্তির জন্যই ঈদের আগে মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু সেই চিরাচরিত নিয়ম এ বছর ভাঙতে চলেছে! বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আজ অবরুদ্ধ পুরো পৃথিবী। এমনই একটি বন্দিদশা চলছে বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। চারিদিকে হাহাকার, এমন অসুস্থ পৃথিবীতে বহু আকাঙ্ক্ষিত ঈদ পালন করতে হবে কখনো ভাবতেও পারিনি।
প্রতিবছরের ঈদ উৎসবের সঙ্গে এ বছরের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা! সব মানুষের পরিকল্পনা আজ বন্দি। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে পৃথিবী অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে চলেছে। করোনা ভাইরাস নামের অদৃশ্য এ শত্রু এসে পৃথিবীকে নীরব-নিথর করে দিয়েছে। প্রতিবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি এই ঈদের জন্য। অপ্রত্যাশিত ঈদের খুশি, আমেজ, আনন্দ সবকিছুকে একটি ক্ষুদ্র ভাইরাস এসে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকেও মাটি করে দিতে চলেছে! কিন্তু এবার তো বিসমিল্লায় গলদ! হয়নি কোনো শপিং, হয়নি কারো সাথে ইফতার ভাগ করা। কোভিড-১৯ এর জন্য সবাই ঘরবন্দী তাই ঈদটাকেও ঘরবন্দী করে রাখার চিন্তাই করেছি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব কারো সাথে এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হবে না! আসলে এই মহামারী অবস্থায় ঈদটা হয়তো পূর্বের ন্যায় আনন্দ নিয়ে আসেইনি! এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যতিক্রম ঈদ যা আগে কখনও এসেছিল বলে আমরা জানিনি। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের জন্য এবারের ঈদুল ফিতর হচ্ছে একটি বাজেতম অভিজ্ঞতা।
সংকটময় মুহূর্তে ঈদ একটু ভিন্নভাবে পালন করতে হবে। এখন আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি আমাদের সকলের উচিত সতর্কতা থাকা। যদিও এবারের ঈদটা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করতে পারব না। পরিবার, প্রিয়জনদের সুরক্ষার কথা ভেবেই ঈদের অনুভূতিগুলো বাড়িতে থেকেই ভাগ করে নিব। সকলকে খেয়াল রাখতে হবে আমরা খুব দুঃসময় পার করছি। সেই সাথে এমন ভয়াবহ অবস্থায় যদি ঈদের দিন কিছু অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে পারি তাহলে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি আছে। এখন আমরা ঘরে নিরাপদ তাই অন্য বারের মতো আনন্দের সাথে ঈদ পালন করতে না পারলেও সকলের সুস্থতা কামনা করে সাধারণ ভাবেই ঈদ পালন করবো। সবাই সুস্থ থাকি, নিরাপদ থাকি এবং দেশকে ভালো রাখতে সতর্ক হয়ে করোনাকালের ঈদ উৎযাপন করি।
লেখক: প্রাবন্ধিক