সিবিএন ডেস্ক:
আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর বাংলাদেশে ছয় জনের শরীরে পুনরায় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা রিঅ্যাকটিভেশন (শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকার পর ভাইরাসটি দ্বারা পুনরায় সংক্রমিত হওয়া) অথবা রিইনফেকশন (একবার পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় আক্রান্ত হওয়া) হতে পারে। তাছাড়া ভাইরাসটি এখন নতুন অবস্থায় থাকায় এর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে সবকিছু জানা যাচ্ছে না। তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়াদের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে এতই কম যে, এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এখন পর্যন্ত দেশে মোট ছয় জনকে পাওয়া গেছে, যারা সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার পরও তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাদের আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাবধানতা মেনে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, প্রথমবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ‍সুস্থ হওয়া রোগী অর্থাৎ যার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে—তিনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবেন না। এ রকম কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি বলেও জানায় সংস্থাটি।

ডব্লিউএইচও বলছে, গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে কিছু মানুষের শরীরে খুব কম অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্তকে ‘রিইনফেকশন নাকি রিঅ্যাকটিভেশন’ বলা হবে—এ প্রশ্নের উত্তর জরুরি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও নিশ্চিত না হয়ে এ নিয়ে কথা বলবে না।’ তিনি বলেন, ‘এ ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি এখনও অজানা। এ কারণে রিইনফেকশন নাকি রিঅ্যাকটিভেশন হচ্ছে—এটা বোঝা যাচ্ছে না।’ উদাহরণ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘হেপাটাইটিস বি-তে রিঅ্যাকটিভেশন আছে, কিন্তু ‍করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এখনও সেটা বলা যাচ্ছে না এবং বলার সময়ও আসেনি।’

তবে রিইনফেকশন হলে তা জটিল বিষয় হবে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে পাওয়া পুনরায় আক্রান্ত ছয় জন রোগীকে ফলোআপে রাখতে হবে। তবে এটা ‘ভয়ংকর’ কিছু নয়। এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘শনাক্ত ১১ হাজার রোগীর মধ্যে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ছয় জন। এটি সংখ্যায় অনেক কম। তবুও তাদের সাবধানে আইসোলেশনে থাকতে হবে। তবে এ বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি, কারণ কোভিড-১৯ এর গতি-প্রকৃতি এখনও নিরূপণ করা যায়নি।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি দেশে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, তবে সংখ্যায় সেটা খুবই কম। আমাদের দেশেও শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর তুলনায় দ্বিতীয়বার শনাক্ত খুবই নগণ্য।’

ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের ভাইরাস রূপ বদলায় বলে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করাও কঠিন। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং সেটা প্রকৃতই সুরক্ষা দেয় কিনা—এটা প্রমাণিত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে কোনও সংক্রমণ থেকে নিশ্চয়তা দেবে কিনা, তার প্রমাণ পায়নি।’