বিশ্বজিত সেন:
একুশ শতকে সারা পৃথিবীতে তথ্য প্রযুক্তির অবাধ তৎপরতা অব্যাহত আছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স অনলাইন মিডিয়া চ্যানেলসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র শক্তিশালী। সরকারকে পরামর্শ, জনগণকে সেবা সহায়তা এবং সত্য প্রকাশকে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ধারণ করে। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক মিডিয়ার বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে বহু বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ অনলাইন চ্যানেলের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। প্রতিযোগিতার বাজার রাজধানীতে শুধু নয়, জেলা পর্যায়ে এর জের চলছে। সরকারের গণতান্ত্রিক চিন্তার উপর মিডিয়ার নতুন দুয়ার খুলে যায়। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে মিডিয়া এবং সরকারের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। একুশ শতকের বিজ্ঞান প্রযুক্তির সাথে মানুষের জীবন সহজেই সম্পৃক্ততা হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত জীবন থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। এসবের মধ্যে কম্পিউটার সহ বিভিন্ন ইনফরমেশন টেকনোলজি মানুষকে অনেক সামনে এগিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সারা বিশ্বের নতুন প্রজন্মের মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তি ঝড় তুলেছে। যে দেশের মানুষ এবং তরুণ সমাজ তথ্য প্রযুক্তিকে আয়ত্তে আনতে পেরেছে সেখানে উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয়ের বিপ্লব ঘটে গেছে। যার জন্য ছোটখাট দেশ থেকে যে কোন বড় দেশে তথ্য প্রযুক্তি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য বিষয়।

বিজ্ঞান প্রযুক্তির শাখায় তথ্য প্রযুক্তি তথা আইটি শিল্প এখন বিশ্বে আলোচিত। ইনফরমেশন টেকনোলজী আজ সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। শিক্ষা, বাণিজ্য, শিল্প সহ এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি। সমাজ জীবনে বা জনজীবনে তথ্যপ্রযুক্তির সম্পৃক্ততায় উন্নয়ন সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। মানুষের চিন্তার মাধ্যমে মানব সমাজ একটি গ্লোবাল ভিলেজের তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে এসে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানের সম্ভাবনাময় যুগে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিশ্বকে নতুনভাবে নাড়া দিয়েছে। অনেকটা প্রতিদিনই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী বিষয় পৃথিবীর মধ্যে চলে আসছে। বাংলাদেশ সহ প্রতিটি দেশই বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে বিশেষভাবে অবলম্বন করেছে।

একুশ শতকের চরম উৎকর্ষময় তথ্য প্রযুক্তি আজ অনেকটা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। সরকারী বেসরকারী সহ এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নেই! বর্তমান সরকারও দিনবদলের পালা হিসেবে তথ্য প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তথ্য প্রযুক্তির বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনাসহ প্রযুক্তির ব্যবহারে সুশাসন থাকা দরকার। এখানে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তথ্য মাধ্যমের উন্নতির ফলে বিশ্ব প্রকৃত পথে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে একজন সংবাদকর্মী শুধুমাত্র একটি এলাকার নয়, সে অর্থে মিডিয়া পার্সন প্রকৃতি পক্ষে গ্লোবাল ভিলেজের নাগরিক। সংবাদপত্র বা যেকোন তথ্য মাধ্যম হোক একজন সংবাদ কর্মীকে বৈশ্বিক ভূমিকা পালন করতে হয়। একটি এলাকার সংবাদ যে আন্তর্জাতিক সংবাদ হতে পারে তা বিশ্ব গণমাধ্যমকে বিচার বিবেচনা করলে বুঝা যায়। প্রতিটি মানুষের মধ্যে জানার এবং জানাবার বিষয়টি সবসময় পরীক্ষিত বিষয়। তার সাথের ঘটনাবলীও মানুষকে মিডিয়া সম্পৃক্ত হতে সাহায্য করে। সার্বিক বিবেচনায় জনগণ এবং সংবাদকর্মী দূরের নয়, কাছেরই মানুষ। এই বিবেচনায় সকল সংবাদকর্মীকে দায়িত্ববান হয়ে কাজ করতে হয়।

একজন সংবাদকর্মীর সততা বিশ্বস্ততা সবসময় প্রয়োজন। মানুষের আস্থার চাইতে বড় সম্পদ একজন সংবাদকর্মীর জন্য হতে পারে না। আর্থিক টানাপোড়ন থাকুক বা সমস্যা আসুক, সততা এবং পরিশ্রমের জোরে একজন সংবাদকর্মী যথারীতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। মাঝখানের বিষয়ে শুধু মাত্র ধৈর্য নৈতিকতা সাহসের পরীক্ষা দিতে হয়। জননির্ভর সমাজে একজন সংবাদ কর্মী সৎযোগ্য দায়িত্বশীল থাকলে শুধুমাত্র এলাকার মানুষ নয়-সবাই উপকৃত হয়। তথ্য নির্ভর মানব সমাজে সংযোগ স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক এমনকি দ্রব্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলোকে পরিচিত করার মধ্যে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। জনসাধারণে আস্থা স্থাপন সহ জনসংযোগের মধ্যেই কাজ করার অভিজ্ঞতার মধ্য থেকেই একজন সংবাদকর্মীকে সামনে যেতে হয়।

একজন সংবাদকর্মী বা তথ্যকর্মীর ভূমিকার সাথে জনআস্থার ব্যাপারটা সবসময় জড়িত। একুশ শতকের তথ্য প্রবহমানতার যুগে জনগণের রয়েছে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত্রি পর্যন্ত সবাই কোন না কোন তথ্য শোনা বা আদান প্রদান করে থাকে। স্থানীয় সমস্যা থেকে জাতীয় সমস্যা এমনকি আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহও মানুষের বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে চলে আসে। সেসবের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ এবং সংবাদকর্মীর খুউব বেশী পার্থক্য থাকে না। একজন সংবাদকর্মীকে জনগণের সাথেই বেশী কাজ করতে হয়। যার জন্য মিডিয়া বা তথ্য মাধ্যমে কাজ সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে জনগণের চাহিদা এবং মতামতকে বুঝতে হয়। এখানেই রয়ে গেছে একজন সংবাদকর্মীর প্রকৃত ভূমিকা। জনবিচ্ছিন্ন কোন সংবাদকর্মী প্রকৃত অর্থে কোনভাবেই গণমাধ্যম কর্মী হতে পারেনা।

বর্তমান যুগে একজন সংবাদকর্মী নিছক শুধু সংবাদ পরিবেশনের জন্য কাজ করেনা। তথ্য মাধ্যম বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবী এখন দ্রুত গতি সম্পন্ন তথ্যের ভান্ডার। এর সুফল নেওয়ার জন্য সংবাদকর্মীদের যথাযথ কাজ করা দরকার।

নতুন দেশ গড়তে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তথ্য প্রযুক্তির কোন বিকল্প নেই! শিক্ষা, শিল্প, চিকিৎসা, কৃষি বাণিজ্য সহ সব বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় অনেক সামনে এগিয়েছে।

তথ্য মাধ্যম যেমন পৃথিবীকে দ্রুত একটি জায়গায় নিয়ে আসে, সেরকম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খুব বড় ধরণের নির্ভরতা তথ্য মাধ্যমকে ঘিরে আবর্তিত হয়। এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার কম থাকাতে তাঁরা কিভাবে মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল হবে! এই বিষয়টাতে দুটো দিক আছে, তথ্য মাধ্যম গণ মাধ্যম বলতে শুধুমাত্র সংবাদপত্রকে বুঝায়না, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ভিডিও প্রদর্শনী সহ বিভিন্ন জনগণ সম্পৃক্ত বিষয়ও তথ্য মাধ্যমের সাথে সংযুক্ত।

বর্তমান বিশ্বে গণমাধ্যম একটি মৌলিক মাধ্যম, যেখানে জড়িয়ে আছে উন্নয়ন সম্ভাবনার বিবিধ বিষয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় গণমাধ্যমের ব্যবহার বা যোগাযোগ কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে তথ্য অধিকার এবং তথ্য পরিবেশনার বিষয়ে প্রচুর মতামত আসছে। বিশেষ করে মিডিয়া জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাওয়াতে কথাটা গুরুত্ব পেয়েছে বেশী। সারা দেশে যে পরিমাণে তথ্য মাধ্যম ছড়িয়ে আছে তা গণতন্ত্র চর্চার জন্য সুসংবাদ। গণতন্ত্রের স্তম্ভ হিসেবে মিডিয়া সব সময় স্বীকৃত। জনগণের মৌলিক অধিকারকে টিকিয়ে রাখতে নিরপেক্ষ মিডিয়া উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। যার জন্য যে কোন ঘটনার সাথে মানুষ মিডিয়া কি বলছে সেটার প্রতিও তাকিয়ে থাকে। দেশের প্রায় মানুষ কোন না কোন ভাবে গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকতা সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন চ্যানেলসমূহ মূলত জনগণ এবং রাষ্ট্রের অংশ। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারকে নির্দেশনা দেয়, পরামর্শ দেয়, দায় দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন করো তোলে। আজকের জনসমাজে সংবাদপত্র জনগোষ্ঠীর চিন্তা চেতনার কাজে একটি সস্পষ্ট ভূমিকা পালন করে। আধুনিক সমাজের যে দ্রুত উত্তরণ, এ কাজে প্রধানত সংবাদপত্র বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

আজ বিশ্বে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ যতই শিক্ষিত হচ্ছে ততই সংবাদ পঠন পাঠনে এগিয়ে আসছে। অবশ্য এর বাইরেও আরেকটি বিষয় আছে, বিশেষ করে আমাদের মতো দেশে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছরে শিক্ষিতের হার বেড়েছে। এদেশে সংবাদপত্র, মিডিয়া চ্যানেলসমূহ কি বলছে এটা জানতে শুনতে প্রায়ই সকলের আগ্রহ রয়েছে।

জনমতের উপর নির্ভর করে সরকার পরিচালনার দায় দায়িত্ব এবং সরকারের জনপ্রিয়তা। এসব বিষয়ের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সংবাদপত্র এবং মিডিয়া চ্যানেলসমূহ। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রার দেশে সংবাদপত্র জাতীয় জীবনের অপরিহার্য অংশ। সংবাদপত্র এবং জনমত এগিয়ে নিয়ে যায় গণতন্ত্রকে। আমাদের দেশে জনমত গড়তে যে সংবাদপত্র ভূমিকা পালন করে এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে যে জনমত গড়া হয় তা আগামী সম্ভাবনার দিনগুলোর জন্য সুসংবাদ।

গণমাধ্যমের ব্যবহারকে বিকশিত করার মাধ্যমে সুন্দর ধরিত্রীকে আমরা রক্ষা করবো। এ হোক আজকের একটি শক্তিশালী নাগরিক প্রত্যয়, যেখানে রক্ষা হবে এই সুন্দর পৃথিবী, এই আনন্দময় পৃথিবী।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতাই হচ্ছে জনমতের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রকে এই ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। স্বাধীন চেতনাভিত্তিক সামাজিক পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা দরকার। এ ব্যাপারে সংবাদপত্র হচ্ছে আদর্শিক বিষয়। যে কোন কিছু বিনিময়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বজায় রাখা জাতির স্বার্থে জরুরি।

লেখক : সম্পাদক-কক্সবাজার ভয়েস ডট কম,সাংবাদিক, গবেষক, পরিবেশবিদ।
ই-মেইল : bishawjitsen@gmail.com