ফারহানা কবির চৌধুরী

বিগত দু’মাস ধরে বিশ্ব করোনাকাল অতিক্রম করছে। সমগ্র বিশ্ববাসি আজ করোনা ঝড়ে লন্ডভন্ড।

সারাবিশ্বে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ সাড়ে ২৬হাজার ছাড়িয়েছে। আর আমাদের দেশে আজকে পযর্ন্ত সরকারী হিসেব মতে,মোট আক্রান্ত ১০১২ জন,মৃত ৪৬ জন।
আজকে একদিনেই শনাক্ত ২০৯ জন। কয়দিন আগেও ছিলো ৫৭ জন বা ৬০ জন। অল্প কয়দিনে বেড়ে হাজার জন পর্যন্ত গড়ালো।

তবে যদি প্রতিদিন সারাদেশে ৫০ হাজার পরীক্ষা করা হয় এ সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।

এর কারন আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি,এখনোও ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমাদের দেশের মতো মানুষদের ঘরে আবদ্ধ রাখা খু্বই দুরূহ বিষয়। এ ভাইরাস ধনী, দরিদ্র চেনে না। সবাইকে আমন্ত্রণ জানায়।
বিশ্বের সব উন্নত দেশ গুলো হিমশিম খাচ্ছে রোগী সামলাতে। তাদের দেশ গুলোতে পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টের সমস্যা রয়েছে।

আর কোভিড-১৯ পরিস্থিতি তে আমাদের দেশে কি হচ্ছে,জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণের চাল চুরি করছে,

কোভিড-১৯ এর সন্দেহে কোন রোগী হলে তার ও তার পরিবারের সাথে পাড়া প্রতিবেশী, এলাকাবাসীরা অপরাধীর মতো আচরন করছে। এক মা কে তার সন্তানেরা করোনার লক্ষন দেখা দিলে বনে ফেলে আসে। তারপর হচ্ছে কোন করোনা রোগী মারা গেলে তাকে আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালে ফেলে চলে যাচ্ছে।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়,আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মকর্ম করলেও ঈমানের দিক দিয়ে আমরা অনেক দূর্বল।
বিশ্বে সব মুসলমানদের তুলনায় আমাদের ঈমান মনে হয় নিকৃষ্ট। কারন আমরা কর্মক্ষেত্রে একদম সৎ না।  র্নীতি,ষড়যন্ত্র,গুজব সৃষ্টি করা যেন আমাদের রক্তে মিশে গেছে। কতিপয় জনগন প্রশাসন আর পুলিশ বাহিনী র সাথে চোর-পুলিশ খেলছে। গাড়ীতে ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছে।অাইনশৃংখলা বাহিনী জীবন বাজী রেখে চমৎকার কাজ করছে।

আর আমরা জনগনের রয়েছে শুধু অভিযোগ,সরকার এটা দেয় নি,এটা করেনি,ডাক্তার এটা করেনি।
সরকারের দায়িত্ব,ডাক্তারের দায়িত্ব,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব সব বুঝেন আপনারা খালি নিজের দায়িত্ব কি তা বুঝতে সমস্যা।

কিছুদিন ঘর থেকে বের না হতে বলেছে সেটাই মানছেন না।কি করলে আপনারা কথা শুনবেন।
কোভিড-১৯ ভয়ংকর মহামারি তা উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায়।ইতিমধ্যে আমাদের দেশে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি রাজপরিবারের ১৫০ জন বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করছে করোনা সাথে।

আজ আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজারে,দুইদিন পর লাখে হবে যদি আমরা এত অসচেতন থেকে যায়।

বিদেশে বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষ বেশি মারা যাচ্ছে। খুবই দুঃসংবাদ আমাদের দেশের জন্য। সামনে দিনগুলোতে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তা একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন।

ডাক্তার,নার্স,ওয়ার্ডবয়,আয়া তাদের সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

২০২০ সালের করোনা যুদ্ধে আমাদের যোদ্ধা হলো ডাক্তার শ্রেণি। বর্তমানে প্রধান সমস্যা হলো রোগিরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে,পরে পরীক্ষা করার পর দেখা যাচ্ছে করোনা রোগী। আর সাথে সাথে তাদের সেবায় নিযোজিত থাকা ডাক্তার বা নার্স তাদের ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে চলে যেতে হচ্ছে। আবার লক ডাউনের কারনে ডাক্তারদের কর্মস্হলে যেতে সমস্যা হচ্ছে।

বর্তমানে ডাক্তার আর নার্সসহ প্রায় একশ জনের মতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা যদি যোদ্ধাদের এত দ্রুত দূর্বল করে ফেলি তাহলে তারা কিভাবে যুদ্ধ করবে। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকজন কোভিড যোদ্ধা হারিয়েছি।

বিদেশে পিপিই ছাড়া ডাক্তার রা পলিথিন পড়ে কাজ করছে,ওরা কেমনে করছে,আমাদের দেশের গুলো নাকি পারেনা, এসব যারা বলছেন প্লিজ এসব বলা বন্ধ করুন।

বিদেশে যেসব ডাক্তার, নার্স পিপিই ছাড়া কাজ করেছে তারা বর্তমানে সবাই আক্রান্ত। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশই ডাক্তার করোনা আক্রান্ত। আমরা ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে আছি। বর্তমানে ঢাকা আর নারায়নগন্জ করোনার হট স্পট। আমাদের দেশে প্রায় সব জেলাতে অনেক হোটেল মোটেল রয়েছে। এসব হোটেল গুলোতে ডাক্তার,নার্স,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর থাকা খাওয়া র ব্যবস্হা করা হোক। কারন তারা পরিবারের নিরাপত্তার কারনে ঘরে যেতে পারছেনা।

আমাদের দেশে অনেক বিলিয়নার আছে।আপনারা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলের জন্য,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য পিপিই ব্যবস্হা করুন। এটা করা কোন ব্যাপার না আপনাদের জন্য। আমাদের গার্মেন্টেস শিল্পমালিকরা,আপনারা দুমাসের বেতন অন্তত দিয়ে দেন।আর বিপদে পাশে থাকবেন এমন আশ্বাস দেন। ইতিমধ্যে নারয়নগন্জের এস পি গ্রুপের মালিক সুবল চন্দ্র সাহা তার গার্মেন্টেসের তিনহাজার শ্রমিককে মার্চ আর এপ্রিলের বেতন দিয়ে মার্চের ২৬ তারিখ ৩৫ দিনের ছুটি দিয়েছেন আর সাথে আশ্বাস দিয়েছেন সবরকম বিপদে পাশে থাকবেন। এভাবে গার্মেন্টেস মালিকরা দায়িত্বশীল আচরন করলে রাস্তায় আর শ্রমিকরা নামবে না।

আমার একটা ব্যাপার মনে হয় বর্তমানে চিকিৎসা বা প্রশাসন সকল ক্ষেত্রে তিন বা চারটা ক্যাটাগরি রাখতে হবে।
যেমন- a,b,c,d। দেখা গেলো a আক্রান্ত হলে b,আবার b আক্রান্ত হলে c,আবার c হলে d এভাবে দায়িত্ব পালন করবে।কারন ইতিমধ্যে উচ্চ পদস্থ অনেকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। সব কিছুতে প্ল্যান করা এ মূহুর্তে খুব দরকার।

উন্নত দেশের সকল রাষ্ট্র প্রধানরা আশাহত,অসহায়ের মতো কথা বলছে আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের উৎসাহ, আশার বাণী শুনিয়ে আমাদের সাহস যোগাচ্ছেন।

আবারও বলছি আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ করছি।মুক্তিযুদ্ধের শএুরা ছিলো দৃশ্যমান,এ যুদ্ধের শএু অদৃশ্য।ধরে নিলাম,এবার আমাদের সাথে যুদ্ধ জার্মান বা আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশের সাথে হচ্ছে।

বাসা থেকে বের হলেই আমেরিকান বা জার্মান সৈন্য র গুলিতে মারা যাব বা তাদের মিসাইল বা ড্রোন হামলায় মারা যাব।
তাই বাসায় থাকি।যুদ্ধ সম্পূর্ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকবো।

লেখক: আইনজীবী- কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং  ঘোষক- বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার।