সাজ্জাদুল করিমঃ
খুব সম্ভবত আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক “লকডাউন” শব্দটি প্রথম উচ্চারন করেছিলেন। এরপর “লকডাউন” শব্দটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়। ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মহামারি আকারে। এখন এটিই Talk of the country.

পাড়া, মহল্লা, এলাকাভেদে এখন সবাই মেতে উঠেছে “লকডাউন” এর খেলায়। প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই। এ এক ভয়ংকর খেলা। সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনা না করেই, প্রত্যেকে যে যার ইচ্ছামত লকডাউন দিচ্ছে, বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, এলাকা। এখন প্রায় প্রতিটি পাড়া, মহল্লা অবরুদ্ধ। অতি উৎসাহী কিছু লোক ও কতিপয় অল্পবয়সী এটি করে যাচ্ছে। আবার কেউবা বাহবাও দিচ্ছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

ফলে বিড়ম্বনায় পড়ছে সাধারন মানুষ, নিরীহ জনগন। অবরুদ্ধ এলাকায় যেতে পারছেনা আইন শৃংখলা বাহিনী। ব্যাহত হচ্ছে তদারকি। মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যুৎ পরিসেবা, অ্যাম্বুলেন্স সহ চিকিৎসা সেবা হতে। এতে জরুরি কাজে ঢুকতে পারছে না ফায়ার ব্রিগেড,অগ্নি নির্বাপণ কর্মী। এমনকি জরুরী ত্রাণ সহায়তাও।

এভাবে “লকডাউন” নৈরাজ্যের সামিল। এটা অরাজকতা। বেআইনী। কেবল প্রশাসনই চিহ্নিত করবে,কোন এলাকা লকডাউন হবে কিনা। উন্মত্ত জনতা কর্তৃক এভাবে ঢালাও “লকডাউন” সমীচীন নহে।

অনেকে এলাকা “লকডাউন “করে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। ভাবছে, এবার বুঝি রক্ষা পাওয়া যাবে মহামারি করোনা হতে। ফলে এলাকায় চলছে জমজমাট আড্ডা। কোথাও বা জুয়ার আসর। অনেকে লকডাউনের খরচের নামে করে যাচ্ছে নীরব চাঁদাবাজি। ফলে লকডাউনকৃত এলাকায় বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরে থাকার জন্য। “হোম কোয়ারেন্টাইন”। আর “সোশাল ডিসটেন্স”। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত এটাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু এটা মানতে সবারই কেমন যেন অনীহা। দোকানে, বাজারে উপচেপড়া ভীড়। যেন কোন উৎসব চলছে।

অথচ সারাদেশে, এমনকি সারাবিশ্বে এখন চলছে ক্রান্তিকাল। গোটা মানবজাতি আজ গভীর সংকটে।মানুষের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখে।

মহামারি আগে ছিল গরিবদের প্যাটেন্ট করা। আর এখন তা দরিদ্র ছাপিয়ে নিশানা করেছে ধনীদেরও। এতে কুপোকাত বিশ্বের মোড়ল বলে খ্যাত আমেরিকা। ফ্র্যান্স,ইংল্যান্ড,ইতালী,স্পেন এর মত রাঘববোয়ালরাও পর্যুদস্ত।

তবে আমরা পারব। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবন দেশ বাংলাদেশ। প্রতি মুহুর্তে দুর্যোগ মহামারির সাথে লড়াই করে আমরা টিকে রয়েছি। আমাদের রয়েছে দুর্যোগ মোকাবেলার দীর্ঘ ঐতিহ্য এবং ইতিহাস। যা অন্য কারো নেই। এই মুহুর্তে এটাই আমাদের সাহস, সম্পদ।
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সবাইকে ধন্যবাদ।

সাজ্জাদুল করিম
সিনিয়র আইনজীবী
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।