*পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে-ডিসি
*বাড়ানোর দাবি কাউন্সিলরদের

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি
রাঙামাটিতে ঘরবন্দি মানুষজনে অনেকের কাছে এখনো পৌছেনি সরকারি ত্রাণ সহায়তা। রাঙামাটি শহরের পৌর এলাকার বাসিন্দাদের অর্ধেকাংশ এখনো ত্রাণ পায়নি। প্রতিদিনই ত্রাণের জন্য ছুটছে সাধারণ মানুষজন। বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও ঘরবন্দি থাকা মানুষজনের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পর্যাপ্ত নয় দাবি করে আরো ত্রাণ সহায়তার দাবি করেছে স্থানীয় পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ বিতরণে নিরপেক্ষতা ও আরো স্বচ্ছতার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক কাউন্সিলরের অদক্ষতার কারনেই ত্রাণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকছে স্থানীয়রা এমন দাবি করে জেলা প্রশাসনের এক উদ্বর্তন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য এমন পরিবারদের তালিকা দিতে বলা হলেও গত ১০ দিনেও তালিকা জমা দেয়নি পৌর কাউন্সিলররা।
পৌর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে শহরের অনেকগুলো এলাকাতে এখনো পর্যন্ত এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দা খাদ্য সহায়তা পায়নি। কাউন্সিলররা জানান, পৌর এলাকায় সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্য প্রায় ৩৩ হাজার ৭শ পরিবার রয়েছে। এপর্যন্ত রাঙামাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে গত ২৯শে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৪শ পরিবারকে।
এদিকে রাঙামাটি পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন এমন পরিবারগুলোর মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে রয়েছে ৩৫শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে ১০০৫ পরিরবারকে। ২নং ওয়ার্ডে ৫ হাজারের মধ্যে ত্রাণ পেয়েছে ৫০৫ পরিবার। ৩নং ওয়ার্ডে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ পেয়েছে ৬’শ পরিবার। ৪নং ওয়ার্ডে ২৫’শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ পেয়েছে ৯০৫ পরিবার। ৫নং ওয়ার্ডে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫০৫ পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। ৬নং ওয়ার্ডে ৩৫শ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ পেয়েছে ৬শ পরিবার। ৭নং ওয়ার্ডে ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ পেয়েছে ৮৪৫ পরিবার। ৮নং ওয়ার্ডে ৯ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে ৫০৫ পরিবারকে। ৯নং ওয়ার্ডে ১২শ পরিবারের মধ্যে ৫০৫ পরিবারকে ত্রাণ প্রদান করা হয়েছে। পৌর কাউন্সিলরগণ জানিয়েছেন, আমাদের এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলোর তুলনায় বরাদ্দ অত্যন্ত কম হয়েছে। সকলের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ পৌছে দিতে হলে বরাদ্দ আরো বাড়ানোর দাবিও করেছেন পৌর কাউন্সিলররা।
সরকারী ও বেসরকারিসহ স্থানীয় রাজনৈতিকদলগুলোর উদ্যোগে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও মূলতঃ সমন্বয়হীনতা আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিরপেক্ষতার অভাবসহ তাদের অদক্ষতার কারনেই হয়তো ত্রান বঞ্চিত হচ্ছে অনেকেই। এমনটাই মনে করছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। জনপ্রতিনিধিদের বারংবার তাগাদা দিয়েও ত্রাণ বিরতণ করানো যায়না। অনেকটা প্রেসার দিয়েই তাদেরকে দিয়ে ত্রাণ দেওয়াতে হচ্ছে।
পৌর ময়র আকবর হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার পর্যন্ত পৌর এলাকায় সর্বমোট ৬ হাজার ৪শত পরিবারের মাঝে ৬৪ মেঃ টন খাদ্যশষ্য ও নগদ অর্থসহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। আমরা এপর্যন্ত রাঙামাটি পৌরসভাকে ৬৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং প্রায় চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবং আজ (বৃহস্পতিবার) আবারো নতুন করে আরো ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে শুধুমাত্র শিশু খাদ্য(দুধ-বিস্কিট) বিতরনের জন্য। তিনি জানান, ইতিমধ্যে সিলেটি পাড়া, রাজমুনি পাড়া এমন অনেক দূরবর্তি স্থানেও ত্রাণ পৌছে দিয়েছি। এছাড়াও পৌরবাসীর জন্য আমরা ১০টাকায় প্রতিকেজি চাউল বিক্রি চালু করেছি। এতে করে ১০ হাজার ৮শ পরিবার এই সুবিধার আওতায় আসবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১২শ পরিবার মাথাপিছু সর্বোচ্চ কেজি চাউল সংগ্রহ করতে পারবে। এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে বরাদ্দ রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রয়োজনে আরো ত্রাণ দিবো। ইতিমধ্যেই যারা যারা ত্রাণ পায়নি তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুগল ওয়েবে আবেদন ফরম চালু করেছি। অনলাইনের মাধ্যমে ফরমে আবেদন করলে খোঁজ-খবর নিয়ে ত্রাণ পৌছে দিবে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।