মাহফুজুল হক
সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডস্থ আমাদের বাড়ির সদর দরজার সামনে কয়েক ফুট ব্যবধানে মাথা সমান উচ্চতার এক ইটের দেয়াল তুলছেন কয়েকজন। বাবা সে কাজ তদারকি করছেন আর কাজ দ্রুত শেষ করতে তাগাদা দিচ্ছেন। সামনের খালি জায়গায় দেখা গেলো আরো কয়েকজন লোক ইংরেজি ‘এল’ সাইজে মাটি খুড়ছেন (ট্রেন্স) হাঁটু পরিমাণ গভীরতা এবং একজন চলাচল করতে পারে সেরূপ প্রশস্ততায়। তখন শহরে বিদ্যুৎ ছিলো না। ঘরে সাধারণতঃ কেরোসিন তেল দিয়ে হ্যারিকেন ও চেরাগ জ¦ালানো হতো রাত্রে। কেরোসিন তেলও ছিলো দু’প্রকারের : লাল ও সাদা রঙের। সাদাটির দাম সামান্য বেশি। তবে তার আলোতে কালি (কার্বন) হতো কম। বাবা সবাইকে সতর্ক করছেন খুব কম সংখ্যক বাতি জ¦ালতে আর রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে। প্রদীপের আলো যাতে কোনভাবেই ঘরের বাহির থেকে দেখা না যায় সে ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করছেন তিনি। জানা গেলো, দেশে যুদ্ধ লেগেছে। উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া শত্রু পক্ষের যুদ্ধ বিমানগুলো নিচে আলো দেখলে সেখানেই বোমা ফেলে। আর যদি বোমা বর্ষণ শুরু করে তখন দ্রুত ওই খোড়া ট্রেন্সে গিয়ে শুয়ে থাকতে হবে। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার জনশূর্ণ্য। মানুষের মধ্যে চাপা আতংক। ভয়ে কেউ ঘর থেকেই পারতপক্ষে বের হন না। মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিন-খাদেম কয়েকজন মিলে নামাযটা সেরে নেন। তখনতো মাইক ছিলো না। মুয়াজ্জিন আযানখানায় উঠে জোর গলায় আযান দিতেন। রাস্তা দিয়ে কদাচিৎ সেনাসদস্যদের সশস্ত্র টহল দিতে দেখা যেতো। -হ্যাঁ, আমি আসলে পঁয়ষট্টি সালের পাক-ভারত যুদ্ধের দিনগুলোর কথাই বলছিলাম। আমি তখন ছোট। স্কুলে যাওয়া-আসা শুরুও হয়নি আমার। যুদ্ধ শেষ হওয়ার বেশ কয়েক বছর পরও সেই দেয়াল ও ট্রেন্স বহাল ছিলো।

আজ বহু কাল পরে কক্সবাজার শহরে করোনাভাইরাস নামীয় অদৃশ্য শত্রুর সাথে চলমান যুদ্ধের এই প্রেক্ষাপটে সেই যুদ্ধাবস্থার কথা খুব মনে পড়ছে। সর্বত্র চাপা আতংক, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, দোকান-পাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, গাড়ি-ঘোড়া-বিমান, পর্যটন স্পট-হোটেল-সাগর সৈকত সব বন্ধ, মসজিদগুলোতে মুসল্লি সংখ্যা নগণ্য। পুরো শহর যেন ভুতুড়ে পরিবেশ ধারণ করেছে। এশা নামায শেষ করে ঘরে ফিরে আসার পথে দেখি চারিদিকে গভীর রাত্রির আবহ। রাস্তায় সেনা সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। মসজিদগুলোতে দোয়া করা হচ্ছে। মানুষ কান্নাকাটি করছেন। পৌর কর্তৃপক্ষ পথে পথে হাত ধোয়ার জন্য সাবান-পানির ব্যবস্থা বসিয়েছেন। মাইক দিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহির হতে বারণ করা হচ্ছে। দু’জন একত্রে চলাচল করতে নিষেধ করা হচ্ছে। জনা কয়েক রাস্তায় চলাচলকারী পথিককে দেখা যায় মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢাকা, হাতে গ্লাভ্স পড়া। সবকিছু দেখে-শুনে মনে হয় দেশে যুদ্ধ চলছে তা-ও আবার অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে। কর্মমুখর ও কর্মচঞ্চল শহর রাতারাতি ভুতুড়ে রূপ নিয়েছে। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আমরা জানি যুদ্ধ দু’ধরণের : আক্রমণাত্নক (অফেন্সিভ) ও আত্নরক্ষামূলক (ডিফেন্সিভ)। চলমান যুদ্ধে আক্রান্ত পক্ষ মানুষ তথা পুরা মানবজাতি আর প্রতিপক্ষ বা আক্রমণকারী এক অদৃশ্য অদেখা ভাইরাস। তারা আকারে এতো ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। ল্যাবরেটরীতে গিয়ে অণুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। আক্রমণকারী অণু আকারের হলে কী হবে, প্রচন্ড শক্তিশালী ঘাতক। বর্তমান বিশে^র বাঘা বাঘা দেশগুলো যেমন চীন, আমেরিকা, ইতালী, স্পেন, বৃটেন, ফ্রান্স, ইরান, জাপান, কানাডা, সৌদি আরব, ভারত, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত তার মোকাবিলায় কুপোকাত হয়ে প্রাণ ভয়ে গৃহকোণে (ট্রেন্সে) আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমান যুদ্ধে কভিড-১৯ ভাইরাস প্রচন্ড আক্রমণাত্নক আর পুরো মানবজাতি আত্নরক্ষামূলক, ভীত-সন্ত্রস্ত, মৃত্যু ভয়ে নীল। কোয়ারেন্টিন নামক গর্তে ঢুকেও সুরক্ষার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না। মানবজাতি আত্নরক্ষায় ব্যস্ত। একটা শ্লোগান সর্বত্র শোনা যাচ্ছে, ‘স্টে হোম, স্টে সেইফ’। কিন্তু শত্রুকে ঘায়েল করার মতো কোন অস্ত্র, প্রতিষেধক, তাদের হাতে নেই বিধায় তারা শত্রুর মুখোমুখি হওয়া থেকে পালাতে কোয়ারেন্টিন গর্তে ঢুকে পড়ছেন। কিন্তু সেটা কাহাতক। বলা হয়ে থাকে, অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ওয়ে অব ডিফেন্স। শত্রুকে পাল্টা আঘাত করুন। দেখবেন আপনি নিরাপদ হয়ে গেছেন। আমরা অদেখা শত্রুর উদ্দেশ্যে শূর্ণ্যে গুলী ছুড়ছি। আর গুলী ছুড়তে ছুড়তে হয়রান হয়ে পড়েছি। মানুষ এখন তার পাশের জনকেও অবিশ^াস করতে শুরু করেছে। ‘সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স’ (সামাজিক দূরত্ব) নামক ‘ইয়া নফসি’র যুগে আমরা প্রবেশ করেছি। সেদিন মসজিদে দেখি এক ভদ্রলোক পাশের জন থেকে বেশ খানিকটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। খালি জায়গা পূরণ করার কথা বলতেই তিনি জানালেন যে, এখন দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হয়। কিন্তু এভাবে কি জীবন চলে ?

‘সাবধানের মার নাই’ কথাটি যেমন সত্যি পাশাপাশি মহাস্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালার দরবারে আকুতি জানানো এখন বেশি প্রয়োজন। দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার ভালো করে অজু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করে পবিত্র হয়ে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করতঃ তাঁর কাছেই এই বিপদ থেকে পরিত্রাণের জন্য কাতর মিনতি জানানো। কেননা মহান স্রষ্টাই আমাদের শিখিয়েছেন, ‘ওয়াস্তা ই-নু বিস্সাবরে ওয়াস্সলাহ্’। (তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আমার সাহায্য চাও।)। এই অসম যুদ্ধ কবে নাগাদ শেষ হবে সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাঁর দেশে সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সবাই ঘরে থাকুন আর প্রয়োজনে নির্দিষ্ট নাম্বারে ফোন করুন- প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঘরে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। এমনকি ঘরভাড়া বকেয়া, নো চিন্তা। সরকার তা আদায় করে দেবে। ইটালীর প্রধানমন্ত্রী গুসেপ কন্তে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে তাঁর গৃহীত সব পদক্ষেপ যখন ব্যর্থ তখন আসমানী সাহায্যের জন্য কাতর মিনতি জানাচ্ছেন। চীনে একের পর এক মসজিদ ধ্বংসকারী প্রধানমন্ত্রী শী জিন পিং উপায়ান্তর না দেখে মসজিদে ও মুসলমানদের ঘরে গিয়ে হাজির হয়েছেন। হালে চীনে মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা রাস্তার উপর জায়নামায বিছিয়ে জুমার নামাযে শামিল হচ্ছেন। স্পেনে কয়েক শত বছর ধরে বন্ধ করে রাখা মসজিদে মাইকযোগে আযান দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে তথাকথিত কিছু সুবিধাবাদী মসজিদ বন্ধ করার দাবী তুলেছেন। আমরা আশা করি, সরকার তাদের ওই হটকারীতা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি প্রায় কানাডার সমান। তাই যদি হবে তবে আমরা কি কানাডার প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন সেভাবে আমাদের জনগনকেও সুরক্ষা দিতে পারবো ? যদি পারা যায় তাহলে তা হবে খুবই সুখকর। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে ? বাংলাদেশে বর্তমান বেকারত্বের হার ৪.২৯% [(২০১৯) স্টেটিস্টা]। তার মানে অর্ধ কোটিরও বেশি লোক কর্মহীন। বিশ^ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে বর্তমান দারিদ্র্যের হার ২৪.৩% (২০১৬)। এখন খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার। কাজ নাই, কর্ম নাই। রেস্তোঁরা-দোকান বন্ধ। তাই কর্মচারী ছাঁটাই। গাড়ির চাকা ঘোরে না। ড্রাইভার-হেলপার বেকার। রুজি বন্ধ। তরি-তরকারি-সবজির কারবারি- তারা কর্মহীন। ফিশিং বোট মালিক সাগরে বোট পাঠাচ্ছেন না, জেলেরা বেকার। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেহ কোন কাজ করাচ্ছেন না। সুতরাং দিন মজুরগণের কাজ নাই। ব্যক্তি মালিকানাধীন কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র কারখানা বন্ধ। কর্মচারীগণ ছাঁটাইয়ের শিকার। গৃহকর্মীর কাজ নাই। এইভাবে যদি হিসাব কষা হয়, তবে কত সংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন, তার খবর কেইবা রাখে। নিম্ন আয়ের ও ছদ্ম বেকার লোকজন তাদের যৎসামান্য সঞ্চয় ঘরে অলস বসে শেষ করছেন আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাতর হচ্ছেন।

কর্মহীন মাথায় কতো প্রশ্নই না জাগে! আচ্ছা, মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা তো পবিত্র কোরআনে স্পষ্টতঃই ঘোষণা করেছেন যে, রব্বানা মা- খলক্তা হা-জা বা-তিলা (মহাপ্রভূ এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি)। তাহলে এই যে কভিড-১৯ ভাইরাস তিনি সৃষ্টি করলেন তা কেন ? পবিত্র কোরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, স্থলে ও জলে যা কিছু বিপর্যয় সবই মানুষের কর্মফল। তাহলে মানুষের কর্মদোষে এই ভাইরাস জনিত রোগ-বালাই মহামারীরূপে এসেছে। জাতিসংঘের বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ১১ মার্চ করোনাভাইরাসকে বিশ^ব্যাপী ছড়ানো মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস ১৩০টির অধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। একটা বিষয় এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। আলোচ্য এই মহামারী কি শুধুই অভিশাপ নাকি আশীর্বাদও বটে। আমি বলবো, দু’টোই। অভিশাপের দিকটি ইতোমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে এবং বহু লেখক-গবেষক এ বিষয়ে আলোচনা করছেন, মতামত দিচ্ছেন। চলুন, দৃষ্টি ফেরাই আশীর্বাদের দিকে।

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) প্রকৃতি ও মানবজাতির জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে পৃথিবী মহাবিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বায়ুমন্ডলের পরিধি Ỏাস পেয়ে ওজোন স্তর সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। যার ফলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মি (আলট্রা ভায়োলেট রে) বাধাহীনভাবে পৃথিবীতে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। যার পরিণতিতে কান্সারসহ বিভিন্ন প্রকারের মারাত্নক সব রোগ-বালাইতে মানুষ আক্রান্ত হবে। মেরু অঞ্চল ও পর্বত গাত্রে জমে থাকা বরফ গলে গিয়ে সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন নদ-নদীর মধ্য দিয়ে লবণ পানি ঢুকে স্থলভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা লবণাক্ত হয়ে পড়বে। আবার সাগর পাড়ের নিচু এলাকাগুলো সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যথা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা প্রভৃতির প্রকোপ বেড়ে যাবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। ভূ-বিজ্ঞানীরা দাবী করছেন, বায়ুমন্ডলে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাবার পেছনে মূলতঃ দায়ী হলো কার্বন নিঃস্বরণকারী মিল-কারখানায় কয়লা ও জ¦ালানীর অত্যধিক ব্যবহার, কালো ধোঁয়া উদগীরণ, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী গাছপালা অবাধে কর্তন, বনভূমি উজাড় ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তন নিরোধের উপায় অন্বেষণে বিশ^নেতারা বহু বৈঠক করেছেন, করছেন। বহু বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবার ভয়ে কোন দেশই উল্লিখিত মিল-কারখানা, যানবাহন ও গাছপালা নিধন কর্ম থামাতে রাজী হচ্ছিলেন না। মহান স্রষ্টা তাঁর স্বীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাঁর সৃষ্টিকে মানুষের ধ্বংসাত্নক কর্মকান্ড থেকে রক্ষার জন্য কভিড-১৯ ভাইরাস প্রেরণ করলেন। যার থাবায় মুহুর্তেই কার্বন নিঃস্বরণকারী ক্রিয়াকর্ম বন্ধ করে মানবমন্ডলী কোয়ারেন্টিন নামক গৃহকোণে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছে। এছাড়া শহরগুলো দীর্ঘদিন পর পরিচ্ছন্নতার মুখ দেখছে। রাস্তা-ঘাটে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা অনেক ক্ষেত্রেই পরিষ্কার করা হয়েছে। লোকজন পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করছেন। নিয়মিতভাবে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করছেন। করোনা হোক বা না হোক ধুলো-বালি থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক ব্যবহার করছেন। কোয়ারেন্টিনে গিয়ে মেডিটেশন বা ধ্যান-মগ্নতার তালিম নিচ্ছেন। বই পড়ছেন। অভাবী মানুষগুলোর প্রতি সাহায্য-সহযোগিতা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ম চর্চার প্রতি ঝোঁক প্রবণতা বেড়েছে। মানুষ মহান স্রষ্টার দরবারে অবিরত আকুতি জানাচ্ছেন। খাবার-দাবার, চলনে-বলনে মানুষ সংযমী হচ্ছেন ও সংযত আচরণ করছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ বন্ধ থাকায় শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণের পরিমাণ কমে গেছে। সর্বোপরি মানুষের স্বভাব-চরিত্র ও আচার-আচরণে যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা এসেছে তা-ও কম কিসে। সাগরে মাছের প্রজনন বেড়ে গেছে। কক্সবাজার সৈকত সংলগ্ন সাগরে ডলফিন খেলা করছে- তার ছবি তো খবরের শিরোনাম হয়েছে।

প্রায় মাসাধিককালের এই স্থবিরতা প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উপর কী প্রভাব ফেলেছে তা যদি গবেষকগণ খতিয়ে দেখতেন, তাহলে দেখা যেতো মানুষের দ্বারা ক্ষতি হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবেশ ইতোমধ্যে পূরণ হয়ে গিয়েছে কিনা। অথবা তা পুষিয়ে নিতে আর কী পরিমাণ সময় পর্যন্ত কার্বন নিঃস্বরণকারী তৎপরতা বন্ধ রাখা দরকার। হয়তো দেখা যাবে, সে সময় পর্যন্ত আলোচ্য ভাইরাস তার দাপট দেখিয়ে যাবে আর মানুষও স্বেচ্ছাবন্দী অবস্থায় থাকবে।