জে. জাহেদ,চট্টগ্রাম :

মঙ্গলবার দুপুরে টাইগারপাসস্থ সিটি মেয়র কার্যালয়ে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন।

সভায় চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা,সচিব মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সেলিম আকতার চৌধুরী,প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাসেম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী, উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, করোনা এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাস।

পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ (মার্স ও সার্স সমগোত্রীয় করোনা ভাইরাস) এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। আপনি যদি চীনসহ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলো ভ্রমণ করে থাকেন এবং ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট/৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর বেশী), গলাব্যথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে আপনার দেহে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি অতিসত্ত্বর সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত জেনারেল হাসপাতাল, মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল সহ ওয়ার্ডস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহবান জানান সিটি মেয়র ।

তিনি করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংকিত না হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা অনুসরণে চসিক স্বাস্থ্য বিভাগ এর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের এই পরিস্থিতি মোকাবেলার সামর্থ্য রয়েছে। সরকার এ বিষয়টি ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষন করছে এবং এ ক্ষেত্রে যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বর্তমানে অনেক দেশেই অর্থনৈতিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রথমে চীনের উহানে ধরা পড়ে। এখন বিশ্বের ১০৪টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে লক্ষাধিক মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং সাড়ে ৩ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে। অবশ্যই সংক্রমিত লোকদের অর্ধেক ইতোমধ্যে আরোগ্য লাভ করেছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষনা ইনস্টিটিউট এর উদ্বতি দিয়ে সিটি মেয়র বলেন, এ পরিস্থিতিতে এখুনি আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা অনুযায়ী মেনে চললে করোনা ভাইরাস সংক্রমক অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তারপরেও দেশে এই ভাইরাস রোধের সতর্কতার অংশ হিসেবে নিয়মিত জীবণুনাশক বা সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া, কাশি বা হাঁচি দিচ্ছেন এমন ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখা, হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় টিসু বা হাতের কনুই দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখা, যেখানে সেখানে থুথু নিক্ষেপ না করা, রান্না করার আগে ভালো করে খাবার ধৌত করা, যেকোনো খাবার ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করা, অসুস্থ ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকা, কাপড় একবার ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলা, বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্র নিয়মিত পরিস্কার করা, বাইরে ব্যবহৃত জুতা ঘরের ভেতরে ব্যবহার না করা, খালি পায়ে না হাঁটা , পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকা, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া, অন্যের সংস্পর্শ থেকে দুরে থাকা, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ অনুসরণ করে নিরাপদ থাকাই উত্তম পন্থা।

এ ছাড়া অসুস্থ বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা, জনাকীর্ণ স্থানে সতর্ক থেকে মাস্ক ব্যবহার করা, শিশু, বৃদ্ধ ও ক্রণিক রোগীদের অধিকতর সতর্ক রাখা এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে বিদেশ ভ্রমণ না করাই শ্রেয় বলে সিটি মেয়র উল্লেখ করেন।