– মাহবুব সোবহান জালাল তানভির
পরিচালক রিহ্যাব ও কো-চেয়ারম্যান, কো ( ২) রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : তাজুল ইসলাম পলাশ
বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।

সিবিএনঃ দেশে আবাসন ব্যবসার সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?

তানভিরঃ সরকারি কর্মকর্তাদের ৫ শতাংশ সুদে যে গৃহঋণ দেয়া হচ্ছে, এর ফলে সরকারি কর্মকর্তারা রেডি ফ্ল্যাট কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। অর্থনৈতিক অবস্থা যত গতিশীল হবে আবাসন ব্যবসার প্রসারও ততটা বাড়বে।

তানভির বলেন, আমাদের দেশে যারা ফ্ল্যাট কেনেন, তারা মূলত সরকারি ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী গৃহঋণ প্রত্যাশা করেন। যেকোনো অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো যদি সহায়তা করে তাহলে যারা ফ্ল্যাট কিনতে চান তাদের জন্য ভালো হয়। পৃথিবীর কোনো দেশেই গৃহঋণ-সুবিধা ছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রি হয় না। উন্নত দেশগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন দীর্ঘমেয়াদী কিস্তি-ব্যবস্থা চালু আছে, যাতে ভাড়ার টাকার মাধ্যমেই কিস্তি পরিশোধ করা যায়। আমরা আশা করি, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী কিস্তি-সুবিধা বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসবে।

সিবিএনঃ এবার রিহ্যাব ফেয়ারে কী ধরনের আয়োজন থাকছে?

তানভিরঃ এবারের মেলায় সব ধরনের আয়োজনই থাকছে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সবার প্রত্যাশা অনুয়ায়ী ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে এবারের রিহ্যাব ফেয়ারে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো স্বল্প মূল্যে ফ্ল্যাট কিনতে পারবে। এ ছাড়া উচ্চবিত্তদের জন্য রয়েছে সুযোগ সুবিধা। নিম্নবিত্তদের জন্যও এলাকাভেদে ৩০ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাটও বিক্রি হবে। এ ছাড়াও এবারের মেলায় রেডি ফ্ল্যাট অনেক বেশি থাকবে। ২০১৩ সালের পরে এবারই অনেক বেশিসংখ্যক আবাসন প্রতিষ্ঠান রিহ্যাব উইন্টার ফেয়ারে অংশগ্রহণ করছে।

সিবিএনঃ বিগত মেলার চেয়ে এবারের মেলার আকষণ কি ?

তানভীরঃ ‘এবারের মেলাকে আমরা বিগত মেলাগুলোর চেয়ে আরও অধিক জাঁকজমকভাবে আয়োজন করছি। মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা বাসস্থান নিশ্চিত করাই রিহ্যাবের মূল লক্ষ্য। মেলার মাধ্যমে রিহ্যাব গ্রাহকদের একই ছাদের নিচে তাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে পছন্দের ফ্ল্যাট ও প্লট বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

সিবিএনঃ আবাসন খ্যাতের অবস্থা ভালো না

তানভিরঃ, এটা মোটেও সত্য নয়। আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। ব্যাংকঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্লট ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি কমেছে। গৃহঋণের পরিমাণ দুই কোটি টাকা করা হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের পাঁচ শতাংশ হারে সুদে গৃহঋণ দেওয়া হচ্ছে। এসব উদ্যোগের কারণে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠছে আবাসন খাত। ফ্ল্যাট বিক্রিও আগের চেয়ে বেড়েছে। মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরছে।’

সিবিএনঃ ঢাকার ওপর প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। ঢাকার বাইরে পরিকল্পিত আবাসন গড়তে রিহ্যাব কী কাজ করছে?

তানভিরঃ আগামী দশ বছরে আবাসন গড়ার মতো আর কোনো জমি ঢাকায় থাকবে না। ঢাকায় জমির সংকট তৈরি হবে। ঢাকার বাইরে পরিকল্পিত আবাসন গড়তে সরকারের পক্ষ থেকে রিহ্যাবের মাধ্যমে যদি আবাসন ব্যবসায়ীদের জমি দেয়া হয়, তাহলে আমরা মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তুলতে পারব। সেই সঙ্গে জনসংখ্যার তুলনায় আবাসনের যে সংকট-সেটাও কাটিয়ে উঠতে পারব।

সিবিএনঃ আবাসন ব্যবসা প্রসারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন?

তানভিরঃ বর্তমানে গৃহঋণে সরল সুদের প্রবর্তন করা জরুরি বলে মনে করি। কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা প্রথমে ঋণ দেয়ার সময় সুদের হার ১০ শতাংশ বললেও একটা পর্যায়ে সুদের হার ১৩ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশে নিয়ে যায়। হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশনসহ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো সরল সুদে গৃহঋণ দেয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সরল সুদে গৃহঋণ দেয়, তবে গ্রাহকের জন্য বোঝা হবে না।

তানভির বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আবাসন খাতের প্রসারে প্রজেক্ট লোন, থোক বরাদ্দ ও দীর্ঘমেয়াদী গৃহঋণের ব্যবস্থা করলে আবাসন খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

স্বপ্নীল আবাসন সবুজ দেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ’ স্লোগানে নগরের হোটেল রেডিসন ব্লু’তে বৃহস্পতিবার
( ০৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০২০।

এবারের ফেয়ারে ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের ৭৩টি স্টল অংশ নিচ্ছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাব অডিটোরিয়ামে রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী এ তথ্য জানান।

এবারের চার দিনব্যাপী ফেয়ারে ৭৩টি স্টল স্থান পাচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসসহ কয়েকটি লিংকেজ প্রতিষ্ঠানকে ফেয়ারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

এ ফেয়ারে প্রথমবারের মতো গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ২টি প্রতিষ্ঠান, কো স্পন্সর হিসেবে ১৮টি, ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ১৪টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৫৫টি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ ফেয়ার চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এতে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম।

বিশেষ অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য নুরুন্নবী শাওন চৌধুরী, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ।

ফেয়ার উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় রেডিসন ব্লু’তে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চার দিনব্যাপী এ ফেয়ারে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন।