আবুল কালাম, চট্টগ্রাম:
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আতঙ্কিত সারা বিশ্ব। এই নভেল করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে চীনের ৮১ জনের প্রাণ এবং এ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৩ হাজারের বেশি। তবে এ ভাইরাস বাংলাদেশের কোথাও এখনও শনাক্ত হয়নি। এ ভাইরাস ঠেকাতে এর আগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল (চমেক) হাসপাতালসহ সকল হাসপাতালে ইতিমধ্যেই মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বিমানবন্দর ও নৌ-বন্দরে মেডিকেল টিমের চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক স্ক্যান করে দেখছেন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক না ছড়ানোর জন্য এক জরুরি সভা ডাকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ওই সভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এ ভাইরাস বাংলাদেশে এখনও আসেনি। তবে সরকার এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতনতাই পারে এ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে। জরুরি প্রয়োজনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।’

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সর্তকতা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা একটা মেডিকেল টিম তৈরি করেছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে ৫টা শয্যার ব্যবস্থা করেছি এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশানের যে গাইডলাইন দেওয়া আছে সেই গাইডলাইন অনুযায়ী যদি রোগী শনাক্ত হয় সেভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ভাইরাস ঠেকাতে সরকারি পর্যায়ে পুরো দেশ সতর্ক। পোর্ট এবং বন্দরে শনাক্ত হয়ে রোগী হাসপাতালে এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব হাসপাতালে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।’

একই প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত কোথাও এ রোগ শনাক্ত হয়নি। তবে আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। আমাদের মেডিকেল টিম বিমানবন্দর ও নৌ বন্দরে সার্বক্ষণিক স্ক্যানিং করছে। এখনও পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি কেউ।’

তিনি বলেন, ‘কাল সন্ধ্যায় একজন গুজব ছড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও এ রোগ শনাক্ত হয়নি।’

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ:
সাধারণ সর্দি, জ্বর দিয়ে শুরু হয় এই ভাইরাসের আক্রমণ। সঙ্গে থাকতে পারে শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ফ্লুর মতই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হলেও ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একইসাথে হতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকেজো হয়ে ঘটতে পারে মৃত্যু।

বাঁচার উপায়:
এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। তাই এখনও চিকিৎসকরা সঠিক রোগ প্রতিরোধ করার উপায় বের করতে সক্ষম হয়নি। তবে ভাইরাসটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আপাতত একমাত্র উপায় ‘যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে— তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।’

ঠেকাতে প্রয়োজন সচেতনতা:
এ ধরনের ভাইরাস যানবাহনের হাতল, দরজার হাতল, টেলিফোন রিসিভার ইত্যাদি সাধারণ বস্তু থেকেও ছড়াতে পারে। তাই বাইরে থেকে এসে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে৷ যারা হাসপাতাল বা ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন, তারা হাত পরিষ্কার করতে অ্যালকোহল স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে-সেখানে প্রকাশ্যে থুতু-কফ ফেলা বন্ধ করার বিষয়ে সচেতনতা দরকার। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, যা অবশ্যই একবার ব্যবহারের পরই ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে। হাত দিয়ে নাক মুখ চোখ স্পর্শ যত কম করা যায়, ততই ভালো।

একইসঙ্গে বিদেশ থেকে আসা কোনো ব্যক্তি কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্তত ১৪ দিন তাকে বাড়িতে একটি আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত করা হয় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এ ভাইরাস নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে তাদের ধারণা, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোনো প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।