এমনিতে মন ভালো নেই। মাগরিবের নামাজ পড়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। নিত্যদিনের মতো বাড়িতে মাগরিবের আগে যে হালকা নাস্তা করা হয় সেটিও করা হয়নি। ক্ষিধে ছিল বিধায় রাস্তার পাশে যে ভাপা পিঠা বিক্রি করা হয় তা থেকে একটা নিয়ে খেতে বসলাম। যখন পিঠা খাওয়া শুরু করলাম তখন দেখলাম তিন যুবক এসে আমার পেছনে দাঁড়াল। তারাও পিঠা খেতে এসেছে। তৎমধ্যে একজনের একটা পা নেই। যুবকটির কথা বলা দেখে মনে হলো সম্প্রতি জেল থেকে এসেছে। তার কথা বলার ভঙ্গি শুনে আরো মনে হলো কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক কর্মী হবে। তবে চেহেরা দেখে মনে হলো কোন অসভ্য ঘরের অবাধ্য সন্তান। কারণ সে জেলে থাকার যে বিররণ দিল তা শুনে আমি অবাক। প্রথমে সে কয়দিন জেলে ছিল তা বলল। তারপর জেলে সে যে জামাই আদর পেল তার বিবরণ দিতে লাগল। জেলের ভেতর নাকি তার মানুষ ছিল! ডিসি অফিসেও নাকি তার মানুষ ছিল! যে বিচারক জামিন দেয় সেও নাকি তাকে কাস্তুরিতেও তুলে নাই! আমার পিঠা খাওয়া অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। যুবকটির আরো কথা শুনতে পিঠার প্লেটটি নিয়ে বসে রইলাম। সে বলল একশ পিচ ট্যাবলেট নিয়ে ধরা পরেছিলাম। যদি পাঁচ হাজার নিয়েও ধরা পড়তাম তাহলেও আমার জামিন হয়ে যেত। হয়তো বিচারক মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে জামিন দেন। পাশে থাকা এক যুবক বলল,তোর মায়ের দোয়া আছে বলে তুই তাড়াতাড়ি জামিন পেলি। মনে মনে ভাবলাম পৃথিবীতে এমন মাও আছে,যে ট্যাবলেট বিক্রেতা,যুব,ছাত্র সমাজ ধ্বংসকারী ছেলের জন্য দোয়া করে। তবে সব মায়ের দোয়ার করার অধিকার আছে। মনে মনে আবার বললাম,কোন বিচারক এই যুবকটিকে জামিন দিল! যাক এক পর্যায়ে তার কথাগুলো আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল তখন বলে উঠলাম,ব্যাটা ট্যাবলেট বিয়ারী কও কী! আমি বললাম, তোদের মতো সমাজ ও দেশ ধ্বংসকারীদের জন্য টেকনাফের বদনাম মুছেও মুছছেতে না। তোদের শায়েস্তা করতে ওসি প্রদীপ দাশকে (স্যার)আরো কিছুদিন থাকতে হবে। না হয় এই ব্যবসা শেষ হবে না।তাকে ভয় দেখিয়ে বললাম এখনি তোকে আমি পুলিশে ধরিয়ে দেব। তখন পিঠা বিক্রেতা আমাকে বলল,বাদ দাও ভাগিনা। আমি বললাম এই সকল সমাজ ও দেশ ধ্বংসকারীদের পিঠা বিক্রি করিয়েন না। পাশে থাকা দুই যুবক বলল,ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দেন। আমি তাদেরকে বলি, ঔকে যেন আর এখানে না দেখি।
লেখাটি কোন গল্প নয়। বাস্তব ঘটনা। তবে অনেকের কাছে গল্প ও খারাপ লাগতে পারে। খারাপ লাগলে করার কিছু নেই। কারণ এই মাদক ও মাদক সংশ্লিষ্টদের কারণে আজ গোটা টেকনাফবাসী লজ্জিত ও ঘৃণিত সবার কাছে।
আসুন আমরা সবাই মাদক সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজি সম্মিলিতভাবে। নিজে বাঁচি, নিজের প্রজন্মকে বাঁচায়।কারণ টেকনাফ আমার, আপনার ও সবার।

✍সাইফুল ইসলাম,লেখক ও শিক্ষক।