বিবিসি বাংলা:

ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাশেম সোলেইমানির হত্যার ঘটনা এখন ইরানের গণমাধ্যম জুড়ে প্রধান খবর, যেখানে ইরানের টেলিভিশনে আবেগময় দৃশ্য উঠে এসেছে।

সোলেইমানি ছিলেন ইরানের সেনাবাহিনী ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ডস এর এলিট বাহিনী কুদস ফোর্সের নেতা।

মার্কিন ড্রোন হামলার তার নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, রেভলুশনারি গার্ডস এর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরীফ টেলিভিশন লাইভে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ড্রোন হামলায় সহায়তার জন্য ইরানের অনেক কর্মকর্তারা ইসরায়েলকে দায়ী করছেন।

জেনারেল শরীফ টেলিভিশন লাইভে পরে ধাতস্থ হলে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হুমকি দিয়ে বলেন, “আমেরিকান এবং ইসরাইলিদের উল্লাস খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না, এবং তা শোকে রূপ নেবে,”।

সেইসাথে আরও যোগ করেন, কোন একজন ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রেভলুশনারি গার্ডসকে থামানো যাবে না।

‘চরম প্রতিশোধ’

রেভলুশনারি গার্ডস এর মুখপাত্র মিস্টার শরীফ বলেন, “দখলদার ইহুদীবাদী এবং অপরাধীদের প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা হবে আরও ব্যাপক”।

যেহেতু গার্ড বাহিনী “নতুন এক অধ্যায়” শুরু করতে যাচ্ছে এবং অনেকেই সোলাইমানির উত্তরাধিকার বহন করতে আগ্রহী।

প্রধান প্রধান সংবাদ মাধ্যম মানুষের জমায়েত সমাবেশ সরাসরি দেখায়, যেখানে ধর্মীয় নেতারা অন্যান্য মুসুল্লিদের আশ্বাস দেন যে “স্রষ্টার জন্য শহীদ হিসেবে মৃত্যু হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ” এবং সেজন্য মহান ব্যক্তিরা প্রাকৃতিক কোন কারণ, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা বা বার্ধক্যে পৌঁছে মৃত্যুর চেয়ে শাহাদাত বরণকে অধিক শ্রেয় মনে করেন”।

রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমের স্ক্রিনে দেখা যায় জেনারেল সোলেইমানির ছবিসহ শোকের কালো রিবন এবং দেশটির সবোর্চ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পক্ষ থেকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে “চরম প্রতিশোধ” এর শাস্তির হুমকির খবর প্রচার করেন।

‘গৌরবান্বিত শাহাদত’

সমস্ত সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিভিন্ন যুদ্ধে বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধে তার অবদানের কথা তুলে ধরে তার মৃত্যুকে “গৌরবান্বিত শাহাদত” হিসেবে বর্ণনা করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। সেই যুদ্ধেই ইরানের সামরিক সহায়তার কারণে বহির্বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রে আসেন।

বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেল এবং আন্তর্জাতিক প্রেস টিভি আর্কাইভ থেকে সোলেইমানির ফুটেজ প্রচার করছে, যেখানে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সাথে তার ঘনিষ্ঠতা এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তার নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হচ্ছে।

টেলিভিশনের খবরে ইরানের কূটনীতিক এবং বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়াও প্রচার করা হচ্ছে, যাদের সবাই-ই বলছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে পারে।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক পশ্চিমা নাগরিকদের বারবার সতর্ক করে অবিলম্বে মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষত আমেরিকানদের। তিনিসহ আরও কয়েকজন বিশ্লেষক স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক চ্যানেলে ভবিষৎ বানী করেছেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতির সমাপ্তি ঘোষণা হতে যাচ্ছে”।

‘কান্না থামাতে পারছিনা’

Qasem Soleimani video tribute on Iranian TVশোক প্রকাশের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রীয় টিভিতে কালো ব্যাজ।

সরকার-পন্থী সামাজিক মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের শোকের প্রতিক্রিয়ারই প্রতিধ্বনি এবং শাস্তির আহ্বান। সেখানে সোলেইমানির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওযার পর থেকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে (#সিভিয়াররিভেঞ্জ)চরম প্রতিশোধ নেয়ার দাবি ।

দি খবর ফৌরি টেলিগ্রাম চ্যানেল গুলিবিদ্ধ রেভলুশনারি গার্ডস-এর ইউনিফর্ম এর রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করেছে, তার নাম খচিত, এবং সাবেক গার্ডস কমান্ডার মহসেন রেযাই টুইটারে লিখেছেন ইরান “আমেরিকার বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিশোধ নেবে”।

ইরানের কর্মকর্তারা গত নভেম্বরের সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সময় নিহত বিক্ষোভকারীদের মরদেহ ফেরত দেয়ার জন্য কর্মকর্তার অর্থ দাবি করেছিলেন এমন খবরে প্রেক্ষিতে আরেকদল সোচ্চার সমালোচনায়।

নেতৃস্থানীয় সামরিক রিপোর্টার হোসেন ডালিরিয়ান “কান্না থামাতে পারছি না” লিখে টুইট করেছেন।

‘গণহত্যার স্থপতি’

সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার অন্য অনেকে জেনারেল সোলেইমানির মৃত্যুতে উল্লসিত।

প্রবাসে অবস্থানরত সাংবাদিক শাহেদ আলাভি টুইট করেন, “আজ আমি একজন সিরিয় শিশু সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে নিহত ৫ লাখ মানুষের নাম ধরে চিৎকার করছি এবং প্রতিটি নামের পরে আমি বলবো যে, “ভয়াবহ সে গণহত্যার স্থপতি নিহত হয়েছে”।

খবর ফৌরি টেলিগ্রাম চ্যামেলে রক্তাক্ত গার্ড রেভূলুশনারি গার্ড ইউনিফর্ম
“কাশেম সোলেইমানি” ট্যাগ লাগানো ইউনিফর্ম।

“আমি আশা করি মৃতদেহ ফেরত আনার জন্য তারা ইরানের কাছে ৪০ মিলিয়ন ডলার দাবি করবে, এরপর যে রকেট তাকে হত্যা করেছে তার জন্য অর্থ দাবি করবে ইরানের কাছে” তিনি টুইট করেন।

একদিকে অনেক ইরানি তাদের প্রোফাইল ছবি বদলে সেখানে জেনারেল সোলেইমানির ছবি দিচ্ছেন।

আবার অন্যদিকে গত নভেম্বর মাসে যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছিল তা মিডিয়ায় উপেক্ষিত হয়েছিল , আর সেখানে তার মৃত্যু কত বেশি সরকারি কভারেজ পাচ্ছে -বিভিন্ন গোপন চ্যাটিং অ্যাপে এবং নামবিহীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা, বিরোধীরা সেটিই তুলে ধরছেন।

কাশেম সোলেইমানিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে ইরানের টেলিভিশনে।কাশেম সোলেইমানিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে।