মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির কৃতি সন্তান প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম পিএসসি’র জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আছরের নামাজের পর বিকাল ৪ টায় চুনতি সীরত ময়দানে সামরিক সচিবের ২য় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।জানাজায় ইমামতি করেন চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা শাহ আলম।

১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে বিকাল ৫ টায় পশ্চিম চুনতি সিকদার পাড়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে সামরিক মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালনসহ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে, বিউগলে করুন সুর বাজানো হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে শোনানো হয়।

এদিকে, দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে ঢাকা থেকে ১ম জানাজা শেষে হেলিকপ্টার যোগে চুনতিতে আনা হয় সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম পিএসসি’র মরদেহ।

জানাজায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, চট্টগ্রাম ১৫ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুসলেম উদ্দীন চৌধুরী, সিডিএ এর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ সালাম, লোহাগাড়া উপজেলা পরিষেদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল, ভাইস- চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম কবির, ইউএনও তৌসিফ আহমদ।

বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা।অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান, বিমান বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান সহ সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার এর পক্ষ থেকে কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের জীবন বৃত্তান্ত পড়ে শোনানো হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে নিকটাত্মীয় কমোডর আফজাল মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে সকলের কাছে দোয়া চান।
গত ১৭ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ১৩মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বুধবার বিকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ দেশে আনা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

সংক্ষিপ্ত জীবনী :
১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামে জন্ম তার। পিতা ইছহাক মিয়া ও মা মেহেরুন্নিছা। জয়নুল আবেদীনের পড়ালেখার হাতেখড়ি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায়। সপ্তম শ্রেণিতে তিনি ভর্তি হন ফৌজদারহাট ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে। ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। দুই বছর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ১৯৭৯ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন।

বিশৃঙ্খল,বিপদ সংকুল ও গোলযোগপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়িত্ব পালনকালে তার সাহসী নেতৃত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার কারণে অনেক জটিল ও কঠিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়েছিল। দেশের প্রতি নির্ভয় আত্মত্যাগ, পাহাড়সম মানসিক দৃঢ়তা ও দেশসেবার মহান ব্রত সবকিছু বিবেচনায় তাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যখন তিনি জীবনমৃত্যুর শঙ্কায়—ঠিক ওই সময়েও শোনা যাচ্ছিল প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে চতুর্থ দফায় পুনঃনিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমনই আস্থাভাজন ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। সবসময় তিনি থাকতেন প্রধানমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী হিসেবে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রচারবিমুখ ও সদালাপী এই মানুষটি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুবই আস্থাভাজন। এ কারণে ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর থেকে টানা তিনবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবের দায়িত্ব পান।