জাহেদুল ইসলাম, লোহাগাড়াঃ
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা এখন বন্যহাতির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। দিন যতো যাচ্ছে চরম্বাবাসীর আতঙ্ক ততো বাড়ছে। দিন শেষে রাত আসলেই চরম্বাবাসীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। চারদিকে শুধু হাতির বিচরণ। হাতির ডাকে ঘুম ভাঙে স্থানীয়দের।
হাতির আক্রমন থেকে গত ১০ ডিসেম্বর দিনগত রাত ৩টার সময় রক্ষা পাননি পাহারাদার সাহাব উদ্দিন (৫৫)। সে চকরিয়া উপজেলার পূর্ব ভেওলা ৯ নং ওয়ার্ডের মৃত নূর আহমদের ছেলে। ৭ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার চরম্বা মাইজবিলা এলাকায় সন্ধ্যায় ১০/১৫টির একটি হাতির দল পাকা ধান খেতে আসে। খবর পেয়ে কৃষক নুরুল আলম হাতি তাড়াতে গিয়ে হাতির আক্রমনে ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ওই সময় এলাকাবাসীর সহযোগীতায় পালাতে বাধ্য হয় হাতির দল।
এছাড়াও প্রতিদিন বন্যহাতির দল চরম্বা এলাকায় খাবারের খোঁজে হানা দিচ্ছে ধান ক্ষেতে ও কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে। খাবার না পেয়ে কৃষকদের বাড়িঘর ভেঙে দিচ্ছে। প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায় কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরম্বা এলাকায় রাত্রিকালিন প্রাণ ভয়ে ঘুমাতে পারছে অনেকইে। বিশেষ করে মাটির ঘর ও বেড়ার ঘরের লোকজন। বন্যহাতির উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে হাতির ভয়ে মানুষ রাস্তায় চলাচল করতেও ভয় পাচ্ছে। বন্যহাতির আক্রমণের শিকার হয়ে সপ্তাহের ব্যবধানে ২জন নিহত। প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ভাংচুর। আগে বন্যহাতি রাতে লোকালয়ে নামলেও এখন দিনের বেলাতেই লোকালয়ে নেমে আসছে। কখন কে হাতির আক্রমণের শিকার হয় এই ভয়ে সবাই তটস্থ।
লোহাগাড়া থানা পুলিশ ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যহাতির আক্রমণের শিকার হয়ে এই ডিস্মেবার মাসে ২ জন মৃত্যুবরণ করেন। বন্যহাতির আক্রমণের শিকার হয়ে বেশ কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। গত ১০/১২ দিন আগে হঠাৎ বন্যহাতি দল বেঁধে আক্রমণ চালায়। প্রায় ১৫টি হাতিকে একসাথে লোকালয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। হাতির ভয়ে সবাই যে যার ঘরে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে চলমান পাহাড় ধ্বংসের কারণে বন্যপ্রাণিরা লোকালয়ে খাবারের খোঁজে হানা দিচ্ছে লোকলয়ে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে পাহাড়ে। ধ্বংস করা হয়েছে পাহাড়। উজাড় হয়েছে জঙ্গল। বড় বড় পাহাড়ে থাকা বন্যপ্রাণিরা আবাস্থল ছেড়ে অন্যত্রে চলে যেতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে আসা বন্যহাতির দল সে দেশে আর ফেরত যেতে পারছে না সীমান্তে স্থল মাইন ও কাঁটা তারের বেড়া থাকায়। পাহাড়ে খাবার না পেয়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতির দল। বাঁধা দিলেই হামলায় শিকার নীরহ লোকজন।
এদিকে বনবিভাগের লোকজন নীরব ভূমিকায়। সরকারের কোটি কোটি টাকা বনবিভাগের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। তারপরেও বনবিভাগরে লোকজন তাদের অফিসের গন্ডিতে বন্দি। চারদিকে বন্যহাতির তান্ডব বনবিভিাগের লোকজন নাকে ডগায় তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন এলাকার সচেতন মহল। বন্যহাতির দল তাড়াতে পুলিশের ভূমিকাই মূখ্য দেখছে এলাকাবাসী। রাতে জেগেই পুলিশই এলাকাবাসীকে বাঁচাতে বন্যহতির দল পাহাড়া দিচ্ছে। তান্ডব চালানোর পরই এলাকায় আসে বনবভাগের লোকজন।
সরেজমিনে বুধবার উপজেলা পদুয়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সহকারী বন কর্মকর্তার (এসিএফ) কার্যালয়ে গিয়েও ওই বন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বন্যহাতির আক্রমণে হতাহতের কথা স্বীকার করে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তৌছিফ আহমেদ বলেন, বন্যহাতির আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাতির আক্রমণে পড়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। হাতির পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে ইতোমধ্যে কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
পদুয়া বন কর্মকর্তা মো: সওেয়ার জাহানের কাছ থেকে বন্যহাতির দল কেন লোকালয়ে ছুটে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত হাতি খাবারের সন্ধ্যানে লোকালয়ে আসছে। একটি হাতি দিনে প্রায় তিন মণ খাবার খায়। বনে হাতির কোন খাবার নেই। বনে কলাগাছ ও জঙ্গল কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। খাবারের সন্ধানেই হাতি লোকালয়ে চলে আসছে। বনে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা থাকলে বন্যহাতি লোকালয়ে আসবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।