–  আহমেদ সৈকত

সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সম্মানী বাড়ানোর বিষয়টা ঢাকা পড়ে গেছে । শিক্ষকদের বহুদিনের আন্দোলনের পর ও ১১ তম গ্রেডে ১১ হাজার থেকে ২৬ হাজার করার কথা বলা হলে ও সেটা শিক্ষকদের সারাদিনের ক্লাস ও অন্যান্য সরকারী দায়িত্ব গুলোর দিকে আলোকপাত করলে অনেক কম মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।বাংলাদেশের সকল সরকারী চাকুরীর মাঝে সবচাইতে বেশি সময় এবং কম সম্মানীতে কাজ করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা । একজন শিক্ষারথী এসময়টাতে নিজের মানসিক বিকাশ ও সামাজিকীকরণে নানান সমস্যার মুখোমুখি হয় । এসময়টাতে সবচে বেশি ভূমিকা রাখেন একজন শিক্ষক যিনি অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার শিশেুর মানসিকতা তৈরীতে । লেখক ব্যক্তি গত জীবনে তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবচাইতে বেশি অবদান রেখেছেন বলে স্বীকার করেন । সাধারণত ১ থেকে ১০ বছরের মাঝে মানুষের জীবনের সামগ্রিক ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় । এ সময়টায় বাবা মার চেয়ে শিক্ষক,সহপাঠী ও বেড়ে উঠা ও পড়াশোনার পরিবেশ সবচাইতে বেশি ভূমিকা পালন করে । কিন্তু এসময় একটা বাচ্চাকে নিয়্েনএণ করাটা অনেক কঠিন । এ কাজটি অনায়াসে , হাসিমুখে করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ।সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩টা বা সাড়ে ৪ টা অবধি প্রতিটি শিক্ষক দৈনিক প্রায় ৭-৮ টা করে ক্লাস নেন ।এটি হিসেব করলে একজন শিক্ষককে মাসে প্রায় ১৫০-১৮০ কখনো কখনো তার ও বেশি ক্লাস নিতে হয় । প্রস্তাবিত ১১ তম গ্রেড হিসেব করলেও প্রতি ক্লাসে পড়বে মাএ ৫০-৬০ টাকা ! আজকের সময়টাতে একঘন্টা টানা ক্লাস এত কম সম্মানীতে ভাবাটাই কঠিন ও ভয়ানক অপমানকর আমাদের এ মহান জাতি গড়ার কারিগরদের । তদুপরি , শিক্ষকতা জীবনের সবচে বিরক্তিকর কাজ উত্তরপএ মূল্যায়ন,সরকারী বলতে গেলে সকল কাজে সব চাইতে বেশি কাজ করিয়ে নেয়া জনগোষ্ঠী হলো এই মানুষগুলো । বাংলাদেশে সরকারী চাকুরী গুলোতে পেনশনের বিষয়টাও হয়ে গেছে চিন্তার বিষয় । মূলত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আশা করেন তারা জীবনের সবচাইতে বড় পাওয়াটা এ পেনশন । অথচ সেটা ও হয়ে গেছে অনেকটা তাল বাহানার বিষয় । বেসিকের ভিত্তিতে দেয়া এ সম্মানীটা হয়ে গেছে তিন ভাগে বিভক্ত ও নানান জঠিলতায় বন্দি । ঢাকায় আন্দ্লেনরত শিক্ষকদের পুলিশ দিয়ে গায়ে হাত তোলা বিষয়টি পুরো জাতির জন্য লজ্জার । অথচ মিডিয়ায় বিষয়টি অনেকটা আসতে দেয়া হয়নি ।সংষ্লিষ্টরা যদি সত্যিই এই মহান মানুষ গুলোর কাজ ও জাতি গঠনে অবদান রাখার স্বীকৃতি দিতে চান ,তবে প্রাথমিক সম্মানী কমপক্ষে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার করা উচিত ।সেটা কোন গ্রেড চিন্তা করে নয় তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে করা উচিত । অথচ ১১ তম গ্রেডই মানা হয়নি এবং শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেড দিয়ে ভয়ানক বাজে অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে ।আজ নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করার সময় আসলে আমরা কতটুকুন করছি যারা আমাদের জন্য অনেক কিছু করছেন ।

লেখক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরজাতিক সম্পরক বিভাগের স্নাতক এবং ’রোহিংগা সমস্যায় জাতিসংঘের ভূমিকা” নিয়ে স্নাতকোওর থিসিস করছেন ।