মুহাম্মদ আতিকুল ইসলাম :

রাসুলুল্লাহ সা.এর মক্কা থেকে মদিনা হিজরত সিরাতে রাসুল সা.এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।ইসলামি ঐতিহ্যের বর্ণাঢ্য স্মারক ও স্বকীয় মুসলিম সংস্কৃতির বাস্তব নিদর্শন। ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতিপাদ্য অংশ। ইসলাম নামক বৃক্ষটির গোড়ায় রাসুল সা.এর সীমাহীন ত্যাগের এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। এ ত্যাগের সফল অনুশীলনের লক্ষ্যেই হিজরী সালের শুভ-সূচনা।

আর মুসলমান এমন একটি ধীমান অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ জাতি যারা পৃথিবীর ঘাত-প্রতিঘাতের নীরব সাক্ষী। বিশ্বের উত্থান -পতনের নিয়ামক শক্তি ও আধুনিক কল্যাণ রাস্ট্রের সফল স্থপতি।
মক্কার অশিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থার সভ্যতার কোনো চাপ ছিলোনা।কোন ঐতিহাসিক ঘটনা কে কেন্দ্র করে তাদের কাজ কর্ম ও লেনদেন পরিচালিত হত।পক্ষান্তরে মদিনায় তুলনামূলক শিক্ষিত ও সভ্য সমাজে প্রচলিত ছিলো খ্রিষ্টীয় সন।এহেন মূহুর্তে ইহুদী -খ্রিষ্টান প্রভাবিত বহুধর্মীয় সমাজে পরাজিত শক্তির সভ্যতা সংস্কৃতির পরিবর্তে ইসলামি রাস্ট্রের স্বকীয় ক্যালেন্ডারের প্রচলনের লক্ষ্যে হিজরী সালের প্রবর্তন হয়।ইসলামি রাস্ট্রের পরিধি জযীরাতুল আরবের সীমানা পেরিয়ে অর্ধ-পৃথিবী পর্যন্ত বিস্তৃত হয় দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রাযি,)এর শাসনামলে, সুশাসন ও ইনসাফ ভিত্তিক রাস্ট্রনীতির কারণে এ সময় টি স্বর্ণযুগ হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বের নানামুখী ও বাস্তবানুগ সমস্যা সমাধানে নিজেদের জন্য স্থায়ী ও টেকসই ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা জোরালোভাবে অনুভূত হয়।যা সদ্য-স্বাধীন নব-প্রজন্মের স্বকীয় চেতনার বহি:প্রকাশ। যার কারণে খ্রিষ্টীয় সাল গণনা নিজেদের জন্য হীনমন্যতাবোধ বলেও বিবেচিত হতে থাকে।

তখন রাস্ট্রীয় ফরমানজারি, অর্ডিন্যান্স ও বিধি -নিষেধ আরোপের নিমিত্তে নতুন রাস্ট্রীয় বর্ষপঞ্জি চালু করার জন্য দাবী -দাওয়া উত্তাপিত হয়।জাহেলি যুগে প্রচলিত নিকাশ-পদ্ধতি মুসলিম সমাজের বহুমুখী কর্মকান্ডে নানামূখী সমস্যার জন্ম দেয়:ইসলামি রাস্ট্রের যাবতীয় কর্মকান্ড ত্রুটিমুক্ত বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট পাঠানো হয়।তা বিবেচনাপূর্বক কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ডাভূক্ত হয়।মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবর্গ দীর্ঘ আলোচনার পর একটি অত্যাধুনিক কালোত্তীর্ণ ও কার্যকর নতুন পঞ্জিকার সূচনার ওপর সবাই একমত হন।এই সূচনাকাল নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য ও দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়।পরিশেষে বদর ও মক্কা বিজয়ের দিন থেকে হিজরী সন গণনার সিদ্ধান্ত হয়।যেহেতু দিন দুইটি নি:সন্দেহে ঐতিহাসিক ও মুসলিম উম্মাহর বিজয়ের মাইল-ফলক। যা মুসলিম জাতিকে বিশ্বশক্তির আসনে অধিষ্ঠিত করে :বিশ্বজয়ে উদ্বুদ্ধ করে।

পক্ষান্তরে হিজরত বিশ্বইতিহাসের এক নির্মম ট্রাজেডি। শুধু ধর্মের কারণে কোনো জাতিকে বাস্তুভিটা ত্যাগে বাধ্য করা ইতিহাসের হদয়বিদারক ঘটনাই নয়:-বিরল নজির ও বটে।মক্কার জাহিলি সমাজ তাদেরই পূর্ব-পরিচিত একজন শান্ত-শিষ্ঠ ও ভদ্র বিশ্বস্ত যে যুবককে তারা আল-আমিন উপাধিতে ভুষিত করেছিল।ধর্মীয় প্রতিপক্ষ হওয়ার কারণে নির্যাতনের এমন কোনো পথ বাকি রাখেনি,যা তার ওপর প্রয়োগ করা হয়নি।অবশেষে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেই ক্ষান্ত হয়নি।বাস্তুভিটা, স্ত্রী-পরিজন ও ধন-সম্পদ ও হরণ করে।আল্লাহর মনোনীত কোনো জাতির জন্য কোনো অভিশপ্ত জনপদে বসবাস সঙ্কুচিত হয়ে পড়লে।পৃথিবীর বিস্তীর্ণ ভূ-খন্ডে শান্তি ও নিরাপত্তার আবাসস্থল গড়ে তোলেন।অনেক ক্ষেত্রে বিতাড়িত ও মজলুম জাতিকে আরেকটি জনগোষ্ঠীর শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্টার ত্রাণ কর্তা হিসেবে করেন।মুসলমানদের বাধ্যগত মক্কাত্যাগ ইজ্জত-আবরু, জান-মাল ও দ্বীন-ধর্ম নিয়ে পলায়নের বাহ্যত একটি কলঙ্কিত পন্থা হিসেবে দেখা দিলে ও বস্তুত এতে মুসলমানদের বিশ্বনেতৃত্ব গ্রহনের এক সুদূর প্রসারী পথ খুলে যায়।

রাসুল সা.মদিনায় শুধু আওস ও খাযরাজ গোত্রের শান্তি প্রতিষ্টা করেই ক্ষান্ত হননি।পুরো মদিনার নিরাপত্তা রক্ষার অবিসংবাদিত ত্রাণকর্তা হিসেবেও আবির্ভুত হন।যা পরবর্তীতে বিশ্বনিরাপত্তার উৎসকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।হযরত ওমর (রাযি.)এর মন্ত্রীসভার প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ সদস্য হযরত আলী (রাযি.) হিজরতের অন্তর্নিহিত এ মর্মবাণী অনুধাবন পূর্বক পুরো জাতিকে বিশ্বজয়ের অদম্য স্পৃহায় অনুপ্রাণিত করার নিমিত্তে হিজরতের শুভ -মূহুর্তকে বর্ষপঞ্জিকার দিনক্ষণ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেন।যা সকল প্রকার আবেগ -অনুভূতির ঊর্দ্ধে এক যুগান্তকারী প্রস্তাব এবং দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রাযি.)এর একটি বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত।

লেখক:-গবেষক ও সেক্রেটারি:-পেকুয়া উপজেলা আল-কোরআন ফাউন্ডেশন।
মোবাইল :-01996-723 205