বিশ্বজিত সেন

বিশ্বের প্রাণ বৈচিত্র্যের মধ্যে পরিবেশ প্রকৃতির অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে। বনাঞ্চল সবুজ পরিবেশ সমৃদ্ধির সাথে সাথে জীব বৈচিত্র্যের প্রসার ঘটে। পাহাড়ের নদীর সমুদ্র সহ যেকোন প্রাকৃতিক পরিবর্তন জনগোষ্ঠীর জন্য দূর্যোগ বয়ে আনে। এসবের মধ্যে প্রাণ বৈচিত্র্য বা জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায় প্রকৃতি পরিবেশ উন্নতির ফলে। সামাজিক আর্থিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার চেতনা অন্যতম। প্রকৃতির রক্ষণাবেক্ষণের সাথে বন্যপ্রাণী রক্ষা শুধু নয়, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও এক্ষেত্রে জড়িত। জীববৈচিত্র্যের মূল উপাদানের মধ্যে বন্যপ্রাণী রক্ষার বিষয়টি আপনাআপনি সামনে চলে আসে। বিশ্বের বন্যপ্রাণী রক্ষার মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ভালো পর্যায়ে নেই। সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংস পাহাড় কাটা পাথর উত্তোলন সহ নানান পরিবেশ বিরোধী কার্যক্রমে দেশে বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে। সবুজ,বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হতে হতে দেখা যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী হারিয়ে গেছে এবং বিলুপ্তির পথে। এ ধরণের বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী ধ্বংস হওয়া অব্যাহত থাকলে দেশের জন্য পরিবেশ প্রকৃতির জন্য বিপদ বয়ে আনবে।

বন্যপ্রাণীর রক্ষার বিষয়ে প্রকৃতি ধ্বংস শুধু নয় খাদ্য এবং আবাসস্থলের বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঘের আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন হাতির আবাসস্থল হিসেবে টেকনাফ বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য খুবই পরিচিত। অথচ এই দুই স্থানেই এখন প্রাণীকূল বিপর্যস্ত। সুন্দরবন এবং বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে এখন খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দেয়। এরই মধ্যে দু’স্থানে হাতি এবং বাঘের আক্রমণে লোকজন মারা গেছে। ফসলীর জমি, ফসল সহ অনেক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে সমুদ্রের পানি এবং পরিবেশ দূষিত হবার ফলে সমুদ্রের প্রাণ বা জীববৈচিত্র্য ও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সার্বিক দিক দিয়ে বন্যপ্রাণী সহ সকল প্রকারের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্নভাবে দুর্যোগ নেমে আসছে। প্রায় সময় দেখা যায় এসব দুর্যোগের করাল থাবা পড়ে উপকূল এলাকার উপর। প্রতিবছরই কোন না কোন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্যোগ বয়ে যায়। যার জন্য সাধারণ মানুষ সহ সম্পদ পরিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। এসবের জন্য উপকূলীয় বেষ্টনী রক্ষা করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। দেশের সমুদ্র বিধৌত অঞ্চলকে যে কোন প্রাকৃতিক বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য, উপকূলীয় এলাকায় বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়। এই বনাঞ্চল যেমন জলোচ্ছ্বাস সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপদ থেকে জনবসতি এবং সম্পদকে রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশ জীববৈচিত্র রক্ষা করতে জীবনের সর্বস্তরে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর যে কোন দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে বন,উপকূলীয় বনাঞ্চল বা পানি সংলগ্ন বনাঞ্চল পরিবেশের জন্য বড় সম্পদ। বিশ্ব পরিবেশ সহ যাবতীয় জীব বৈচিত্র রক্ষায় উপকূলীয় বনাঞ্চলকে সবসময় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যেসব দেশে উপকূলীয় সহ বনাঞ্চলের প্রাধান্য রয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিজস্ব জীব বৈচিত্র্য, বন, উপকূলীয় বনাঞ্চলকে রক্ষা করা হচ্ছে। পৃথিবী জুড়ে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত। কোপেন হেগেন সহ পৃথিবীর যে কোন পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে বনাঞ্চল, বন্য প্রাণী রক্ষার ব্যাপারটি বারবার প্রাধান্য পেয়েছে।

বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যার ভাবে নত, সেক্ষেত্রে এই অত্যাধিক জনসংখ্যা পরিবেশ হুমকির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি ঘর নির্মাণ পাহাড় কাটা সবুজ ধ্বংস করা সহ বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত কার্যক্রমে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়ে যায়। সামাজিক অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে মানুষের বিশেষ কর্মপদ্ধতি না থাকাতে তারা মূলত পরিবেশগত সম্পদকে যথেচ্ছচারভাবে ব্যবহার করে। বনের উপর যেমন মানুষের চাপ থাকে তেমনি পুকুর নদী, জলাভূমির উপর একই চাপ থাকে। নির্মল বায়ু সুন্দর পরিবেশ মানুষের অপরিনামদর্শী ব্যবহারে নষ্ট হয়ে যায়। রাষ্ট্র সমাজ সহ সবারই দায়িত্ব রয়েছে দেশকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। জলবায়ুর পরিবর্তনে বর্তমানে বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক বিপদের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষার সাথে সাথে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহ নানান দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে হবে।

বাংলাদেশ তথা বিশ্বের পরিবেশ এবং জীব বৈচিত্র রক্ষার জন্য বনভূমি, জমি গ্রাস করার তৎপরতা রোধ করতে হবে। এখানে শুধু আবেদন নিবেদন নয়, দেশের সমস্ত জনসাধারণকে নিজেদের স্বার্থে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে সমতল,পাহাড়ি, উপকূলীয়, বন, জমি দখলের বা ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা কে বন্ধ করতে হবে । বাংলাদেশের পরিবেশ ,বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী রক্ষার ব্যাপারে বিভিন্ন আইন এবং উদ্যোগ আছে। আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জীববৈচিত্র্যের রক্ষার ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ না হওয়াতে জীববৈচিত্র্যের অবস্থা সংকট পর্যায়ে আছে। বিশ্ব সবুজ পরিবেশ বন্যপ্রাণী রক্ষার সাথে বাংলাদেশের প্রাণ বৈচিত্র্যের রক্ষারও সম্পর্ক আছে। প্রাণীকে হত্যা নয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে প্রাণী রক্ষা পাশাপাশি ক্ষতিকর আচরণ যাতে করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের দরকার রয়েছে।আন্তর্জাতিকভাবে দেশের বনাঞ্চল,পরিবেশ বন্যপ্রাণী রক্ষার বিষয়টিকে অধিকতরভাবে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। বনাঞ্চল সবুজ পরিবেশ বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আধুনিক এবং প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনা সরকারী বেসরকারী ভাবে গড়ে ওঠা দরকার। এব্যাপারে সরকার প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রকৃতি পরিবেশ এবং জনস্বার্থে জরুরী।

লেখক : সাংবাদিক, গবেষক, Email- bishawjitsen@gmail.com