আজাদ মনসুর:
প্রায় সাংবাদিক আমরা কম বেশি সংবাদপত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানি। সংবাদপত্রের নিরপেক্ষ, সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা বাঞ্চনীয়। সংবাদপত্র যতবেশি নিরপেক্ষ থাকবে, সাংবাদিকরা যত বেশি নির্ভীক ও সৎ থাকতে পারবে-দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে নিশ্চিত। আর সেজন্যই তো সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী বলা হয়েছে। সংবাদপত্রের এসব বৈশিষ্ট্য হলেও, অনেক সংবাদপত্র ও সাংবাদিক নানা স্বার্থে উল্টাপথে হাঁটেন যাকে আমরা অপসাংবাদিকতা বলি। কক্সবাজারের সাংবাদিকতায় সাংবাদিক ও সংবাদপত্রে এহেন চর্চা নিয়ে পুরো দেশজুড়ে আলোচনায়। কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথা’র আজকের ষষ্ঠ পর্ব।

পাঠক, গেল পঞ্চম পর্বে শেষ করছিলাম কক্সবাজারের সংবাদপত্রগুলো কিভাবে চলে। এখানে একটা কথা বলে রাখি ২-৩টি সংবাদপত্র ছাড়া অবশিষ্ট সংবাদপত্রগুলোতে সম্পাদকীয় নীতি ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা চর্চা করার দরকার পড়েনা। আবার মালিকপক্ষ ডিএফপি টিকিয়ে রাখতে প্রত্যেক জনবলের মাসিক হাজিরা সিট ও মাসিক বেতন/ভাতাদি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পাচ্ছে মর্মে স্বাক্ষর নেয়ার ব্যপারে গত পর্বে বলেছিলাম। যারা পত্রিকা ভাড়া দেয় তাদের শুধু তদারকি দরকার। কারণ ভাড়াতে সম্পাদকরা শুধু প্রত্যেকদিন কাগজটি বের করেই দায় ছাড়েন।

প্রতি মাসে ও প্রতি বছরে পত্রিকার অনেকগুলো প্রশাসনিক কাজ থাকে, এটি কিন্তু ঠিক রাখতে হবে। তাহলে যারা অপসাংবাদিকতা করে কিংবা যে ভাড়াটে সম্পাদক দ্বারা পত্রিকাটি পরিচালিত হচ্ছে তাদের সম্পাদকীয় নীতি ও সাংবাদিকতার নৈতকতা নিয়ে মাথা ব্যথা করার দরকার পড়েনা। তারা এ পেশায় এসেছে কেবল কেউ সৌখিন সাংবাদিকতা করতে সমাজে বাহ! বাহ! পাওয়ার আশায়, কেউ অপরাধি সাংবাদিকতায় আসছে মটরসাইকেলের সামনে-পেছনে প্রেস লেখা স্টিকার ও কোমরে ক্যামরা ঝুলিয়ে হাতে ২-৩টা মোবাইলসহ ভাব নিয়ে মাঠে ময়দানে চষে বেড়াতে এবং থানায় গিয়ে পুলিশ কর্তাদের সাথে ভাব জমিয়ে অপরাধ ঢাকতে, আবার কেউ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর কিংবা থানায় দালালি করার মানসে, দেখা গেছে কেউ আবার পত্রিকার একটি পদ নিয়ে চেয়ার বসে থাকতে।

তারা আসলে সমাজে কতটুকু গ্রহণযোগ্য নিজেরা ছাড়া কেউ জানার কথা নয়। আমি অমুখ পত্রিকার তমুখ সম্পাদক, অমুখ অনলাইন পোর্টালের তমুখ সম্পাদক বা সাংবাদিক, অমুখ টিভির তমুখ সাংবাদিক। এখানে টিভি সাংবাদিকদের নিয়ে অন্য পর্বে লিখবো। সাংবাদিকতা যখন করছি তখন টিভি সাংবাদিকদের নিয়ে না লিখলে কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথার অসম্পূর্ণতা থাকবে। কোন একটা টিভি সাংবাদিক আবার কোন পত্রিকার কোন একটা পদে আসিন। তাই ওনারা বুঝে গেছেন, তারপরও অন্যপর্বে টিভি সাংবাদিকতা নিয়ে পাঠকদের কাছে শেয়ার করব। যা বলছিলাম, ঐসব সাংবাদিকদের শুধুমাত্র পদ সম্বলিত আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, একটা ক্যামরা ও প্রেস লিখা স্টিকারে মোড়ানো একটি মোটরসাইকেল।

কোথায় পাহাড় কাটছে, কোন দোকানে অপরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশন করছে, কোন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে হলুদ সাংবাদিকতায় মেতে উঠে ওই সব সংবাদপত্রের লেলিয়ে দেয়া সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিরা। এছাড়াও সংবাদপত্রগুলো বিভিন্ন উপজেলা প্রতিনিধি, থানা প্রতিনিধি, শহর প্রতিনিধি ও সাংগঠনিক উপজেলা প্রতিনিধি, সদর প্রতিনিধি এমন কি ইউনিয়ন পর্যায়েও সাংবাদিকদের নিয়োগ নামে কার্ড বিক্রি করে লুটে নেয় হাজার হাজার টাকা।

কোন পত্রিকায় একজন ব্যক্তি যখন সাংবাদিকতায় নাম লিখাতে আসেন তখন তাকে টাকা বিনিময়ে প্রথমে কার্ড দেয়া হয়। এরপর তাকে পত্রিকার নিয়ম-কানুন নিয়ে কথা বলা হয়। আপনাকে প্রতিদিন পত্রিকা দিব ১০-২০টি, মাসে পত্রিকা বাবদ এত টাকা, পত্রিকার খরচ বাবদ এত টাকা পাঠাতে হবে। ধরেন, পুরো জেলায় পত্রিকাটির সাথে নিয়োজিত ৩০-৩৫ জনকে কার্ড দেয়া হয়। প্রতিজন প্রতিমাসে প্রতি দিনের পত্রিকা বাবদ ও পত্রিকার খরচ বাবদ ৫০০০ হাজার টাকা করে দিলে প্রায় দু’ লাখ টাকা। এদের মধ্যে কেউ দিতে অপারগ হলে ওই পদে আরেকজন। পত্রিকার অমুখ সম্পাদক ও তমুখ সম্পাদক থেকে পদ বাবদ ২-৩ লাখ টাকা এককালিন।

এতে শেষ হয়ে যায়নি, ৮ উপজেলার ৮টি থানা থেকে মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক মাসোহারা, ট্রাফিক পুলিশ, জেলার বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িসহ সরকারি বিভিন্ন চিহ্নিত দপ্তর থেকে মাসিক মাসোহারা নিয়েই সংবাদপত্রগুলো দাপিয়ে চলছে। এছাড়াও আরও অনেক অনেক খাদ এবং বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে চাঁদাবাজি করার। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তু আছেই। যে পত্রিকার কর্তা ব্যক্তিরা যতবেশি চৌকস ততবেশি কৌশল খাটিয়ে কাজ করে থাকেন। আমার কক্সবাজারের সংবাদপত্রে ও সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ভাইদের অনুরোধ করবো লিখাগুলোকে মোটেও নীতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখতে। আজকের বাস্তবতা আগামীতে আপনার আমার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে নিশ্চিত।

তাই পরিবর্তনের জন্য যা কেউ বলছেনা বা বলার সাহসে ধরছেনা কিংবা সংবাদপত্র ও সাংবাদিক নীতি-নৈতিকতা পরিপন্থি এমনটি মনে করছেন। আসলে তা নয় আপনার কক্সবাজার এভাবে সাংবাদিকতায় তাচ্ছিল্য হোক নিশ্চয় আপনি চান না? তাহলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংবাদপত্রের অবস্থা বিবেচনায় এগিয়ে আসুন। হোক না পরিচালনা সম্পাদক, সম্পাদক, সহ সম্পাদকসহ কোন পদে হয়তু আসিন হতে পারবো না, কিন্তু একটি পেশাদারিত্ব নির্ভর সংবাদপত্রে বুকফুলিয়ে সাংবাদিকতা তু করতে পারবো। কক্সবাজারে সম্পাদকীয় নীতি সম্বলিত ও বেতন কাঠামো নির্ভর ২-৩ টি পত্রিকা, ১ টি ইংরেজি পত্রিকা, ১টি মাসিক পত্রিকা, ১টি ত্রৈমাসিক পত্রিকা নিয়মিত হোক সময়ের দাবি। আসুন প্রাসঙ্গিক কিছু নিয়ে ভাবি। কলংকমুক্ত কক্সবাজার তথা কলংকমুক্ত সাংবাদিকতায় কক্সবাজারকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

অনেকে বলতে পারেন এগুলো আলোচনায় আনার কি দরকার! তাহলে বলি, সংবাদপত্র একটা শিল্প। এটা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। এই শিল্প এভাবে চলতে পারেনা, এটার পরিবর্তন আনা দরকার। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নিয়ে বর্তমানে যেভাবে বিমুখ, অদূর ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কক্সবাজার দিয়ে না হয় শুরু হলো, সাংবাদিকতার তীর্থ ভূমি হিসেবে খ্যাত জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগ নিবেনা কোন বিশ্বাস?

কক্সবাজারের সাংবাদিকতার যতকথায় যতগুলো পর্ব থাকবে সেখান থেকে শেষ কয়েকটি পর্বে শুধুমাত্র সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ দেয়া হবে। যেখান থেকে পরিবর্তনের রূপরেখা তৈরি হতে পারে। যদিও পরিবর্তন আপনি আমি করতে পারবো না কিন্তু আপনাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যাতে বিষয়গুলো আমলে নেয়।

এখন আসি পত্রিকাগুলোর প্রতিদিনের সার্কোলেশন কতো? এই নিয়েও পাঠক সমাজে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় প্রতিনিয়ত। সার্কোলেশন নিয়ে আরেক পর্বে বিস্তারিত বলবো।
-চলবে…

আজাদ মনসুর (এম.এ, এলএল.বি) শেষবর্ষ
আইটি স্পেশালিষ্ট, প্রণেতা-কক্সবাজার সাংবাদিক কোষ, সভাপতি-কক্সবাজার সাংবাদিক সংসদ (সিএসএস)
azadcox90@gmail.com ০১৮৪৫-৬৯ ৫৯ ১৬