তারেক হায়দার

রহমতের মাস ‘রমজান’শুরু হয়েগিয়েছে ইতোমধ্যে, রমজানের বাঁকা চাঁদ ধীরে ধীরে ডিমরঙের বৃত্তাকৃতির হবে। দু-এক রমজান করে পুরো রমজান মাসে’ই হারিয়ে যাবে আমাদের কাছ থেকে। পূর্বগগনে নতুন চাঁদের হাসিতে মহিমান্বিত ঈদুল ফিতর কড়া নাড়বে সবার মনের দোয়ারে। ঈদের বাঁকা চাঁদ নয় যেনো মনের পুর্বগগন দাপিয়ে উঠা কাঙ্ক্ষিত এক চিহ্ন। ঈদের চাঁদের মুচকি হাসির আগেই প্রিয়জন, কাছের-দূরের বন্ধু-বান্ধবীসহ সব বয়সীদের কাছে পৌছাতে হবে ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা।

শৈশবে দেখতাম দু-এক রমজাম গত হলেই পাড়ার ছেলেরা হাতে হাতুড়ি, পেড়েক, বাঁশ আর প্যান্ডেলের কাপড় নিয়ে গলির মোড়ে নিজেরাই স্টল বানাতে ব্যস্ত থাকত, শৈশবে যেটার নাম ছিল- ঈদকার্ডের দোকান। স্টল বানানো শেষ হলেই শহরের বাজার থেকেই ঈদকার্ড, স্টিকার, কার্টুনকার্ডসহ আরও বর্ণীল রঙের কার্ডসামগ্রী এনে ঈদকার্ডের দোকান ছেয়ে ফেলতো তারা। হরেক রকমের ডিজাইন আর বাহারি রঙের কার্ড-স্টিকারের জন্য সব বয়সীদের মানুষের ভীড় লেগেই থাকতো সবসময়। কেউ কিনবে, কেউ বা আবার প্রিয়জনের জন্য পছন্দ করে রেখে দিবে। মহল্লার কচিকাঁচারা তাদের মা-বাবা থেকে টাকা নিয়ে স্টিকার কিনে তাদের স্কুলের ব্যাগ, বইয়ের প্রচ্ছদ আর খাতার বাহির অংশে লাগাতো। সেই এক খুশির হল্লোল তাদের মাঝে। আর বিভিন্ন বয়েসের ছেলে-মেয়েরা তাদের প্রিয়জন, বন্ধুমহলসহ সবাইকে ঈদের বার্তা পৌছাতে আগেভাগে কিনে রাখতো কার্ডগুলো। অনেকেই ঈদের আগের দিন আবার অনেকেই ঈদের কয়েকদিন আগেই প্রিয়জনের হাতেই পৌছাত ঈদকার্ড। খুশির বার্তা নিয়ে আসা ঈদ যেনো আরো আনন্দের হয়ে রূপ নিতো ছোট-বড় সব বয়সীদের মাঝে। ঈদকার্ডের এই এক হুলুস্তুল আনন্দঘন আমজে উদযাপিত হত শৈশবের ঈদ গুলো। আর আমাদের ঈদের আনন্দ ফুরিয়ে এলে ঈদের চাঁদটাও যেনো অভিমানে লোকাতো মেঘের আড়ালে।

আমাদের শৈশবের ঈদে মৌসুমীগত আনন্দ আর ঈদকার্ডের প্রথা দেখেছি, এখনকার অনলাইন- ভার্চুয়ালের শৈশবের ঈদ আর আগের মত জমে না।

অতচ কয়েক বছর আগেও নতুন পোশাক আর ভাল খাবারের পাশাপাশি ঈদ উদযাপনের অপরিহার্য উপাদান ছিল বন্ধু-বান্ধব কিংবা প্রিয়জন থেকে পাওয়া এই ঈদকার্ড। ঈদকার্ডের আদানপ্রদানে ঈদের উচ্ছ্বাসটা বহুগুণে বেড়ে যেতো সব বয়সী মানুষের কাছে।

আর গেল কয়েক বছরে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হুয়াটসআপ, টুইটারের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক উত্থানে কার্ডবিনিময় প্রথা প্রায় বিলুপ্ত এখন। অনলাইন আর মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সাথে সাথে ঈদের আনন্দও যেনো কমে আসছে সবার মাঝে। বর্ণীল ঈদকার্ড গুলো হারিয়েগেছে, ঈদকার্ডের দোকান গুলো আর বসে না, কচিকাঁচাদের আমেজে এখনকার ঈদ আর এত মধুর হয় না, ঈদকার্ডের দোকানিরাও তাদের শৈশব ছেড়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু খুশির ঈদ’টা ঠিকই রয়ে গেলো। আমাদের কাছে বছর ঘুরে আসে আর যায়, আসে আর যায়।

ঈদকার্ড আর ঈদকার্ড প্রথা আমাদের কাছ থেকে হারাচ্ছে না, আমাদের অগোচরে কালের বিবর্তনে ঈদকার্ডের সাথে সমান প্লালায় হারাচ্ছে ঈদের আনন্দও।

শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রথা অটুট থাকলেও কাগজ, কাপড় আর রঙে রঙে বর্ণীল ঈদকার্ডের বাহারি সাম্রাজ্য অস্তমিত হতে চলেছে- এর স্মৃতি ধরে রাখতে ঈদকার্ড সংগ্রহ করে রাখতে পারেন সৌখিন সংগ্রাহকরা।

সবাইকে ঈদুল ফিতরের আগাম শুভেচ্ছা “ঈদ মোবারক”

তারেক হায়দার, আহবায়ক- বাংলাদেশ লিবারেল এসোসিয়েশন, কক্সবাজার জেলা।