মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু:
বান্দবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পার্শ্ববর্তী রামুর গর্জনিয়া বাজারে অতিরিক্ত টোল (হাছিল) আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইজারাদারদের বেপরোয়া আচরণ ও অতিরিক্ত টোল আদায়ে বাজারে আসা ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্ট বিরাজমান যে কোন মূহুর্তে সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

যার কারণ প্রতিনিয়ত বাজারের কোন না কোন স্থানে টোল আদায়কারীদের সাথে ব্যবসায়ীদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। রামুর পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর এই গর্জনিয়া বাজার প্রতি বৃহস্পতিবার ও সোমবার সাপ্তাহিক দুই দিন বড় হাট বসে। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়মিত বাজার বসে।

বাজারে ঘুরে দেখা গেছে কোন স্থানে টোল আদায়ের মূল্য তালিকার বোর্ড ঢাকায়নি। ইজারাদারের নিয়োগ করা লোকজন যে যার যার মত করে আদায় করছে টোল।

এখানে সাপ্তাহিক ২ দিন বিশাল গরুর বাজার বসে গরুর বাজারে একটি গরু বিক্রি হলে বিক্রেতার কাছ থেকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা ও ক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩ থেকে ৫ শত টাকা করে। সেখানে নিয়ম হচ্ছে বিক্রেতার কাছ থেকে টোল আদায় করা কিন্তু তারা ক্রেতার কাছ থেকেও টোলের টাকা আদায় করছে। আগে একটি গরু বিক্রি হলে গরু বিক্রেতার কাছ থেকে হাজার প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা ট্যাক্স দিত, আর ক্রেতা দিত ৫০ টাকা।

অপর দিকে বিগত সময়ে তরকারী বাজারে টোল আদায় করত প্রতিজন থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা, সেখানে এখন টোল নেয় ১ শত ২০ টাকা থেকে ১ শত ৫০ টাকা এ ভাবে পান, কাঁচা মাছ,শুটকি মাছসহ প্রতিটি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আদায় করছে আগের চেয়ে তিন গুন বেশি টোল (হাছিল) বেপরোয়া ও উশৃঙ্খল যুবক কর্তৃক টোল আদায় কে কেন্দ্র করে ক্রেতা বিক্রেতাদের সাথে চড়াও হওয়ার ঘটনা অহরহ।

কচ্ছপিয়ার তরকারী বিক্রেতা আলম ও মাছ ব্যবসায়ী হামিদসহ অনেকে জানান, গত ২০১৮ ইং সনে বাজার ইজারার মূল্য ছিল ৭২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অন্যান্য বছরের চেয়ে সে বছর ইজারার মূল্য বেশি হওয়ায় ইজারাদার পক্ষগণ বাজারের প্রতিটি জিনিস থেকে ২০১৭ ইং সনের চেয়ে ৪ গুন টাকা বেশি টোল (হাছিল) আদায় করছিল। ২০১৭ সনের এ বাজারটির ইজারা মূল্য ছিল ২২ লক্ষ টাকা।

এবছর রামুর বৃহত্তর এ গর্জনিয়া বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাদের হয়রানির কথা চিন্তা করে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগের পর গত জুন মাসে ২০১৯ ইং সনের জন্য বাজার ইজারার মূল্য নির্ধারণ করেন ৪৪ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা গত ১৮ ইং সনের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু ইজারাদার যুবলীগ নেতা শাহ আলম ২০১৮ ইং সনে যেভাবে ৩ গুন টোল আদায় করে ছিল এখনো সেভাবে আদায় করছে অতিরিক্ত টোল। এবছর বাজার ইজারা মূল্য কম হওয়ার পরও ইজারাদারের লোকজন নিয়মের চেয়ে ৪ গুন বেশি টোল আদায় করায় জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে ইজারাদারদের নিয়োগ করা বেপরোয়া যুবক কর্তৃক দাবীকৃত টোলের টাকা না দিলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা ঝগড়া বিবাদ। বাজারের প্রধান সড়কের দখল মার্কেটের সামনে এক ব্যবসায়ী জানান, ফাক্রির কাটা গ্রামের আলম ও শাহ আলম বাজারে আসা অসহায় নিরহ ও দূর দূরান্ত থেকে আসা বিক্রেতাদের কাছ থেকে জোর করে পেশি শক্তির ভয় দেখিয়ে ৩ গুন বেশি দামে টোল আদায় করছে। যার কারনে বাজারে দিন দিন ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম যেমন কমছে ঠিক তেমনি ভাবে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এই ভাবে চলতে থাকলে গর্জনিয়া বাজারে যে কোন সময়ে বড় ধরনের ঘটনার আশংকা করছেন ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ী শাহ মাহাম্মদুল্লহ জানান, আগের তুলনায় এবছর হাছিল কম নেওয়া কথা শুনে ছিলাম কিন্তু এখনও তাদের আগের মত ৩ গুন বেশি হাছিল দিতে হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোঃ ইসমাঈল নোমান জানান, ইজারাদারকে মুল্য তালিকা ঢাকানোর বিষয়ে বার বার বলা হলেও তারা ইউএনওর কাথা বলে চালিয়ে যাচ্ছে। কয়দিন আগে গর্জনিয়া বাজারে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানব জিন্নাতের দোকান উদ্বোধন এর সময় জেলা প্রশাসক মহোদয় বাজারের মূল্য তালিকা দেওয়ার কথা বললেও তারা তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা এখনো নেন নি। অপদিকে সড়ক পথে যে কোন পণ্য, মালামাল নেওয়ার সময়ও অতিরিক্ত টেক্স আদায় করছে। এ কারনে আমাদের ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছা।

এক গরু ব্যবসায়ী জানা যায়, গত বছর অতিরিক্ত হাছিল আদায়কে কেন্দ্র করে গর্জনিয়া বাজারে বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। তৎকালিন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গর্জনিয়া তহসিলদার ও গর্জনিয়া ফাঁড়ীর আইসির নেতৃত্বে বাজার বারে এক দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সব প্রকার মালামালের হাছিল তোলা বন্ধ ছিল।

পরে অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে ইজারাদার অতিরিক্ত টোল নিবে না বলে মোছলেকা দিয়ে, বিকেল থেকে পুনরায় হাছিল তোলেন।
স্থানীয় সচেতন মহল বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ সহ অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে উপজেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং সহ বাজারে সকল প্রকার পন্যের হাছিলের মূল্য তালিকার বোর্ড ঢাকানোর দাবী জানান।

বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে কথা বলতে বাজার ইজারাদার যুবলীগ নেতা শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, কোন জিনিস থেকে বেশি আবার কোন জিনিস থেকে কম টাকা টোল আদায় কারা হচ্ছে। তবে মূল্য তালিকার বোর্ড দেওয়ার জন্য ইউএনও কে বলতে বলেন তিনি এ প্রতিবেদককে।

এই বিষয়ে কথা বলতে রামু উপজেলার নির্বাহী অফিসার লুৎফুর রহমানের কাছ থেকে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।