অবৈধ সব বৈধ ?

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০৬:৩২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

নগরীর বাকলিয়া ও কোতোয়ালীর থানার অলিগলির চার রুটে অবৈধভাবে চলছে অন্তত পাঁচ শতাধিক ব্যাটারি চালিত রিকশা। একতা স্টিকার নাম দিয়ে একটি সিন্ডিকেট পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব ব্যাটারি রিকশা রাস্তায় নামাচ্ছে। তবে মূল সড়কে এসব রিকশা দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) হারুন-উর-রশীদ-হাযারী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। এর পরও আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওইসব ব্যাটারি রিকশা চলাচল করে থাকে। নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চলচল অবৈধ। এ ব্যপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

সরেজমিন নগরীর কোতোয়ালী ও বাকলিয়া থানাধীন আন্দকিল্লা জেমিসন রেডক্রিসেনট হসপিটাল থেকে তুলাতলী, কালামিয়া বাজার থেকে মিয়াখান নগর, রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে চকবাজারের ফুলতলা ও দিদার মার্কেট থেকে শুরু করে বউ বাজার হয়ে জামাই বাজার রোডে এসব ব্যাটারি রিকশা অবাধে চলাচল করতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে এসব রিকশা চললেও তা বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ এসব রিকশার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসব ব্যাটারি চালিত রিকশায় বেশিরভাগেরই ক্ষেত্রে ‘একতা’ নামে স্টীকার ব্যবহার করছে। অভিযোগ উঠেছে, বাকলিয়া ও কোতোয়ালী থানাকে প্রতিমাসে মোটা অংকের উৎকুচ দিয়ে এসব গাড়ি সড়কে নামিয়েছে একটি সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসিন বলেন, আমি জানিনা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অন্যদিকে বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, আমি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদি সঠিক হয় তাদের রিকশাগুলো জব্দ করা হবে এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্তা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামুন, টিপু কোম্পানী, নেজাম উদ্দিন ফাহিম, শফিক কোম্পানী, নাজিম, সোহেল, আবুল কালাম, রুহুল আমিন কোম্পানী এই চলাচলের মূল নায়ক। তাদের নির্দিষ্ট কিছু গ্যারেজ রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে এসব গ্যারেজের অধিকাংশ বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাপ্পির গ্যারেজ ও আবুল কালামের গ্যারেজে বর্তমানে এসব রিকশার চার্জ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ অফিসের ক্ষতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা নিয়ে এসব লাইন দিয়েছে। নাজিম ও সোহেল নামে দুই ব্যক্তি কোতোয়ালী ও বাকলিয়া থানা পুলিশ ও বিদ্যুৎ এর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যাটারি রিকশার চলাচলে বৈধতা নিচ্ছে। এজন্য প্রতিমাসে একটি মোটা অংকের টাকাও দিতে হচ্ছে ওইসব জায়গায়।

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা অনেকে মোবাইল বন্ধ করে দেন।এদের মধ্য মামুনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাইনে ঢুকতে হলে অগ্রিম ১ হাজার টাকা এবং মাস শেষে আরো ১হাজার। তারপর আপনাকে একতা নামে একটি স্টিকার দেওয়া হবে। এই স্টিকার লাগানো থাকলে কেউ আপনাকে ধরবেনা। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি বলেন, আপনার গাড়ি থাকলে একটু কম নেবো। এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লেখালেখি করে কি হবে। আমরা সবকিছু ম্যানেজ করে স্ট্যান্ড দিয়েছি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে নগরীতে চলাচল করে থাকে প্যাডেল চালিত রিকশা বা সাধারণ রিকশা। কিন্তু ব্যাটারি চালিত হওয়ায় এসব রিকশার চলাচলের বিষয়ে লাইসেন্স দেওয়ার কোন ক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনের নেই। অন্যদিকে সড়কে চলাচলরত যান্ত্রিক যানবাহনগুলো নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষমতা বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ)’র কাছে থাকলে ব্যাটারি চালিত রিকশার নিবন্ধনের ব্যাপারে তাদের কোন ক্ষমতা নেই।

বিদ্যুৎ অপচয়, অনিয়ন্ত্রিত গতি, পরিবেশ দূষণসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময় ব্যাটারি রিকশা আলোচনায় আসে। সম্প্রতি আদালত কর্তৃকও ব্যাটারি চালিত রিকশার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এসময় কয়েকদফা অভিযানে একটি সময় বন্ধ থাকে ব্যাটারি চালিত রিকশা। বিভিন্ন সময় রাস্তায় নামতে তৎপর থাকে ব্যাটারি রিকশার সিন্ডিকেটটি। বর্তমানে মূল সড়কে চলাচল করতে না পারলেও অলিগলির সড়কগুলোতে এসব রিকশা দেদারছে চলছে। পুলিশসহ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় এসব ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে।