বিদেশ ডেস্ক:

আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল, যার মধ্যে যুক্ত রয়েছে বন্দিদের খাওয়ার পানির বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া। বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও কমিয়ে আনতে চায় দেশটি। তাদের গোসলের সুযোগ এবং তাদের সঙ্গে খোদ ইসরায়েলি সংসদ সদস্যদের দেখা করার বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব করেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কমিটি। বন্দিদের মানবাধিকার হরণের এসব সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ইসরায়েলের পাবলিক সিকিউরিটি মন্ত্রী গিলাদ এরদান বলেছেন: ‘সন্ত্রাসীদের’ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সন্ত্রস্ত করার ‘নৈতিক দায়িত্ব’ পালনের জন্য কারাগারের পরিস্থিতি ফিলিস্তিনিদের জন্য অসহনীয় করে তোলা দরকার। অনশনের মতো কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ইসরায়েলের কিছু যাবে আসবে না। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সমালোচকরা এমন পরিকল্পনাকে মানবাধিকার হরণে ইসরায়েলের আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। তাদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন লাগামহীনভাবে নির্যাতনে করা থেকে বিরত রাখতে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন।

এরদান গত বছর ফিলিস্তিনিদের কারাজীবন কঠিনতর করে তোলার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। গত বুধবার (০২ জানুয়ারি) তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বন্দিদের কারাগারের ভেতর রান্না করার ও টিভি দেখার সুযোগ বন্ধে করে দেওয়া হবে। বন্দিদের বিরুদ্ধে কঠোর বিধানের পাশাপাশি প্যালেস্টাইন অথরিটিকে দেওয়া অর্থের পরিমাণও কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ সীমিত করার বিষয়টি ইতোমধ্যে হামাসের সঙ্গে যুক্ত বন্দিদের জন্য কার্যকর করা হয়েছে।

খাওয়ার পানির বরাদ্দ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কমিয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলো সংসদে পাস করানোর জন্য উত্থাপিত হবে। সেখানে পাস হলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এগুলো কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর কার্যকর হবে। গোসলের সুযোগও নির্দিষ্ট করা থাকবে। ইসরায়েলি সংসদ নেসেটের সদস্যদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বন্দিদের দেখা করার সুযোগ সীমিত করে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে। এতোদিন ধরে হামাস ও ফাতাহর অনুসারী বন্দিদের পৃথক কক্ষে রাখা হতো। সে বিধান বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। এরদানের মতে, এভাবে সংগঠন সূত্রে আলাদা আলাদা করে বন্দিদের রাখলে তাদের মধ্যে স্ব স্ব দলের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।

ইসরায়েলের এমন পরিকল্পনার বিষয়ে ‘প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ পার্টির’ প্রধান মুস্তাফা বারঘঘুতি বলেছেন, ইসরায়েলের সরকার এমন আচরণ করছে যেন ফিলিস্তিনিদের যেকোনও উপায়ে নিপীড়ন করা ক্ষেত্রে তাদের কোনও বাধাই নেই। ইসরায়েলকে এমন আচরণ থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে উপায় একটাই। আর তা হলো দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। তার ভাষ্য, ‘ইসরায়েল এমন আচরণ করছে, যেন দেশটি আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে।’ ‘প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স কমিশন’ এরদানের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থার প্রধান কাদরি আবুবাকের পরিকল্পিত পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।