ডেস্ক নিউজ:

টানা ১০ বছর পর আবারও লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত। একটি বাদে বাকি ১৫ আসনে পুরনোদের ওপর আস্থা রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। জেলার ১৬ আসনের আটটিতে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিজ্ঞতা ও মাঠের রাজনীতিতে চট্টগ্রামের ১৬ আসনেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটপ্রার্থীরা এগিয়ে। সে অনুপাতে অর্ধেক আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের থাকছে নতুন প্রার্থী। তবে নতুন বলেই ভোটের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বেন- এমনটি ভাবার সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠিত গত পাঁচ সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক চারটির (১৯৯১-২০০৮) ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চট্টগ্রামে আনুপাতিক হারে বিএনপির ভোট বেশি। সব মিলিয়ে এবার চট্টগ্রামে দুই জোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার মনে করেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ আসনেই আওয়ামী জোটের সংসদ সদস্যরা দুই মেয়াদে আছেন। এলাকার জনগণ ও প্রশাসনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও বেশি। সেই সুবিধা নিতে দলটি তাদের প্রার্থী তালিকায় তেমন কোনো পরিবর্তন আনেনি। তবে এর সুফলের পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। ওই সব সংসদ সদস্যের ভালো-খারাপ সবই ভোটারদের জানা। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

‘অন্যদিকে, বিএনপি ১০ বছর পর নির্বাচনে এসেছে। তাই তাদের প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন থাকবে- এটা স্বাভাবিক। তবে রাজনীতি আর ভোটের মাঠে অভিজ্ঞতার আলাদা মূল্যায়ন আছে। একেবারে আনকোরা এসব প্রার্থী মাত্র ১২ দিনে (৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন) কীভাবে ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান তৈরি করবেন তা দেখার বিষয়। সেদিক বিবেচনায় তারা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রার্থীর চাইতে প্রতীকই যে বড়’- বলেন এ বিশ্লেষক।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের আসন ভিত্তিক প্রার্থী পরিচিতি, ভোটের প্রস্তুতি, দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, ভোটের মাঠে প্রার্থীদের সর্বশেষ অবস্থান ও সম্ভাবনা এবং প্রার্থীদের নিয়ে ভোটাররা কী ভাবছেন- এসব নিয়ে জাগো নিউজ’র চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘অভিজ্ঞতায় এগিয়ে আ.লীগ, ভোটের হিসাবে বিএনপি’- এর চতুর্থটিতে আজ থাকছে চট্টগ্রাম-১৪, ১৫ ও ১৬ আসনের আদ্যোপান্ত।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসন

চন্দনাইশ উপজেলার আট ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভা এবং পাশের সাতকানিয়া উপজেলার ছয় ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসন গঠিত। এখানে ১৯৯১ সাল থেকে টানা ২০১৪ পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন অলি আহমদ। কখনও বিএনপি কখনও-বা এলডিপির হয়ে তিনি নির্বাচন করেন। অলির ক্ষমতা ও ব্যক্তিত্ব এখনও চন্দনাইশের মানুষের মুখে মুখে। পথে পথে অলি আহমদের নামে নামফলক এখনও দেখা যায়।

বিএনপি সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের উদ্যোগে চট্টগ্রামের প্রথম কর্ণফুলি সেতু, চন্দনাইশ পৌরসভা, চন্দনাইশ থেকে আনোয়ারার ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক, দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য পৃথক সওজ কার্যালয়সহ নানা উন্নয়নের চিত্র এখনও মানুষের মুখে শোনা যায়।

ctgবিগত নির্বাচনে কোতোয়ালির আসনে ভোটের হিসাব

২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বের হয়ে গঠন করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি)। এবার তিনি ২০ দলীয় জোটের চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া) আসনের প্রার্থী। এলডিপির দলীয় ছাতা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তবে এখানে দল বড় কথা নয়, চন্দনাইশে রাজনীতি বলতেই এখনও কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমকেই বোঝেন এলাকার মানুষ।

অপরদিকে, ২০১৪ সালে এখানে (চট্টগ্রাম-১৪) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এর আগে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই বছরের উপ-নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে তাকেই পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে গত পাঁচ বছরে চন্দনাইশ আওয়ামী লীগ এখন তিন ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে একটি ধারার নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী নিজেই। তাই এখন নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করাই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

স্থানীয় সামশুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অলি আহমদ এ মাঠের পুরনো খেলোয়াড়। উনি জানেন কারা তাকে ভোট দেবে এবং কীভাবে ভোট পেতে হবে। তাই এখানে আওয়ামী লীগ এক না হলে জাতীয়ভাবে পরিচিত অলি আহমদের সঙ্গে কতটুকু পেরে উঠবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

এদিকে নির্বাচনী ডামাডোল শুরুর পর আওয়ামী লীগপ্রার্থী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গ, মিছিল করে মনোনয়নপত্র দাখিল ও স্থানীয় চেয়ারম্যান–মেম্বারদের বাড়িতে ডেকে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ করেন ২০ দলীয় জোটপ্রার্থী অলি আহমদ।

সর্বশেষ শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নে অলি আহমদের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুক সনিসহ ১০ নেতাকর্মী আহত হন।

তবে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে ঘায়েল করতে অপপ্রচার চলছে। গত পাঁচ বছরে এলাকার অবস্থা অনেক বদলে গেছে। নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। উৎসবের মধ্যে ভাটা আনার জন্য আওয়ামী লীগ এবং আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি (অলি আহমদ) ঢাকায় বসে এসব অভিযোগ করছেন। গ্রামে তিনি কম আসেন। আর আমি গ্রামের মানুষের মাঝে আছি। এসব কাল্পনিক অভিযোগে ভীত নই।’

তিনি মনে করেন, ২০০৮ আর ২০১৮ এক নয়। তার আমলে চন্দনাইশে উন্নয়ন হয়েছে। শঙ্খ নদ ছিল চন্দনাইশবাসীর দুঃখ। প্রতি বর্ষায় এখানকার শত শত ঘরবাড়ি বিলীন হতো এ নদে। তবে বর্তমান সরকারের আমলে ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরির কারণে ওই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছে। আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে এলাকার লোকজন আবারও তাকে নির্বাচিত করবে বলে বিশ্বাস নজরুল ইসলামের।

এ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ৪৯ হাজার পাঁচজন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩০ হাজার ৩৬৫ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ২৮ হাজার ৬৪০ জন।

১৯৯১ সাল থেকে চার দফা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে এ আসনে চারবারই নির্বাচিত হয়েছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। নতুন করে আসন বিন্যাসের ফলে চন্দনাইশের সঙ্গে সাতকানিয়ার ছয় ইউনিয়ন যুক্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে জামায়াতের অবস্থান শক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই সবমিলয়ে এ আসেন বেশ এগিয়ে আছেন ২০ দলীয় জোট প্রার্থী অলি আহমদ।

jagonews বিগত নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের ভোটের হিসাব

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন

লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন গঠিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনকে আওয়ামী লীগবিরোধী শিবিরের ঘাঁটি মনে করা হয়। সে খরা কাটাতে ২০১৪ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক জামায়াত নেতা আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে।

বিএনপি জোটবিহীন সে নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবু রেজা নদভী। এর আগে সর্বশেষ ১৯৭৩ সালে এ আসেন জয় পেয়েছিল নৌকার প্রার্থী। বিভিন্ন সময় নানা সমালোচনার জন্ম দেয়া আবু রেজা নদভীকে এবারও দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। যদিও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের মতো আওয়ামী লীগ নেতা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য নদভীর আত্মীয়–স্বজনরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে মেনে নিতে পারছেন না। এদিকে, নদভীও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আস্থায় নিতে পারেননি।

তবে আবু রেজা নদভী সমর্থকদের দাবি, আগের সংসদ সদস্যরা এলাকার উন্নয়নে কোনো কাজ করেননি। কিন্তু ২০১৪ সালে এমপি হয়ে আবু রেজা নদভী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া নিজের প্রতিষ্ঠান ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও অনেক উন্নয়ন কাজ পরিচালিত হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে এ এলাকার মানুষ তাকেই নির্বাচিত করবে।

অপরদিকে, এ আসনে একাধিকবার জয়ী হওয়া জামায়াতে ইসলামী এবার নিবন্ধন হারিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। অথচ এর আগে তিন-তিনবার এই ধানের শীষের বিরুদ্ধেই নির্বাচনে লড়তে হয়েছিল জামায়াত প্রার্থীদের। এর মধ্যে দুবার জয় ও একবার পরাজিত হতে হয় তাদের। তবে জামায়াতের সব সময়ের প্রতিপক্ষ কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম এবার এ আসনে নির্বাচন করছেন না। তাই অনেকটাই নির্ভার জামায়াত।

তবে সংকট এবার জামায়াতের নিজের ঘরেই। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক দুই সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী ও আ ন ম শামসুল ইসলামের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে। এক বছর আগে রাজনীতিতে আধিপত্য এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, পরিস্থিতি সামলাতে একজন নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা উঠেছিল জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে।

এমনকী মনোনয়নপত্র সংগ্রহের প্রথম দিনে (১১ নভেম্বর) এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জামায়াতে ইসলামীর দুই শীর্ষ নেতা শাহজাহান চৌধুরী ও আ ন ম শামসুল ইসলামের পক্ষের লোকজন। পরে তাদের দ্বন্দ্বে দিশেহারা জামায়াত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির জাফর সাদেককে দিয়ে আরও একটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করান। যদিও সব নাটকীয়তা শেষে এ আসনে ২০ দলীয় জোট থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, জামায়াতের ঘাঁটিতে জামায়াত এখন দু’ভাগে বিভক্ত। দুই নেতার দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া জামায়াতের স্থানীয় রাজনীতিতেও। তাই এ দ্বন্দ্ব প্রভাব ফেলবে ভোটের হিসাবেও।

চট্টগ্রাম-১৫ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৮৮ হাজার ১৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ চার হাজার ১৫৮ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৯ জন।

১৯৯১ সাল থেকে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনবার জামায়াত ও একবার বিএনপি জয় লাভ করে। তাই ভোটের হিসাবে এ আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী এগিয়ে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ctgবিগত নির্বাচনে বাঁশখালি আসনের ভোটের হিসাব

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালি) আসন

একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ভোটের হিসাব নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় পক্ষ। সারাদেশে এই একটি আসন যেখানে শক্তির বিচারে দেশের চারটি বড় দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে। এ আসনে দুই জোটের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছেন শরিক দলের হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীরা। একই জোটের একাধিক প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। নানা কারণে বিতর্কিত মোস্তাফিজুর রহমানকে বাদ দিয়ে আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার গুঞ্জন ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন পান মোস্তাফিজুর রহমান। আর মনোনয়ন না পেয়ে দলের নির্দেশে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি বাঁশখালীতে মহাজোট এখন বিভক্ত। এ নিয়ে দারুণ বেকায়দায় আওয়ামী লীগ।

তবে এখানে বিরোধ শুধু মাহাজোট শিবিরে নয়, বিভক্তি এসেছে ২০ দলীয় জোটের শিবিরেও। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলেও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সেই ধানের শীষের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিয়েছে দলটি। ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মাওলানা জহিরুল ইসলাম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। জামায়াতের পক্ষ থেকেও এ আসনটি দাবি করা হয়েছিল। এজন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. জহিরুল ইসলাম।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। জহিরুলের এই ঘোষণায় জাফরুল বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জাফরুলকে জামায়াতের জহিরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান ও জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছেন। আর মাঠে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী থাকায় সুবিধা হবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজের।

জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এবারের সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের আমির জহিরুল ইসলাম জোটের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এজন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন এবং বিএনপির দুজন প্রার্থীকে হারিয়ে ৬৬ হাজার ৩৪২ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জহিরুল ইসলাম। ওইবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদটিও ছিনিয়ে আনে জামায়াত।

এবার জামায়াতের বাইরেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেক ভোটার তাকে ভোট দেবেন। জনগণ কেন্দ্রে যেতে পারলে জহিরুলের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না- মন্তব্য তাদের।

এদিকে, বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জামায়াত জোটের সঙ্গে আছে। বাঁশখালীতে আমি জোটের প্রার্থী। সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত যেখানে ঐক্যবদ্ধ, সেখানে বাঁশখালীতে বিভাজন হওয়ার সুযোগ নেই। জোটের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি সমাধান করবেন। বাঁশখালীতে আমাদের একজনই প্রার্থী থাকবেন বলে আশা করছি। কারণ, সুখে-দুঃখে আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম এবং আছি।

স্থানীয়রা ভোটাররা বলছেন, বাঁশখালীর নির্বাচনী মেরুকরণ দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এখানে ভোটের মাঠ এখন উন্মুক্ত। কে জিতবে সেটা আগে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। এখানে সবাই সবাইকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এ অবস্থায় যে কেউ জিততে পারেন। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে চার হেভিওয়েটের ভোটের ব্যবধান খুব বেশি হবে না।

বাঁশখালি (চট্টগ্রাম-১৬) আসনে মোট ভোটার তিন লাখ তিন হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৮ হাজার ৩৯৭ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৫ জন।

১৯৯১ সাল থেকে প্রতিযোগিতামূলক চার নির্বাচনে এ আসনে প্রথমবার আওয়ামী লীগ এবং পরের তিনবার বিএনপির প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী জয়ী হন। আসনটিতে বিএনপি-জামায়াতের ভোট বেশি বলে ধারণা করা হয়।

-জাগো নিউজ