ছবি: রোহিঙ্গা ছাবের

তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম :

চট্টগ্রামের বাশঁখালী ছনুয়া ইউনিয়নে নিরহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দা ছাবের আহমেদ প্রকাশ রোহিঙ্গা ছাবেরের বিরুদ্ধে। তার মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা এলাকার ব্যবসায়ীরাও। দীর্ঘ দিন থেকে কোন কারণ ছাড়া অহেতুক মামলা দিয়ে ফাঁসানোর কথা বলে অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নিজের বউকে দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজনকে মিথ্যা মামলা দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাবের আহমেদ প্রকাশ রোহিঙ্গা ছাবের চট্টগ্রাম জেলার বাশঁখালী থানার ১২ নং ছনুয়া ইউনিয়নের শুকলাল পাড়া ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তার পিতার নাম আমিনুল হক। বর্তমানে ছাবেরের তিনটি বউ রয়েছে। প্রথম বিয়ে করে নিজ এলাকা থেকে। তার ঘরে ৪টি সন্তান রয়েছে। তার সাথে ডিবোর্স না হয়েও আলাদা থাকেন তার প্রথম স্ত্রী। বর্তমানে জোছনা বিবির (৩০) সাথে সংসার করছে। তার সাথে সংসার করলেও প্রকৃত পক্ষে তাদের কোন বিয়ের কাবিন নেই। এ নিয়ে ছাবের পরিবারের সাথেও অনেকবার কথাকাটি হয়েছে। এমনকি ইসলামী শরীয়া মোতাবেক তাদের সম্পর্ককে অবৈধ বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে।

সূত্রটি আরো জানায়, কিছুদিন আগে একটি দোকান ছুরির ঘটনায় তাকে প্রকাশ্যে গণধোলাই দেওয়া হয়। তারপর এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে তার থেকে মুছলেখা নেওয়া হয়। অপমান সয্য করতে না পেরে ছাবের এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে। সেখানে চকবাজারের ছৈয়দ শাহ এলাকায় একটি ভাড়া সাসায় থাকতো। সেখানে ছাবের রিক্সা চালাতো। পরে ওই গ্যারেজ থেকে একটি রিক্সা চুরির ঘটনায় তাকে ধোলাই দেওয়া হয়। তারপর চট্টগ্রাম থেকে ছাবের টেকনাফ চলে যায়। সেখানে তরকারী বিক্রি করতো ছাবের। দীর্ঘ দিন সেখানে থাকা অবস্থায় জোছনা বিবি (৩০) নামে এক রোহিঙ্গা মহিলার সাথে পরিচয় হয়। পরে রাতে অবৈধভাবে মেলামেশা করতে গিয়ে এলাকার কয়েকজন যুবক তাকে হাতেনাতে ধওে ফেলে। ঘটনার পরের দিনে একটি সালিশী হয়। সেখানে সে জোছনাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেয়। পরে জোছনাকে নিয়ে সে বাশঁখালীর ছনুয়া তার নিজ বাড়িতে চলে আসে। বাড়িতে আসার পর ছাবের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া রোহিঙ্গা ছাবের একটি বোট ডাকাতির মামলায় ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী বলেও জানা যায়। চুরির ঘটনায় যে ব্যবসায়ীরা তার বিচার করেছিল এখন তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী জাগের হোসেন, আহাম্মদ শফি, ছৈয়দ নূর, মোহাম্মদ রিদওয়ান, মনজুর আলমসহ অনেকে ছাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, ছাবের একজন মামলাবাজ। সে এলাকায় ফিরে এসে নিজের বউ, বোনকে দিয়ে বিভিন্নজনকে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এমন একটি মামলায় আসামী করা হয়েছে আমির হোসেন (৩০) নামে এক ভ্যান গাড়ি চালককে। এমনকি মামলার কথা বলে মোটা অংকের টাকা দাবিরও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ২০১৭ সালের ৭ ফেরুয়ারী আহামদ শফি (৩৮), শাহাবুদ্দিন (৩২), মো. বেলাল (৩০) শহর মুল্লুক (৩৬) নামে কয়েকজনকে আসামী করে বাশঁখালী কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুলান ০১ চট্টগ্রামে একটি মামলা করেন ছাবেরের বোন রাবেয়া বেগম। পরে সেটি তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্ত শেষে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে পুলিশ তাদেরকে সতর্ক করে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. নাজমুল হাসান জানান, তদন্তকালে বাদির অভিযোগ সাক্ষ্য প্রামাণে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। জমি সংক্রান্ত রিবোধ হইতে সৃষ্ট আক্রোশমূলকভাবে বিবাদীদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

কথা হলে ছাবের বলেন, আমি কারো বিরুদ্ধে মামলা করিনি। আমার বউকে নির্যাতন করার অভিযোগে তিনি করেছেন। আপনি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন আমার কোন মামলা নেই। আমি সরেজমিনে এসে দেখে যান। আর যদি আপনি সুযোগ দেন তাহলে আমি দেখা করবো।

জানতে চাইলে ১২ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, আমি তাকে ঠিক চিনতে পারছিনা। আপনি ওয়ার্ড মেম্বারের সাথে কথা বলেন। জানতে চাইলে, ৫নং ইউপি সদস্য আবদুল ওয়াসেফ এ বিষয়ে বলেন, এলাকায় তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সে চুরির করার অপরাধে জন সম্মুখে তার বিচার হয়েছিল। তার পর থেকে দীর্ঘ পলাতক ছিল। রোহিঙ্গা একটি মেয়েকে বিয়ে করে এলাকায় এসে পুণরায় খারাপ কাজ করছে। নিজের বউ এবং তার বোনকে নিয়ে বিভিন্নজনকে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। মামলায় নীরহ মানুষকেও মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাশঁখালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ ( ওসি) কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কেউ যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হবে। আইন সবার জন্য সমান। যদি এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যেই তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।