জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম:

দীর্ঘদিন পুলিশের নজরধারীর পর অবশেষে নিষিদ্ধ ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ ব্যাংক চুরির সরঞ্জামাদি সহ এক দূর্ধর্ষ আসামিকে গ্রেফতার করেন।

যৌথ পুলিশের অভিযানে ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় সিএমপি কোতোয়ালী থানাধীন ইস্পাহানি মোড় এলাকা হতে আসামী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হাসান (২৮) কে গ্রেফতার করেন।

ধৃত আসামি রাউজান থানার গুজরা ইউনিয়নের পলোয়ান পাড়ার মৃত মোহাম্মদ ইলিয়াছের পুত্র বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকালীন সময়ে আসামির হেফাজত থাকা ১৪১২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

ঘটনা সুত্রে জানা যায়, গত ৩ অক্টোবর আগ্রাবাদস্থ দি সিটি ব্যাংক লিঃ, ১৮ অক্টোবর দি সিটি ব্যাংক লিঃ ও আর নিজাম রোড (জিইসি) শাখায় এবং ২৭ অক্টোবর তারিখ দি সিটি ব্যাংক লিঃ রাউজান ফতেরহাট শাখায় সঙ্গোপনে অজ্ঞাত নামা চোর প্রবেশ পূর্বক দুর্ধর্ষ চুরির চেষ্টা করে।

এসব ঘটনায় পরে সিএমপি ডবলমুরিং থানার মামলা নং-০৬ তারিখঃ ০৪/১০/২০১৮ইং ধারা-৪৫৭/৩৮০/৫১১ দঃবিঃ ০২) সিএমপি খুলশী থানার মামলা নং-৩০ তারিখঃ ২৩/১০/২০১৮ইং ধারা-৪৫৭/৩৮০/৪২৭/৫১১ দঃবিঃ ও ০৩) চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মামলা নং-১৬ তারিখঃ ২৯-১০-২০১৮ইং ধারা-৪৫৭/৩৮০/ ৪২৭/ ৫১১ দঃবিঃ দায়ের করা হয়।

সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান অতিরিক্তি পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপরাশেন) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর) বিভাগ এবং ডবলমুরিং থানা পুলিশকে চুরির ঘটনার রহস্য উম্মোচনসহ প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতারের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন।

কমিশনারের নির্দেশে মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের ৪নং টিম ইনচার্জ মোঃ ইলিয়াছ খান ও ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম মহিউদ্দিন, পিপিএম-বার ও পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ জহির হোসেন-পিপিএম এর সমম্বয়ে একটি স্পেশাল টিম গঠন করেন।

যৌথ টিম সকল ঘটনাস্থল ব্যাংক সমূহ হতে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ৭দিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান পরিচালনা করে আসামী সম্পর্কে বিপুল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ধৃত আসামিকে গ্রেফতার করে।

পরবর্তীতে আসামী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হাসান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, আসামী হাফেজ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হাসান (৩১) একজন কোরআনে হাফেজ, ক্বারী, ফাইন্যান্স একাউন্টিং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও ইমাম। দুবাইতে অবস্থানকালে মসজিদে ইমামতি চাকুরী করে এবং অবসর সময়ে আর্ন্তজাতিক ফাইনান্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করে। এরপর হতে সে অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার ও মুদ্রা লেনদেনের উপর সার্বক্ষনিক লোভ ছিল।

এ লোভের কারনে সে দুবাইতে থাকাকালে অর্জিত অর্থ তার এলাকার পরিচিতি ব্যক্তির নিকট একটি হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ করার পর পরিচিত ব্যক্তি তার অর্থ আত্মসাৎ করে। এরপর মহিউদ্দিন হাসান বেকার হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন চেষ্টাকরে বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারে নাই। পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট হতে কিছু অর্থ গ্রহণ করে ঢাকা দক্ষিনখান আশরাফ সেতু কমপ্লেক্স-এ ডেনিম কাপড়ের দোকান নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। কিন্তু কতিপয় ব্যবসায়ী তার দোকান দখল করে নেয়।

পরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। জেল হাজতে ৪ মাস থাকার পর জামিনে এসে গ্রামে চলে আসে।

কিছুদিন পর বিগত মে মাসে উত্তরায় “চাল-ডাল” নামক একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে জ্জ মাস চাকুরী করে। “চাল-ডাল” প্রতিষ্ঠানের ৬,৬০,০০০/-টাকা চুরি করে পালিয়ে আসে এবং ডবলমুরিং থানাধীন মোগলটুলী এলাকায় (আগ্রাবাদ হোটেলের পিছনে, ইয়াকুব সওদাগর লেইন, নাসির জমিদারের বাসা) ভাড়া বাসায় উঠে। ঐ বাসা হতে আগ্রাবাদ সিটি ব্যাংকে লেনদেনের উদ্দেশ্যে আসা-যাওয়া।

ব্যাংকে আসা-যাওয়ার সুবাদে চুরির পরিকল্পনা করে আসামী। কিন্তু আগ্রাবাদ ও জিইসি শাখায় দিনের বেলায় গ্রাহক সেজে প্রবেশ করে বাথরুমে প্রবেশ করতঃ সিলিং এর ভিতর লুকিয়ে থাকে। ব্যাংকের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর সে সিলিং এর উপর হতে নীচে নেমে সকল সিসিটিভি এবং এ্যালার্ম সিষ্টেম বন্ধ করে চুরির চেষ্টা করে। কিন্তু কোন ব্যাংকে সফল না হওয়ায় ভোর বেলায় বাথ রুমের এ্যাডজাষ্ট ফ্যান খোলে বের হয়ে যায়।

একই পদ্ধতিতে আগ্রাবাদ এবি ব্যাংকে প্রবেশ করে চুরির সরঞ্জামাদি সিলিং এর উপর রেখে বাথরুমে বসে থাকে। কিন্তু এবি ব্যাংকের সিকিউরিটি বাথরুমে বন্ধ দেখে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বাথরুমের উপর দিয়ে আসামীকে ভিতরে দেখতে পায়। তখন আসামী মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের কাষ্টমার মনে করে তার মুখে পানি ছিটিয়ে ও খাইয়ে তাকে স্বাভাবিক করে বিদায় করে দেয়। কিন্তু এবি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে কিছুই অবহিত করে নাই।

গ্রেফতার পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে আসামীর প্রাপ্ত তথ্য মতে এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার সিলিং হতে চুরির সরঞ্জামাদি ডবলমুরিং থানা পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলা সমূহ তদন্তাধীন রয়েছে এবং গ্রেফতারকালীন সময়ে তার নিকট হতে প্রাপ্ত অবৈধ মাদক দ্রব্য সম্পর্কে কোতোয়ালী থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।