সোয়েব সাঈদ:
চট্টগ্রামের লোহাগাড় উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (সা:) মাহফিল আগামী ১৯ নভেম্বর হতে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এটি ৪৮ তম মাহফিল। ৭

ডিসেম্বর শুক্রবার দিনগত রাতে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে মাহফিল। প্রতিবছরের মত মাহফিলকে তাৎপর্যময়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাহফিল আয়োজক ও স্থানীয়রা ইতিমধ্যে প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ড শুরু করেছেন। এ উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সম্প্রতি (২৪ আগস্ট) শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টায় চুনতি শাহ মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় চুনতি ১৯ দিন ব্যাপী সীরতুন্নবী (সঃ) মাহফিল পরিচালনা কমিটির সভাপতি, শাহ ছাহেব কেবলার দৌহিত্র শাহজাদা মাওলানা হাফিজুল ইসলাম আবুল কালাম আজাদ সভাপতিত্ব করেন।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন মাহফিল পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারি চুনতি সরকারী মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও চুনতি হাকিমিয়া কামিল (এমএ) মাস্টার্স মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাঈল মানিক, মাহফিল পরিচালনা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাদা আবদুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত, আলহাজ্ব নুর আহমদ চেয়ারম্যান, হাফেজ মাওলানা হাফিজুল ইসলাম নিজামী, দ্বীন মুহাম্মদ মানিক, চুনতি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জনু, স্মার্ট গ্রুপের পরিচালক এত আজিজ, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার জাহেদুর রহমান, লোহাগাড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, এডভোকেট মিনহাজুর আবরার, মাওলানা মুজিবুর রহমান মুজিব, কাশশাফুল হক শেহজাদ, চট্টগ্রাম ইসলামীয়া আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান, সীরাত মাহফিলের কক্সবাজার প্রতিনিধি নুরুন্নবী, কাজ্বী বশির উদ্দিন, মুছিহুল আজিম খাঁন ছিদ্দিকী, যাহেদুর রহমান, চুনতি সমিতি ঢাকার পক্ষ থেকে সাজ্জাত খাঁন, নুরুল কবির, সৈয়দ উদ্দিন সিদ্দিকী, আবু মাসুম খান, জসিম উদ্দিন কবির, কাজী আরিফুর ইসলাম, এবি একাদুর রহমান, মো: নাঈম, মো: কফিল উদ্দিন, জাহির আহমদ, কামরুল হুদা, আলী উদ্দিন, রাশেদ খান।

শাহজাদা তৈয়বুল হক বেদারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা মাহফিল সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য সকলের কাছে সর্বাত্মক সহযোগিত কামনা করেন। সভায় শাহজাদা মাওলানা আব্দুল মালেক ইবনে দিনার নাজাত মাহফিলের প্রায় ২ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

তথ্যমতে কালের পরিক্রমায় মানুষ যখন ইসলামের মূল শিক্ষার বিপরীতে শিরক, বিদয়াত ও কুসংস্কারে বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ছিল তখন দিশেহারা মানুষদের ইসলামের সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে হযরত শাহ সাহেব কেবলা (রা:) এই মাহফিলের গোড়াপত্তন করেন। হযরত শাহ আহমদ সাহেব কেবলা (রা:) দল-মত আর সংকীর্ণতার উর্ধে ছিলেন। এ কারনে দেশের বিভিন্ন এলাকার বরণ্যে আলেমেদ্বীন সহ সর্বস্তুরের ধর্মপ্রিয় মুসলিম জনতা দল-মত নির্বিশেষে এ মাহফিলে এসে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন।

উল্লেখ্য ঐতিহাসিক এই সীরাত মাহফিল গতানুগতিক ধারার কোন মাহফিল নয় বরং এটি সাধারণ মানুষদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য উন্মুক্ত এক শিক্ষাকেন্দ্র। মাহফিলে দেশের বিভিন্ন জায়গার সরকারি ও কওমি ধারার আলেমরা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কোরআন ও হাদিসের আলোকে সারগর্ভ আলোচনা করে থাকেন। এই মাহফিলে মাসয়ালা মাসায়েল সহ সময়োপযোগী যুগ জিজ্ঞাসার জওয়াব দেয়া হয়। এরমধ্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তথা হায়াতে জিন্দেগির পুরো বিষয় সহ বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া হয়।

এদেশে সীরাতুন্নবী (স.) মাহফিলের তিনিই ছিলেন মুজাদ্দিদ বা নতুন উদ্ভাবক।১৯৭২ সাল থেকে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জন্মের মাস পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে তিনিই প্রথম সীরাতুন্নবী (স.) মাহফিলের আয়োজন করেন। সেই থেকে নিয়মিত এ মাহফিল প্রতিবছর সফলভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

১৯৭৯ সালে ১৫ দিনের কর্মসূচির ভিত্তিতে মাহফিলে সীরাতুন্নবী (স.) এর কার্যক্রম আরম্ভ হয়। শাহ সাহেব হুজুর মাহফিলের শেষ পর্যায়ে দুই দফায় দুই দিন করে বাড়িয়ে একে ১৯ দিনের মাহফিলে রুপান্তর করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সীরাতুন্নবী (স.) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

১৯৮৩ সালে শাহ সাহেব হুজুরের ইন্তেকালের পর থেকে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এ মাহফিল শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে আয়োজন অব্যাহত রয়েছে। সর্বস্তুরের মুসলিম ধর্মপ্রাণ জনতা একে হুজুরের বুজুর্গীর বড় নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

প্রতি বছরের মত মাহফিলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পবিত্র জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক ও বিভাগ এবং তাঁর আনীত পবিত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলামের জরুরী বিভিন্ন বিষয়ের উপর সারগর্ভ আলোচনা করবেন শতাধিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ আলেমেদ্বীন।

আয়োজনকরা জানিয়েছেন, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং দীর্ঘকাল (১৯ দিন) ঐতিহাসিক এ সীরাতুন্নবী (স.) মাহফিল আয়োজনের একমাত্র উৎস আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক জনতার আর্থিক ও কায়িক সহায়তা। এজন্য এবারও মাহফিল আয়োজনে সকল ধর্মপ্রিয় মানুষের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।