জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম :

এক দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মেয়ে ডাক্তারী পড়তে চলে যায় চীনে। সূদুর চীন দেশ হতে ফিরে ঘটালো এক ভয়ানক হত্যাকান্ড।

ডাঃ রুকসানা কাউকে না জানিয়ে চীন থেকে ফ্লাইটের রিটার্ন টিকেট নিয়ে এলো।

তার প্রাক্তন স্বামীর সাথে একটি হোটেলে উঠলো।

ঘুমন্ত অবস্থায় প্রাক্তন স্বামীকে সে জবাই করলো। ধারালো ছুরি দিয়ে পোচ দিতে দিতে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলল।

ঠান্ডা মাথায় প্রাক্তনের কাটা মাথাটা ব্যাগে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল।

অতঃপর মস্তকবিহীন লাশ নিয়ে হোটেল ওয়ালা পড়লো বিপাকে। থানা, পুলিশ, মামলা, তদন্ত, রহস্য ঘণিভূত হল।

মূল ঘটনা জানা যায়, গত ১৬আগস্ট বেলা অনুমান ৩টার সময় নগরীর খুলশী থানাধীন ফয়’সলেকস্থ লেকসিটি মোটেল ফাইভ নামক হোটেলের ২য় তলার ২০৩ নং কক্ষে মোঃ মাইন উদ্দিন নামে হোটেলের এক বোর্ডার খুন হয়েছে মর্মে খবর পাওয়া যায়।

এমন খবরে তড়িগড়ি করে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোঃ আব্দুল ওয়ারীশ’র নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোঃ মিজানুর রহমান এর নেতৃত্বে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামী জোন) মোঃ সোহেল রানা, সিএমপি’র খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মহিবুর রহমান, এসআই/রূপক কান্তি চৌধুরী, এসআই/মোঃ নোমান, এসআই/মোঃ নূর উদ্দিন, এএসআই/মোঃ হিরণ মিয়া, সঙ্গীয় নারী পুলিশ সদস্য সহ উক্ত আবাসিক হোটেলে উপস্থিত হয়ে হোটেলের রেজিষ্টার পর্যালোচনা শুরু করেন।

পরে জানা যায়, ১৬ আগস্ট রাত ০১:৩০ ঘটিকায় রোকসানা আক্তার পপি (২২) নামক একজন মেয়ে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) কে সাথে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে উক্ত হোটেলের উক্ত কক্ষ ভাড়া নেন।

রুমে অবস্থানকালীন মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) কে কক্ষের ভিতর হত্যা করে পালিয়ে যায় মর্মে জানতে পারেন।

পরবর্তীতে সিআইডি ক্রাইমসীন ইউনিট, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অফিসার ফোর্সদের সহায়তায় ঘটনাস্থল হতে বস্তুগত আলামত এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছোরা ও চাপাতি সহ হোটেলের কক্ষের ভেতর সংযুক্ত বাথরুমে রক্ষিত বালতির মধ্য হতে হত্যাকান্ড সংঘটনকালে আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) এর পরিহিত রক্তমাখা কামিজ, মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) এর পরিহিত জিন্স প্যান্ট, হোটেল এর রক্তমাখা ০২টি বেডশীট সহ অন্যান্য আলামত জব্দ, মৃত ব্যক্তির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত সহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন পুলিশ।

ইতিমধ্যে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) এর বড় ভাই মোঃ জাফর উদ্দিন (৩৩) থানায় হাজির হয়ে উক্ত রোকসানা আক্তার পপি (২২) এর বিরুদ্ধে খুলশী থানায় এজাহার দায়ের করলে খুলশী থানার মামলা নং-১৯, তারিখ-১৭/৮/২০১৮ইং, ধারা-৩০২/২০১ পেনাল কোড রুজু করে মামলার তদন্তভার এসআই/রূপক কান্তি চৌধুরীর কে দায়িত্ব দেয়।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে গত ১৭আগস্ট ১০:৪৫ মিনিটে খুলশী থানাধীন আলফালাহ্ গলি এলাকা হতে হত্যাকান্ড সংঘটনকারী আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

এমনকি আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) এর হেফাজত হতে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) এর ব্যবহৃত ০১টি নকিয়া মোবাইল সেট, ০১টি কালো রংয়ের ম্যানিব্যাগ, ০১টি রাডু কোম্পানীর হাত ঘড়ি সহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিগত ৬ বৎসর পূর্বে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন এর সাথে আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) এর বিবাহ হয়।

বিবাহের ০২ বৎসর পর পারিবারিক বিরোধ ও দাম্পত্য বিরহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০১৫ ইং সালে উক্ত আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) ডাক্তারী পড়াশুনার জন্য সুদূর চীন দেশে পাড়ি জমান।

তাদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাকালে উভয়ের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবিসমূহ সম্প্রতি বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) ফেসবুকে ফেইক আইডি তৈরী করে উক্ত ফেইক আইডি হতে আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) এর ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করে।

এরই প্রেক্ষিতে আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে গত ১৫আগস্ট তার আত্মীয়-স্বজনদের অজান্তে থাই এয়ারওয়েজ এর ফ্লাইট নং-TG 339 এর মাধ্যমে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশে এসে।

১৬ আগস্ট রাত ০১:৩০ মিনিটে মৃত মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) কে সাথে নিয়ে খুলশী থানাধীন ফয়’সলেকস্থ লেকসিটি মোটেল ফাইভ নামক হোটেলের ২য় তলার ২০৩ নং কক্ষ ভাড়া নেয়।

যেখানে অবস্থান করাকালীন হোটেলের ভিতর খাটের উপর মোঃ মাইন উদ্দিন (৩০) কে গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে উপূর্যপরি কুপিয়ে জবাই করে দেহ হতে মাথা বিচ্ছিন্ন করে।

এমনকি বিচ্ছিন্ন মাথা পলিথিনের মধ্যে ঢুকিয়ে হোটেলের কক্ষের ভিতর রক্ষিত প্লাস্টিকের ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়।

এবং রাত ৮টায় কৌশলে হোটেল থেকে পালিয়ে যায় মর্মে স্বীকার করে। এজাহার নামীয় গ্রেফতারকৃত আসামী রোকসানা আক্তার পপি (২২) আদালতে হাজির করা হচ্ছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান।

এভাবে সে সাবেক স্বামীকে খুন করতে চীন দেশ হতে থাই এয়ারওয়েজে বাংলাদেশ আসে বলে তথ্য যায় পুলিশ।