মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম:
১২ আগস্ট রোববার বেলা সাড়ে ১২টা। সাতকানিয়া উপজেলার সদর এলাকায় দেওয়ানহাট বাজারে কলেজ রোড়ে যানজট লেগে আছে। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে সামনে গিয়ে দেখা গেল বিশাল আকৃতির হাতি। হাতির ওপর বসে আছেন মাহুত। হাতি দাঁড় করিয়ে  দোকান বা গাড়ি থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করছেন মাহুতেরা। শুধু যানবাহন থামিয়ে নয়।
সড়কের পাশে দোকানগুলোতে শুঁড় বাড়িয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে জোরপূর্বক মাহুতরা আদায় করছে টাকা। গাড়ির চালক ও ব্যবসায়ীরা টাকা না দিলে হাতির শুঁড় বাড়িয়ে রাখে। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা দিচ্ছেন তারা।

একইদিন বিকাল ৫টায় দেখা যায়, ওই হাতির উপর বসে আছে চার যুবক। তাঁরা হাতি দিয়ে কেরানীহাট বান্দরবান সড়কের দুই নম্বর ব্রিজ এলাকায় যানবাহনগুলোকে থামিয়ে দিচ্ছে। যানবাহন থামিয়ে চালক কিংবা যাত্রীর কাছে শুঁড় বাড়িয়ে দিচ্ছে হাতিটি। যাত্রী বা চালক টাকা দিচ্ছেন। টাকা নেওয়ার পর অন্য যানবাহনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাতিটি। কিছুক্ষণ গাড়ি থেকে টাকা নেয়ার পর একটু পূর্বের দিকে হেঁটে কিছুদুর গেলে আবার আটকানো হয় গাড়ি। টাকা না দিলে সহজে ছাড়ছে না কাউকেই। হাতির এমন চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখতে পিছনে ছুটছে শত শত ছেলে। এছাড়া আশে পাশের বাড়িগুলা থেকে মহিলারাও বের হয়ে এসে দেখছিল হাতি এই দৃশ্য।

এসময় আজগর হোসেন নামে পরিচয় দেয়া হাতির মাহুতের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে সে জানায়, হাতির জন্য দৈনিক অনেক টাকার খাবার লাগে। হাতির খাবার জোগাতে টাকা তুলছে। কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা নিচ্ছি না।

সে আরো জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সার্কাসে খেলা দেখার জন্য গিয়েছিল। সার্কাস শেষে এখন হাতিটি নিয়ে তারা চারজন ঢাকায় ফিরে যাচ্ছিল। অভিনব এই চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সিএনজি অটোরিকশা চালক নাসির উদ্দিন বলেন, হাতির ওপর চারজন যুবক বসা ছিলেন। বিকালে ভাড়া নিয়ে বাজালিয়ায় যাওয়ার সময় ডেলিপাড়া এলাকায় গেলে হাতিটি সড়কে দাঁড়িয়ে শুঁড় দিয়ে তার গাড়িটি আটকায়। ভয় পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে ২০ টাকা বের
করে দিই। বাস চালক মোস্তফিজুর রহমান বলেন, সড়কে হাতি দিয়ে চার যুবকের এটা কোন ধরনের চাঁদাবাজি? কেউ তাদের এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেনা। হাতি শুঁড় বাড়িয়ে দিয়ে টাকা নিচ্ছে তারা। ২০ টাকার কম দিতে চাইলে হাতি
নিচ্ছিল না। হাতির মাহুতেরা এমনভাবেই হাতিদের চাঁদাবাজির প্রশিক্ষণ দিয়ে রেখেছেন বলে তাঁর ধারণা। যানবাহন ও দোকানে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করায়

ক্ষোভ প্রকাশ করে কেরানীহাটের নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আজ সারাদিন চার যুবক উপজেলার অনেক দোকান ও যানবাহনে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে যে হারে আজকে তারা চাঁদাবাজি করেছে
এটি বন্ধ করার কেউ নেই?

এ ব্যাপারে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, হাতি দিয়ে টাকা তোলার বিষয়টি প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনেছি। এটি কেউ জানায়নি। এখন যদি কোথাও টাকা তোলার খবর পায়, এদের বিরুদ্ধে আইনগত
ব্যবস্থা নেয়া হবে।