তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে আইনজীবীর স্ত্রী বিবি রহিমা (২৮) হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নগরীর চান্দগাঁও থানায় নিহতের মা বেদুরা বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। দুপুরে দিকে নিহতের মা বেদুরা বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল বশর। তিনি জানান, তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা এ হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। তিনি বলেন, তার মরদেহ উদ্ধারের সময় তার হাত পিছন থেকে বাঁধা ছিল। গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধারনা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি চার মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলেন। ওসি আরো বলেন, ওই ঘটনার একমাত্র প্রত্যেক্ষদর্শী রহিমার সঙ্গে তার ২ বছর ৯ মাস বয়সী শিশু হৃদি। তিনি (হৃদি) বলেছেন, দুইটা আংকেল তার মাকে মারছে, আর ছিল্লা ছিল্লি করছিলো।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মিজানুর রহমান জানান, পারিবারিক দ্বন্ধ, সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত বিরোধ এ তিন বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের পর পুলিশের ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ হত্যার তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। তাদের সঙ্গে কারও পারিবারিক দ্বন্ধ, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্ধ ও ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছি। ডাকাতি বা লুটপাটের কোনো বিষয় বলে মনে হচ্ছে না। তবুও আমরা সব বিবেচনায় রাখছি।

জানা যায়, বিবি রহিমা চট্টগ্রাম কোর্টের আইনজীবী এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকী জুয়েলের স্ত্রী। গত বুধবার (০১ আগস্ট) সকালে পুলিশ চান্দঁগাও থানার নিজ বাড়ি থেকে বিবি রহিমার হাত বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার সময় রহিমার সঙ্গে তার ২ বছর ৯ মাস বয়সী শিশু হৃদি ছিল। মাকে হত্যার পুরো ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মেয়ে হৃদি। যে বাড়িতে খুন হন বিবি রহিমা সে বাড়িতে আরিফ ও ইয়াছিন নামে দুইজন ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া থাকতেন। তারা পেশায় রংমিস্ত্রি। হত্যাকান্ডের পর থেকে তাদের খুঁঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সন্ধ্যায় তারা বাসায় আসেন। পুলিশ তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চান্দগাঁও থানায় নিয়ে যায়। আরিফ ও ইয়াছিন এখন পুলিশ হেফাজতে আছেন বলে জানান ওসি আবুল বশর।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের শেষের দিকে এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকী জুয়েল আগেও একটি বিয়ে করেছিলেন। অন্তসত্ত্বা থাকাবস্থায় সেই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকী জুয়েলের। সেই ঘরে ৫ বছর বয়সী একটি বাচ্চাও রয়েছে। এদিকে আইনজীবী এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকী জুয়েল ও তার স্ত্রী বিবি রহিমার মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল বলে স্থানীয় ও আত্মীয় সূত্রে জানা গেছে। বুধবার সকালেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। বিবি রহিমার বাড়ির পাশে থাকেন তার দেবর সানাউল হাসনাত রাসেল ও তার পরিবার। তবে হত্যার বিষয়টি তারা টের পাননি বলে দাবি তাদের।

এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকী জুয়েল বিকেল ৩টার দিকে আদালত থেকে এসে প্রথম স্ত্রীর মরদেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন বলে দাবি তার। এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকী জুয়েল বলেন, বাড়ির ভেতরে ঢুকে স্ত্রীকে হাত পেছন থেকে বাঁধা অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখি। হাতগুলো ওড়না দিয়ে বাঁধা। বাড়ির জিনিসপত্র এলোমেলো ছিল। বাসায় একটি মনিটর ছিল, সেটি নেই।

বিবি রহিমা হত্যার তদন্তে এ বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্তে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা। বিবি রহিমার দেবর সানাউল হাসনাত রাসেল ও শামসুন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।