জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম:

চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের রশিদিয়াপাড়া ঘাট এলাকায় রবিবারে এক যুবকের লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা।

কর্ণফুলী নদীর ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ছে যুবকের সারা শরীরে। তার সমন্ত শরীর ফুলে গেছে। মুখমন্ডল বেয়ে সারা শরীরে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, দুই হাত ও পায়ের তালু সাদা হয়ে গেছে।

হাত ঘড়ির সাথে প্লাস্টিকের ব্রেসলেট, পড়নে পাঞ্জাবি এবং জিন্স প্যান্ট যুবকের শরীরে।

যুবকের মর্মান্তিক এই দৃশ্য দেখছে উপস্থিত শত শত উৎসুক জনতা।

সকাল ১০টার দিকে খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যান।

পরে লাশটি উদ্ধার করে পাড়ে তুলেন। লাশটি উল্টিয়ে দেখেন তার চোখ, ঘাঁড়, নাক, টুটিসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

পাঞ্জাবির গায়ে লেগে রয়েছে রক্তের দাগ। এছাড়াও তার পকেট থেকে মোবাইল, কাগজপত্র ও একটি টিপ ছুরি পাওয়া যায়।

পরে খবর পাওয়া যায় যুবকের নাম মো. রাজু (২৪)। সে উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ব্রহ্মোত্তর এলাকার নুরুল আলমের পুত্র।

গত শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল বলে তার স্বজনরা জানান।

দুপুর ১টার দিকে সুরতহাল আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, নিহত রাজু ছোটবেলা থেকে তার নানার বাড়ি উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের আধুরপাড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের বাড়িতে থাকতো। বন্ধুদের সাথে গাছের ব্যবসা ছিল তার। গত শুক্রবার দুপুরে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তার নিজ বাড়ি ব্রহ্মোত্তর থেকে ভাত খেয়ে বের হয় সে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে সহ তার অপর দুই বন্ধু চন্দ্রঘোনা আধুরপাড়া এলাকার মৃত আইয়ুব আলী মল্লার পুত্র মো. মোবারক (২৫) ও মৃত মো. ইসমাঈলের পুত্র মো. রহিম (২৩) কোদালা ইউনিয়নের বাজারঘাট এলাকায় গিয়ে ঐ এলাকার মো. করিম ওরফে হিরোইনসি করিমের সাথে দেখা করে।

সেখানে তারা একসাথে মদ পান করে। মদ্যপ অবস্থায় তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। হিরোইনসি করিমের সাথে এই তিন বন্ধুর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এক পর্যায়ে হিরোইনসি করিম বাজারে উঠে তাকে ছুরি দিয়ে মেরেছে বলে এলাকার লোকজনদের ডাকাডাকি করে।

এলাকার লোকজন একত্রিত হয়ে তাদের তিনজনকে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে বেধম মারধর করে। খবর পেয়ে কোদালা বিট পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মো. রহিমকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও নিখোঁজ থাকে রাজু ও মোবারক।

ঘটনার একদিন পর শনিবার কর্ণফুলী নদীর বালুগোট্টা এলাকায় নদীর পাড় থেকে উলঙ্গ ও আহত অবস্থায় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে ঘরে পৌছে দেন মো. মোবারককে।

এই বিষয়ে ঘটনার শিকার মো. রহিম বলেন, ‘এলাকার লোকজন ঘাটে এসে কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদেরকে লাঠি এবং বাঁশ দিয়ে বেধম মারধর করতে থাকে।

আমরা বাঁচার জন্য কর্ণফুলী নদীতে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করি। পরে নদী থেকে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।’

এদিকে দুইদিন ধরে নিখোঁজ রাজুকে খুঁজতে থাকে স্বজনরা। বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায় না তাকে।

পরে নিখোঁজের দুইদিন পর রবিবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে কর্ণফুলী নদী থেকে তার লাশ পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা ধারণা করছেন, তাকে নৃশংসভাবে খুন করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

নিহতের মামা মো. জাহেদ বলেন, ‘আমার ভাগিনাকে দুইদিন ধরে অনেক খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না। দুইদিন পর স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়ে মরিয়মনগর ইউনিয়নের রশিদিয়া পাড়া ঘাটে গিয়ে আমার ভাগিনার লাশ দেখতে পায়।

লাশটি খুবই বিভৎস এবং শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে মেরে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’