নঈম আল ইস্পাহান
                    (১)
রিমি আমার সাথেই পড়ে, দেখতে খুব
সুন্দরী।বিশেষ করে তার চুল গুলো খুব জটিল।কেননা,সব সময় তার চুল সিল্ক করা থাকে।ক্লাসের প্রথম দিনেই আমি তার চুলের প্রেমে
পড়েছিলাম।এমন অনেকদিন গেছে রিমির চুল দেখে দেখেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি।নিয়মিত ক্লাস করার বদ অভ্যেস নেই আমার।শুধুমাত্র রিমিকে একবার দেখার জন্য হলেও ক্লাসে
যেতে আমি বাধ্য।সেদিন আমার ছোটবোন কে রিমির একটা ছবি দেখালাম।ক্লাস চলাকালে চুরি করে তুলেছিলাম।আমার ছোট বোন রীতিমত
বকা দিয়ে বললো,মেয়েদের চুলের ছবি উঠিয়েছো?
তাকে বললাম,দেখ না কত্ত সুন্দর চুল।
-ভাইয়া,এসব পার্লারে করা যায়।পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।
:পাঁচ হাজার টাকা?
আমি মনে মনে খুব কষ্ট পেলাম।মানে,যে
চুলের জন্য এত পাগলামি তা অরজিনাল
নয়?তাও আবার এত খরচা..যদি কখনো
আমাকে দিতে হয়,কোথায় পাবো?
                        (২)
রিমির সাথে কখনো সরাসরি কথা বলার সাহস হয়নি।তাই ফেসবুকে রিমিকে অনেক খুঁজলাম।তার নামে যত আইডি আছে সবগুলোতে এড পাঠালাম।কিন্তু আসল রিমিকে কোনভাবেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।হঠাৎ একদিন বুদ্ধি করে ক্লাসের এক মেয়ে বন্ধুর ছবিতে কে কে লাইক দিলো চ্যাক করে দেখলাম।ওই মেয়ে ভালোই স্টাইলিশ ছিল।ছবিতে চারশ লাইক।এক এক করে ছবির সকল লাইকার কে চ্যাক করলাম।অনেক কষ্টে অবশেষে রিমির আইডি খুঁজে পেলাম।আমি নিশ্চিত ছিলাম রিমি লাইক দিবে।কেননা তারা দুজন সব সময় একসাথে থাকে।ভয় হচ্ছিল,তার পরও রিকোয়েষ্ট দিলাম।কিন্তু পাঁচ দিনেও সে রিকুয়েস্ট এ্যাকসেপ্ট করলনা।অবশেষে মেসেজ দিলাম।
“আমাকে নিশ্চয়ই আম কিংবা কাঁঠাল মনে হয়েছে তোমার।তা নাহলে এভাবে ঝুলিয়ে রেখেছো কেন?তুমি হয়তোবা জানোনা,বন্ধুদের রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট না করাও একটা ক্রাইম”
সেদিন দুপুরেই রিমি আমার রিকোয়েষ্ট এ্যাকসেপ্ট করল।
                      (৩)
পরেরদিন,ক্লাসে রিমির সাথে দেখা হলো।সে দেখতে ঠিক যতোটা অহংকারি মনে হয় বাস্তবে তেমনটা মোটেও নই।খুব সুন্দর করেই আমার সাথে কথা বলল।শুরুতেই জানতে চাইলাম রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করতে দেরি হলো কেন?সে বলল,তার আইডিতে দিনে দুই-তিনশ করে রিকুয়েষ্ট আসে।কিন্তু,আমার রিকুয়েস্ট সে ইচ্ছে করে ঝুলিয়ে রাখেনি।আমাকে বিশ্বাস করানোর অনেক চেষ্টা করলো।আমরা প্রায় বিশ মিনিট মতো আড্ডা দিলাম।চার পাশের পরিবেশ খেয়াল করে দেখলাম,অনেক ছেলে আমার দিকে চোখ বাঁকিয়ে তাকাচ্ছে।সবার চোখে রাগ।তারা কেউ চাইনা,আমি রিমির সাথে কথা বলি।কিন্তু আমিও তাদের মতো একজন ক্যান্ডিডেট।লাইন চালু রাখতেই হবে।প্রথম পরিচয়েই নির্লজ্জের মত নাম্বার নিলাম।বললাম,রাতে কল দিবো।রিমি কোন কিছুতে না করলোনা।তাহলে কি সেও আমাকে সামথিং সামথিং…সব ছেলেই এটুকুতে একটি মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড ভাবতে শুরু করে।আর,আমি কেন ভাববোনা?
                      (৪)
রিমির সাথে বন্ধুত্বটা বেশ জমেছে।এক সন্ধ্যাবেলা চা খেতে খেতে তার কথা হচ্ছিলো।তাকে বললাম-তুমি কী প্রেম করো?
-না,ওসব আমাকে দিয়ে হবেনা।
-কেন হবেনা?অনেককেই দেখলাম তোমার জন্য পাগল।কত ঘোরাঘোরি করে তোমার আগেপিছে।
-ওসবে আমার কিছু যায় আসেনা।আজকাল কেউ প্রেম করে নাকি?
-কী বলো?সিক্সের মেয়েরা ও এখন প্রেম করে।
-আমি করিনা।আমার ভালো লাগেনা।
-তুমি কী তাবিজে বিশ্বাস করো?
-না,ওসবে আমার কোন বিশ্বাস নেই।
-রিমি,গত মাসেই আমাদের পাড়ার এক মেয়ে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছে।
-কেন?
-প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় সে এক ছেলেকে থাপ্পড় মেরেছিল।ছেলেটা অপমানের শোধ নিতে তাবিজ করেছিল।
-আমি এসব বিশ্বাস করিনা।
-তুমিও কি কাউকে মেরেছো?
-আরে না।আমি কেন শুধু শুধু কাউকে মারতে যাবো।
-জানো রিমি,আমার এক দূরের বোনকে এক ছেলে তাবিজ করে তার জন্য পাগল বানিয়েছিল।সে এখন ওই ছেলে ছাড়া অন্য কিছু বোঝেনা।আমার এক কাছের বন্ধুকে অন্য এক মেয়ে তাবিজ করে বিয়ে করে ফেলেছে।ছেলের পরিবারের সে কী কান্না!
-এসব ভুয়া।
-সব সত্যি।তুমি তো অনেক ছেলের প্রেমের প্রস্তাব না করেছো।তারাও যদি তোমাকে তাবিজ করে প্রতিশোধ নিতে চাই?
-কিছু করতে পারবেনা।আর এমনিতে এসব আমি বিশ্বাস করিনা।
-করে দেখাবো?আমার পরিচিত একজন এসব করে।ফ্রিতে করে দিবে।
-তুমি কেন করবে?
-বিশ্বাস হওয়ার জন্যে।
-কোন দরকার নেই।
-ভয় পাচ্ছো?
-হুম একটু..এসব থেকে বাঁচার কোন উপায় আছে?
-মনে হয়না আছে।তবুও জেনে বলবো।
                         (৫)
খুব সকালে রিমি ফোন করে বলল,তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে যেতে।আমিও তাড়াহুড়ো করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হলাম।রিমিকে কলেজ গেইটেই পেলাম।আজ তাকে একটু চিন্তিত মনে হচ্ছে।কিন্তু,খুব সুন্দর লাগছে।আসলে,সকালবেলা প্রতিটি মেয়েই সুন্দর।রিমি ও তার ব্যাতিক্রম নই।
-রিমি কেমন আছো?
-এই তো ভালো।তুমি কেমন আছো?
-আমি ও ভালো।তোমাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে।
-হুম,একটু টেনশানে আছি।কাল যেভাবে ভয় দেখিয়েছো।
-আরে ভয় পেয়োনা।সমাধান আছে আমার কাছে।তবে দাঁড়িয়ে না।চলো কোথাও বসি।
রিমিকে নিয়ে কলেজের মাঠে গিয়ে বসলাম।
-তো,তোমার সমাধান গুলো কী এখন বলবে?
-হুম,বলব।
-প্লিজ এখন বলো,টেনশানে আছি।
রিমি সামান্য বিষয়ে এতোটা ভয় পাবে কল্পনায়ও ভাবিনি।মেয়েরা একটু ভীতু স্বভাবের হয় তা বুঝলাম।
-রিমি,দুটো উপায় আছে।প্রথমটা হচ্ছে,তুমি সকলের প্রপোজ একসেপ্ট করে ফেলো।তাহলে আর কোন শত্রুই তোমার থাকবেনা।
-কয় জনের প্রেমিকা হবো? প্রেমিকের তো বন্যা বয়ে যাবে।সেটা কখনোই সম্ভব না।মানুষ কী ভাববে?তুমিও না আর সবসময় ফান করো।
-তাহলে দ্বিতীয়টা ফলো করতে হবে।
-হুম,বলো তাড়াতাড়ি।
-রিমি,তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
-কী?
-গোলাপ!
-ধন্যবাদ।গোলাপ আমার খুবই পছন্দের।
– বাড়িতে ফুটেছে।ভাবলাম তোমার ভালো লাগবে তাই নিয়ে আসলাম।
-খুব ভালো করেছো।কিন্তু বাগান থেকে ফুল না ছিঁড়লেও পারতে!
-পারতাম,কিন্তু আমারই তো বাগান।নিজে অনেক কষ্টে বাগানটা করেছি।
যদি কথা গুলো আমার ছোটবোন শোনত,ইজ্জতের ফালুদা বানাতো।কিন্তু মহান ব্যক্তিরা বলেছেন,মেয়ে পটানোর সময় একটু আধটু মিথ্যে বলা যায়।
-তাই নাকি?তাহলে তো তুমি অনেক কর্মঠও সৌখিন।যে তোমাকে বিয়ে করবে সে খুব সুখী হবে।
-এখানে বউয়ের কথা আসলো কেন?
-বিয়ে করবেনা তুমি?
-কিভাবে করবো,এখনো তাকে পটানো শেষ হয়নি।
-কাকে?
-তাকে!
-আচ্ছা সমস্যা নেই,তুমি পটাও।পরেরটা বলো।
-একবার,আমার পরিচিত একজনকে বলতে শুনেছিলাম,যদি তুমি সকলের মধ্য থেকে যে কোন একজন কে ভালোবাসো তাহলে আর কোন সমস্যা হবেনা।
-কাউকে ভালো না বেসে উপায় নেই?
-না,ভয়ানক তাবীজের কবল থেকে বাঁচতে হলে প্রেম করতেই হবে।
-কিন্তু,আমি তো প্রেম করব না ঠিক করেছি।
-তাহলে কিছুই করার নেই।তাবীজ তোমাকে শেষ করে দিবে।
রিমিকে খুব ভীতু মনে হলো।সে কিছু একটা ভাবছে।আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
-ঠিক আছে।একজনকেই ভালোবাসবো।সে একজনকে পাবো কোথায়?
-কোথায় পাবে মানে?সে তোমার আশেপাশেই আছে।
-মানে?
-না,ইয়ে,মানে…..
-এখন বুঝলাম।তাবিজের রহস্যও গোলাপের স্টোরিই বা কি।সব কিছু ভালোই বুঝিয়েছো।
-কিছুই বুঝোনি।
-সব বুঝেছি।
-কী বুঝেছো?
-যা আশেপাশের মানুষ বুঝাতে চাই।
আমি একটু ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম,তাবীজের কি কোন প্রভাব পড়েছে?
রিমি বলল,মনে হয় আমারও আজকাল একটু,একটু তাবীজের প্রভাব পড়ছে।কে যেন আমাকে তাবীজ করেছে….
রামু,কক্সবাজার।