এহসান আল-কুতুবী:
প্রথমত : একটি আদর্শ ও লক্ষ্যকে বুকে ধারণ করে রাজনীতিতে আসে বেশ আর কম সবাই। আবার দলের ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও খ্যাতির ইতিহাস দেখে দলের প্রধানদের ভালবেসেও রাজনীতিতে পদার্পণ করা হয়। তবে, সবকিছুর সাথে একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি জড়িত। আর তা হল স্বার্থ। দলের আদর্শে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বড় বড় পদবী দখলের মাধ্যমে নিজের ব্যবসা-বানিজ্য ও সমাজে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলাটা ঘুমে চেতনে দেখা স্বপ্নের বাস্তবায়ন। অবশ্যই সবাই দলের আদর্শ মেনে নেতা হতে পারে তা নয়। কেউ কেউ টাকার জোরে নেতা হয়ে যায় তা নিশ্চয়ই মেনে নিতে হবে। ফলে, টাকায় পদবী কেনা নেতাদের কারনে দলের আদর্শবান, ত্যাগী ও আসল চেতনাধারীরা অবহেলা ও অবমূল্যায়নের শিকার হয় প্রতিনিয়ত।

কেননা, এসব নেতাদের লক্ষ্য শুধু দলের পদ পদবী ব্যবহার করে আরও টাকার মালিক হওয়া। তাদের কাছে নেই কোন নেতা-কর্মীর প্রতি ভালবাসা, নেই কোন দায়িত্ববোধ। এসবে দলের ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের নজর রাখতে হবে।

দ্বিতীয়ত : দেশের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান, সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, বিভাগীয় বা জেলা শহরের উন্নয়ন কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে থাকা নেতাদের এসব পদের জন্য মনোনয়ন না দেওয়ার নিয়ম করা খুবই জরুরী। কেননা, একটি দলের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকে যারা দলের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দেয়। তাদেরকে কেউ টাকা বা লোভ দিয়ে দলের বিরুদ্ধে কোন অপকর্মে লিপ্ত করতে পারেনা আবার যারা পদে আছেন তাদেরও কোন অপকর্মে জড়াতে পারেন তাও নয়। তবে, অপ্রিয় হলেও সত্য এটাই যে, ত্যাগী, নিবেদিত ও আদর্শবাদীদের অধিকাংশই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে আসতে পারেনা। আবার এমন কিছু ত্যাগীও রয়েছে যারা দলকে ভালবেসে নিজের সব উপার্জন ব্যয় করে দেন অথবা বাপ-দাদার সূত্র ধরে দলের আদর্শ ও পতাকাকে সমুন্নত রাখতে নি:স্বার্থভাবে দলের জন্য কাজ করেন এবং দল ক্ষমতায় না থাকাকালীন সময়ে সরকারী দলের বিভিন্ন হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের এমনও অনেকে দলের মূল পদবীতে আসতে পারেন না বা মূল্যায়িত হন না।

এমন ত্যাগী, নির্লোভ ও দলের আদর্শ বাস্তবায়নে অতন্দ্র প্রহরীদের খোঁজে বের করা প্রত্যেকটা দলের মূল ভিত্তিতে থাকা নেতা ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব। কেননা, একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড-ইউনিয়ন থেকে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, নগর ও কেন্দ্রীয় মূল পদবীতে থাকা নেতারা সবসময় দল থেকে সুযোগ-সুবিধা আদায় করে থাকেন (ক্ষমতায় থেকে বা বাহিরে)। তাই, স্থানীয় নির্বাচন থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সব নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন না দিয়ে দলের নিবেদিত, ত্যাগী ও আদর্শের পতাকাধারীদের সুযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।

যদি এসব নিবেদিত প্রাণ ও ত্যাগীদের খোঁজে বের করে স্থানীয় নির্বাচন থেকে সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনিত ( অবশ্যই যোগ্যতার ভিত্তিতে ) করা হয় তাহলে, জীবনের যতটুকু সময় দলের জন্য ব্যয় করেছে তা স্বার্থক হবে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দলের প্রতি এটা অনেক বড় পাওনা।

সবিশেষ : দলের আদর্শবান, ত্যাগী ও নিবেদিতরা যদি এভাবে দলীয় প্রধান ও দলের কাছে মূল্যায়িত হয়, তাহলে প্রত্যেকটি দলে কাউয়া, হাইব্রিড, সুবিধাবাদী, দু’দিনের বৈরাগী, ষড়যন্ত্রকারী, উড়ে এসে জুড়ে বসা, ওয়ান ম্যান শো নেতা থেকে একটি দল মুক্তি পাবে। তখন দলে হানাহানি, গ্রুপিং, ক্ষমতার অপব্যাবহারকারী কমে যাবে।

আসুন, দলের ত্যাগী, নিবেদিত, ঝরে পড়া আদর্শবাদীদের বাঁচিয়ে রাখি।

এহসান আল-কুতুবী
সাবেক যুগ্ন আহবায়ক, জাতীয় ছাত্র সমাজ, কক্সবাজার জেলা।