একদিকে বৈরী আবহাওয়া অন্যদিকে হঠাৎ দেশি বাজারে পশুর মূল্য পড়ে যাওয়ায় গত ছয়দিন ধরে টেকনাফ করিডোর দিয়ে মিয়ানমারের পশু আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই পশু প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মূল্য কমিয়ে দেন এ দেশীয় পাইকার ব্যবসায়ীরা। ফলে মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত হাজারো পশুতে ব্যাপক লোকসান গুনতে হয় সীমান্ত ব্যবসায়ীদের।

আবার বর্ষায় সাগর প্রায় উত্তাল থাকায় মিয়ানমারে আগে কিনে মজুদ করে রাখা পশুও আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত ব্যবসায়ীরা অন্যান্য বছরের মতো এবারও মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ গবাদি পশু আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা গবাদি পশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির।

টেকনাফ শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ২৫ মে টেকনাফের সাবরাং এর শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর পার্শ্বে একটি ক্যাডল করিডোর চালু করে। প্রতি গরু-মহিষ থেকে ৫শ ও ছাগল ২শ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। চলতি অর্থবছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ২৬৭টি গরু, ৭৬৯টি মহিষ আমদানি করে ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা রাজস্ব পাওয়া গেছে। তবে হঠাৎ গত ছয় দিন ধরে কোনো পশু আমদানি হয়নি।

jagonews24

সূত্র আরো জানায়, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৭টি পশু আমদানি করে ৬ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব পায় এনবিআর। গত বছর আগস্টের শেষে রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে গবাদি পশু আমদানিও থমকে যায়। এরপরও রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব কাটিয়ে বিপুল সংখ্যক পশু আমদানি করা সম্ভব হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পশু আমদানি থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও করিডোরটির অবকাঠামোগত দৈন্যতা লেগেই আছে। আমদানিকৃত গবাদি পশুগুলো খোলা আকাশের নিচে রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে।

এছাড়াও পশু রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই পশু পরিচর্যারও। এখন যে নির্দিষ্ট স্থানটি রয়েছে তার অবস্থাও বেহাল। করিডোরে মহিষের স্থান হলেও আমদানি করা গরু রাখতে হয় নাফ নদীর বেড়ি বাঁধের ওপর।

করিডোর ব্যবসায়ী সাবরাং ইউপি সদস্য মুহাম্মদ শরীফ জানান, নানা প্রতিকূল পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে পশু আমদানি হলেও অবকাঠামোর অভাবে পশু রাখা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। এরপরও আমদানিকৃত পশুর রাজস্ব প্রদান ও ছাড়পত্র সংগ্রহে সুদুর টেকনাফে যাতায়াত করতে হয় ব্যবসায়ীদের। করিডোরের এসব সমস্যা চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায় ও ছাড়পত্র করিডোরেই করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং অবকাঠামোর উন্নয়ন করা গেলে আমদানি আরো বাড়বে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তিনি।

এদিকে চলতি বছরের কোরবানি ঈদের বাকি মাত্র এক মাস কয়েক দিন। এমন সময় পশু আমদানি সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে। পশু সঙ্কট হলে ঈদবাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

jagonews24

করিডোর ব্যবসায়ী টেকনাফ ইউপি সদস্য আবু ছৈয়দ জানান, দেশে গবাদি পশুর চাহিদা পূরণে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি করা হয়। আমাদের বাজারে পশুর মূল্য হঠাৎ কমে যাওয়ায় আমদানিতে প্রভাব পড়েছে। দামের সমস্যা কেটে গেলে পশু আমদানি আরো বাড়বে বলে তাদের আশা।

টেকনাফ উপজেলা গবাদি পশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির জানান, নিজেদের ব্যবসায়ীক সুবিধার পাশাপাশি আমাদের চাওয়া থাকে দেশের রাজস্ব আদায় বাড়ানো। নানা প্রতিকূলতায় মিয়ানমার থেকে বেশি মূল্য দিয়ে ক্রয় করলেও দেশে হঠাৎ পশুর দাম কমে যাওয়ায় পশু আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানি করে ছয় কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। শুনেছি দামের সমস্যায় আমদানি কয়েকদিন বন্ধ রয়েছে। কোরবানের ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বাড়বে বলে আশা করছি।