Siraji M R Mostak, Dhaka:

দেশজুড়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে নির্মম হত্যাকান্ডে কাউন্সিলর একরামসহ শত শত পরিবারে শোকের মাতম, জিয়া অরফানেজ মামলায় বেগম জিয়া মূল অপরাধী সত্তেও ৫ বছর সাজা আর তার সহযোগীদের ১০ বছর সাজার মাধ্যমে বিচারবিভাগের নিকৃষ্টতম প্রহসন, একজন মুমুর্ষূ রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘৃণ্যতম রাজনৈতিক সময়ক্ষেপন, নতুন ইরি ধান কাটার পরও দেশজুড়ে ৬০ টাকা কেজি দরে দুর্মূল্য চালের বাজার এবং ঐতিহাসিক ১৯৭১ এর জঘন্য অপরাধের বিচারে বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ঘাতক পাকিস্তানিদের পরিবর্তে শুধু বাংলাদেশিদের সাজা বা মৃত্যুদন্ড প্রদানে বিশ্বজুড়ে এদেশের মানুষকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে লান্থিত করার ঘৃণ্য অপপ্রয়াস ইত্যাদি অসংখ্য বাস্তবতা একজন সচেতন দেশপ্রেমিককে বেদনার সাগরে নিমজ্জিত করে। এমতাবস্থায় কোনো বৈধ নাগরিক ঈদের আনন্দে মেতে উঠতে পারেনা। সুতরাং এবারের ঈদ মোটেও আনন্দের নয়, শুধুই বেদনার। এতদসত্তেও যারা ঈদের দিন আনন্দের বাণী শোনায়, তাদের প্রতি শুধুই ঘৃণা জাগ্রত হয়।

দেশে চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে। চলছে নির্বিচার খুনের হলিখেলা। অন্যায়-অবিচারে ভরে গেছে দেশ। কোথাও শান্তির লেশমাত্র নেই। কী রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি আর বিচারবিভাগ। কোথাও আইনের বালাই ও সামান্য স্বস্তির জায়গাটুকু নেই। রাস্তা-ঘাটে নিরাপত্তা নেই। পরিবহন দুর্ঘটনা তো আছেই, ছিনতাই ও চুরির মহাসমারোহ। দেখার কেউ নেই। বিচারবিভাগ মুখে পুরো কুলুপ এটেছে। অন্ধ হয়ে বিচারের নামে অবিচার শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুানালকে নি¤œ আদালতে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত রায় বাংলাদেশের আপীল বিভাগে নিস্পন্ন করছে। এদেশের বিচারকেরাই উভয় আদালত চালাচ্ছে। তারাই আবার পাকিস্তানীদের পরিবর্তে শুধু বাংলাদেশী নাগরিকদের ঢালাওভাবে সাজা দিয়ে বিশ্ব দরবারে এদেশবাসীকে চরম লান্থিত ও নিগৃহিত করেছে। সব অভিনব পদ্ধতিতে চলছে।

একজন বেসরকারি চাকুরিজীবীর কথা বলছি। সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন ব্যাপকহারে বাড়ানোয় তাদের অবস্থা চরম নাজুক। আবার চলছে নিয়ন্ত্রণহীন অর্থব্যবস্থা। ফলে তারা না পারছে ঈদের আনন্দে মেতে উঠতে এবং সুপ্ত বেদনাগুলো প্রকাশ করতে। মিডিয়ার গলাও আটকে রয়েছে। কেউ টু শব্দটি উচ্চারণ করতে পারছেনা। তারই করুণ বাস্তবতা এরকম- বেচারার বেতন খুব বেশি নয়। শহরে অবস্থান ও সন্তানের পড়ালেখার জন্য বেতনের অর্ধেকেরও বেশি টাকা বাসা ভাড়ায় যায়। বাকী টাকায় কোনোমতে সংসার চালায়। ফলে অভাবের তাড়নায় মাঝে মাঝে আদরের স্ত্রী রাগে-অভিমানে বাপের বাড়ি যায়। তার বাপ ও ভাইদের মধ্যস্থতায় অনেক কষ্টে ফেরানো হয়। এবারের ঈদেও বেচারা পড়েছেন চরম দৈন্যদশায়। ওদিকে ঈদের চাঁদা দাবিতে কড়া নাড়ছেন দরজায়- শহুরে দলীয় মাস্তান, ময়লা পরিস্কারকারী দল, সেহরীতে আহবানকারী দল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কমিটির সদস্যবৃন্দসহ বহু দল নানা ভঙ্গি ও ভাষায়। কারো দাবিই ১০০ টাকার নিচে নয়। এবার বেচারার সংসার টেকা দায়। ভাবছেন, স্ত্রী বুঝি এখনই ছেড়ে যায়। সত্যি চলে গেলেন। বেচারা কষ্ট-বেদনায় শুয়ে আছেন বিছানায়। ভাবছেন, এবারের ঈদ মোটেও আনন্দের নয়। এবারে ঈদ ভরে গেছে বেদনায়।

শিক্ষানবিস আইনজীবী, ঢাকা। mrmostak786@gmail.com.