প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

শহীদ সাবেরের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, চিন্তা এবং সংগ্রামের মৃত্যু হয়নি। তার প্রমাণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের উপজাত ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু মানুষ মুক্ত হয়নি। অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। মুক্তিয্দ্ধু যেমন অনিঃশ্বেষিত অধ্যায় তেমনি শহীদ সাবেরের জীবনও একটি অসম্পূর্ণ অনিঃশ্বেষিত অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দৈনিক সংবাদ অফিস গভীর রাতে পেট্্েরাল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় শহীদ সাবের অগ্নিদগ্ধ অঙ্গার হয়ে ইন্তেকাল করেন। ওখানে সৎসার বিহীন লাশ পশু-পাখির খাদ্যে পরিণত হয়। বাংলার মৃত্তিকায় মিশে যায় নশ্বর দেহ। মৃত্তিকার তলে বাংলা মায়ের পাতা আসনে ঘুমিয়ে আছে শহীদ সাবের।

শহীদ সাবের (এ কে এম শহীদুল্লাহ) কক্সবাজারের একজন আলোকিত মানুষ। কিন্তু তিনি এখন কক্সবাজারের মানুষের কাছে বিস্মৃত। আমরা শহীদ সাবেরকে যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। এই দায় থেকে কক্সবাজারবাসী তথা দেশবাসীর কখনো কি মুক্ত হতে পারবে?

১ লা জুন ২০১৮ শুক্রবার কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১৭তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় একাত্তরের শহীদ ‘শহীদ সাবেরের’ জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনাকালে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কক্সবাজার সরককারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা সঞ্চালন করেন একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল।

সভায় বক্তাগণ বলেন, বামরাজনীতিতে সংযুক্তির অভিযোগে ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার তাকে আটক করেন ও জেলে প্রেরণ করেন। প্রথমে চট্টগ্রাম জেল, পরে রাজশাহী জেলে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত একটানা জেল অন্তরীণ ছিলেন। ব- দিয়ে জেল থেকে মুক্তির সরকারি প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি পারিবারিক সদস্যদের অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হয়। জেল থেকেই তিনি লিখেন বিখ্যাত কবিতা ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি’।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন একাডেমীর স্থায়ী পরিষদের চেয়ারম্যান কবি সুলতান আহমদ, কবি-সম্পাদক অমিত চৌধুরী, একাডেমীর সহ-সভাপতি কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ছড়াকার মো. নাছির উদ্দিন, একাডেমীর নির্বাহী সদস্য কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গল্পকার সোহেল ইকবাল, লেখক-এডভোকেট নুরুল হক ও সমাজ গবেষক নির্বাণ পাল। এর আগে একাডেমীর নির্বাহী সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী আবুল কালাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কবি হাসান আহমদ সোবহানী মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। মূল প্রবন্ধ লিখছেন একাডেমীর জীবন সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।

বক্তাগণ বেশি বেশি করে শহীদ সাবেরকে চর্চা মাধ্যমে শহীদ সাবেরের স্বপ্নকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন এবং শহীদ সাবেরের উপর একটি পৃর্ণাঙ্গ সংকলন প্রকাশ করার দাবী জানান।

পরে কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম, সুনীল গঙ্গোপধ্যায় ও স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি করেন অমিত চৌধুরী, রুহুল কাদের বাবুল, হাসান আহমদ সোবহানী, কল্লোল দে চৌধুরী, নির্বাণ পাল, সায়ন্তন ভট্টাচার্য, শান্তা ইসলাম ও সদানন্দ পাল তীর্থ।

সঙ্গীত পরিবেশন করেন নুরুল আলম হেলালী ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সায়ন্তী ভট্টাচার্য।

সভা থেকে প্রস্তাব করা হয় কক্সবাজার জের্লা কোনো স্কুল বা কলেজে শহীদ সাবেরের নামে কোনো কক্ষ রাখা, একই সাথে তার বাল্যকাল যেখানে কেটেছে সেই ঈদগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার একটি আবক্ষমূর্তি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়।

পরিশেষে একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের পিতা মো. নেজামুল হকের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। একই সাথে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট অসুস্থদের সুস্থতা কামনা করা হয়। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ছড়াকার নুরুল আলম হেলালী।

সভায় দেশকে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত রাখার জন্য রাব্বুল আলামীনের কাছে ফরিয়াদ করা হয়।

একাডেমীর ৪১৮ তম সাহিত্য সভা ৮ জুন

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১৮তম সাহিত্য সভা আগামী ৮ জুন ২০১৮ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সাহিত্য সভায় একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ছড়াকার নুরুল আলম হেলালীর তৃতীয় গ্রন্থ ঝিনুকমালার গাঁ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া কবির কবিতা ও স্বরচিত কবিতা পাঠ করা হবে। অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।