শাহনেওয়াজ জিল্লু ॥

মানব সভ্যতায় যৌনজীবন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর বহুমাত্রিক অনিয়মের নির্যাস বা প্রতিফলনই হচ্ছে ধর্ষণ/যিনা/ব্যবিচার। ধর্ষণ, যিনা বা ব্যবিচার একই বিষয়। এগুলো পরস্পরের পরিপূরক বা সমার্থক। মানুষের প্রাত্যহিক জীবন যাপনে অন্যান্য বিভাগগুলোর মতো যৌনজীবনেও সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি, শৃঙ্খলা ও বিধিবিধান রয়েছে। যা মেনে চলার মধ্যেই রয়েছে মানুষের জীবনের এই অধ্যায়টির সৌন্দর্য্য মন্ডিত সমাধান ও শান্তি। আর এর ব্যতয় ঘটালে অবশ্যই দুর্ঘটনা ঘটতে বাধ্য।

কিন্তু সমস্যা হলো, যখন আমরা এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞানার্জন না করে ব্যাপক মন্তব্যে মেতে উঠি। এদিক দিয়ে বলা চলে আমরা সকলেই ধর্ষক। ধর্ষণ শুধুমাত্র ছেলেরাই করে তা নয়, মেয়েরাও করে। সকল শ্রেণী পেশার লোকজন থেকে শুরু করে কর্তাব্যক্তি বাবু মাওলানা আমরা সবাই ধর্ষণ করে চলেছি প্রতিনিয়ত। তাহলে এই ঘাতক ব্যাধি ধর্ষণ কি আমাদের মাঝে শিকড় গেড়েছে? এর থেকে কি আর কখনো পরিত্রাণ পাওয়া যাবেনা? এই অসুর থেকে মুক্তি কি তাহলে সহসাই মিলছেনা?

এবার আসুন মুল আলোচনায়। প্রথমে আমি ধর্ষণের মতো ভয়াবহ যৌনাপরাধ সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য ও ধারণা দিতে চেষ্ঠা করছি। এর উৎস, উপকরণ, উৎপত্তি, সহযোগি সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। সব এক এক করে আলোচনায় আসবে।

এবার কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হই- যৌনাচার, যৌনহয়রানি, ইভটিজিং, যৌনশিক্ষা, যৌনচাহিদা, যৌনউন্মাদ, বাল্যবিবাহ, বলৎকার, বিবাহ, যৌন চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট, যৌনস্বাধীনতা, পতিতাবৃত্তি, পতিতা, বহুগামিতা, বহুবিবাহ, শালীনতা, অশ্লীলতা, বোরকা, শালীন বা অশালীন পোষাক, সামাজিক পারিবারিক রাষ্ট্রীয় এবং ব্যাক্তিগত মূল্যবোধ, ধর্মীয় মুল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় মুল্যবোধ, লিভটুগেদার, পরকিয়া, প্রেম ভালোবাসা, মিডিয়া, চলচ্চিত্র, নারী অধিকার, সমঅধিকার, পুরুষতান্ত্রিকতা, নারীতান্ত্রিকতা, নারীবাদ, মানসিকতা এবং নারীপুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি।

উল্লেখিত শব্দগুলো সম্পর্কে আশা করি আপনাদের নতুন করে ধারণা দেওয়ার দরকার নেই। শব্দগুলোর কতক নেতিবাচক আর কতক ইতিবাচক। আপনারা হয়তোবা ইতোমধ্যে শব্দগুলোর মাঝেই ধর্ষণের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু শব্দগুলো আমি যে কারণে উল্লেখ করেছি সেটা হচ্ছে এগুলো পরস্পরের সাথে সংশ্লিষ্ট যা আলো আঁধারের মতো, দিবারাত্রির মতো। এশব্দগুলোর মাঝেই নিহিত রয়েছে ধর্ষণ ব্যাধির উৎস ও প্রতিকার। আমি আবারও বলছি, বহুমুখী সমস্যার নির্যাস বা প্রতিফলন হচ্ছে ধর্ষণ।

এবার এই আলোচনাটা একটু খেয়াল করুন। মানুষ প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাকৃতিক জীব। মানুষের মতো এরকম প্রজনন ক্ষমতা ও যৌন চাহিদা রয়েছে আরো অনেক জীব বা প্রাণী রয়েছে। প্রজনন ক্ষমতার অন্যতম প্রাকৃতিক শর্ত হচ্ছে যৌনচাহিদা বা যৌনক্ষমতা। সুতরাং অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মানুষেরও যৌনোৎসাহ উদ্দীপনা ও চাহিদা থাকাটা একেবারেই প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক। এছাড়াও মানবজাতিতে নারীপুরুষের পার্থক্যভেদটাও প্রাকৃতিক। এটিও একান্ত সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাধীন একটা ব্যাপার। যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। মেডিক্যাল সাইন্সও এটা ব্যাখ্যা করতে পারবেনা মানবের নারীপুরুষের পার্থক্যভেদটা কেনো। এটা একান্ত প্রকৃতির স্রষ্টার অধিকারে রয়েছে। এবং এটাও মনে রাখতে হবে যে, নারী পুরুষ পার্থক্যভেদে স্ব স্ব বৈশিষ্ট্য, স্বভাব, ক্ষমতা ও গুণাবলি বহন করে থাকে। যেটা পুরুষ পারে সেটা নারী পারে না; আর যেটা নারী পারে সেটা পুরুষে পারে না। এগুলো আপনাকে মেনে নিতেই হবে। ঠিক তদ্রুপভাবে মানব জীবনে নারীপুরুষের যৌনতাকেও আপনাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতেই হবে। এটি প্রাকৃতিক চাহিদা।

এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, অন্যান্য প্রাণী যেভাবে পারস্পরিক যৌনাচার বা যৌনক্রিয়া সম্পাদন করে থাকে সেভাবেই কি মানুষও করে? নিশ্চয়ই বলবেন “না”। আর আমি বলবো হ্যাঁ। মানুষ আর গরুছাগলের মাঝে কোনো তফাত নেই। গরুছাগলের যেমন এক্ষুধা নিবৃত্তে কোনো টাইম সিডিউল বা প্লেসের ঠিক নাই; তদ্রুপ মানুষেরও। এরাও গরুছাগলের মতো কাকে কখন কারসাথে কোন জায়গায় কোন পদ্ধতিতে মিশবে বা যৌনাচার করবে এর ঠিক নাই। ভাই এখন এগুলোর উদাহরণ দিতে গিয়ে সময় নষ্ট করতে চাইনা। এগুলো এখন ইন্টারনেট ও মাল্টিমিডিয়া তথা প্রযুক্তির বদৌলতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যার অসংখ্য ভিডিও ক্লিপস নেট দুনিয়া ঘাঁটলেই পাওয়া যায়। মোদ্দা কথা হলো, যৌনাচারে পাশবিকতা মানব সভ্যতায় নতুন কিছু নয়। এটা অতীতেও ছিলো, বর্তমানেও আছে। ভবিষ্যতে… থাকবে কিনা জানিনা।

মানব সভ্যতায় যৌনাচারের বিবর্তন, শৃঙ্খলা ও বিধিবিধানঃ মানুষের ¯্রষ্টা আদিযুগ থেকেই মানুষের যৌনাচার পদ্ধতি প্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনা প্রদান করে এসেছে। কিন্তু এসব দিক নির্দেশনা কেউ মেনে চলেছে। আবার কেউ অমান্য করেছে। করে যাচ্ছে। স্রষ্টার বিধান মেনে যে যৌনাচার হয়ে তাকে আমরা তাকে বৈধ যৌনাচার বা নিকাহ বা বিবাহ বলি। এক্ষেত্রে অন্যান্য নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কটি “মাহরিম ও গায়রে মাহরিম” এর উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করতে হবে। এটিও স্রষ্টা প্রদত্ত বিধান। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ধর্ষণের আলোচনার মাঝখানে ¯্রষ্টা এলো কিভাবে? হ্যাঁ। স্রষ্টা ও তার বিধিবিধানের আলোচনা আসবেই। যদি মানুষের প্রাকৃতিক বাস্তবতার বিষয়ে স্রষ্টা ও তার বিধিবিধান অস্বীকার করি তাহলে মানুষের যৌনাচার আর গরুছাগলের যৌনাচারের মাঝে কোনো তফাত থাকেনা। তখন আপনি যার সাথে যেমন ইচ্ছা যৌনাচারে লিপ্ত হতে পারেন। সম্ভবত এটাকেই ধর্ষণ বলে। একমত না হলে মন্তব্য করে জানাবেন। একারণে আমি অধিকাংশ নাস্তিক তথা যারা স্রষ্টার বিধানে একেবারেই বিশ্বাস রাখেনা তারাই ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িত বলে মনে করি। এবং এব্যাপারে শতভাগ আস্তাসহকারে বলতে পারি ধর্ষণের মতো জঘন্য কান্ড সংঘটিত হওয়ার নেপথ্যের মুল কারিগর হচ্ছে একমাত্র অবিশ্বাসীরাই। তারা অন্যান্য প্রাণীদের মতোই কোনো বাচবিচার না করে স্ব স্ব যৌনচাহিদা তথা প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করে থাকে। পুংমৈথুন, হস্তমৈথুনসহ আরো নানাবিধ বিকৃত রুচির যৌনাচারের উদ্ভাবনকর্তা এরাই। এরাই স্রষ্টার অস্থিত্বকে অস্বীকার করতে গিয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে তাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এসব পাশবিক যৌনাচার সৃষ্টি করেছে অতপর ছড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে চিন্তাশীল মানুষগুলো তাদের যৌনজীবনকে সুন্দর সুশৃঙখল করতে স্রস্টার বিধিবিধানকে মেনে নিয়েছে। যুগে যুগে স্রষ্টা যেটাকে অনুমোদন দিয়েছে সেটাকে মেনে নিয়ে চলেছে এসব মানুষ।

এবার আসুন জেনে নেই মানুষের যৌন জীবনে শৃঙ্খলা রক্ষায় স্রষ্টার বিধিবিধানগুলো কেমন। এটাকে আপনি প্রাকৃতিক নিয়ম নীতিমালাও বলতে পারেন। মানুষ যেহেতু প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাকৃতিক জীব; সেহেতু এর বয়সের এক পর্যায়ে প্রাকৃতিক ভাবেই যৌনচাহিদা বা যৌনবাসনার সৃষ্টি হয়। ঐ সময়েই তাকে বৈধ পন্থায় যৌনচারের সুযোগ করে দিতে হবে। যদি এটা করা না হয় তাহলে এটা তার প্রতি জুলুম করার মতোই। পরোক্ষভাবে তাকে ধর্ষণ করার শামিল এটি। সঠিক সময়ে প্রাকৃতিক চাহিদা বৈধভাবে চর্চা করার সুযোগ না দিলে এক পর্যায়ে সে তার পাশবিকতাগুলো চর্চা করতে থাকে। ক্রমাগত পাশবিক যৌনচর্চা তাকে চুড়ান্ত পর্যায়ে যখন নিয়ে যায়। তখন সে ঘটনাকে আমরা ‘ধর্ষণ’ এবং তাকে ‘ধর্ষক’ হিসেবে চিহ্নিত করি। এরপরে শাস্তির দাবী তুলি। সংবাদপত্রের শিরোনাম করি। কয়েকদিনের জন্য রাষ্ট্রজুড়ে হটকেক বানায়ি গলদকরণ করি। এদিকে আমরা আমজনতা বলি, ফাঁসি চাই! লিঙ্গ কর্তন করো! ইট ঝুলিয়ে দাও! আরোও কত কি।

খেয়াল করুন, এই মানুষটিকে সঠিক সময়ে বৈধ যৌনাচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে কে? কারা? কিভাবে? আমরা কি একটাবারও ভেবে দেখেছি??? ১৮ বছর বা ২৫ বছরের আইন কি প্রকৃতির স্রষ্টা সৃষ্টি করেছিলো মানবের জন্য? নাকি আমরা মানুষেরাই এই যৌনাত্যাচারী আইন বানিয়েছি? প্রশ্ন জাগেনা, মানুষ কিভাবে মানুষের জন্যে আইন বানাবে? আসলেই কি মানুষের জন্য মানুষ আইন বা নীতিমালা বানাতে পারে?? এই ১৮+ বছরের আইন তৈরী করে আমরা যে মানুষটার উপর যৌনাত্যাচার চালিয়েছি এটাওকি ধর্ষণ নয়? সে ধর্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পূর্বেই কি আমাদের এই মানব রচিত আইন তাকে ধর্ষণ করেনি??? মনে রাখবেন, প্রকৃতি সব সময় প্রকৃতির স্রষ্টার আইন মেনে চলে। মানুষের তৈরী করা আইন প্রকৃতি মানেনা। সে তার আপন গতিতে চলে।

ধর্ষণ নিয়ে এবার আরো গভীর আলোচনা করবো। আমি আগেই বলেছি, মানব জাতির যৌনজীবনে বহুমুখী অনিয়মের ফসল হচ্ছে ধর্ষণ, ব্যাবিচার বা যিনাহ। শুধুমাত্র এককেন্দ্রিক চিন্তা চেতনা, প্রতিবাদ বা দাবি দফা দিয়ে কখনো যৌনাপরাধ রোধ করা যাবেনা।

এই যৌনাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে,

১/ প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা

২/ এই রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা

৩/ আইনী ব্যবস্থা

৪/ শিল্প ও সংস্কৃতি

প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর শাসন ব্যবস্থা এমনভাবে রচিত হয় বা চলমান থাকে যা সেই জাতির চিন্তা, চেতনা, সংস্কৃতি, জীবনধারণ পদ্ধতি, মানসিক ও শারীরিক চাহিদার সাথে যায়। সেসব দেশের জাতি গোষ্ঠী স্বাধীন স্বেচ্ছাচারী মনে যেভাবে চায় সেভাবে আইন প্রণয়ন করে তাদের শাসন করা হয়। এবং তারাও সেভাবে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার সুফল বা কুফল ভোগ করে থাকে। যেমন, আমেরিকা বৃটেন সৌদিআরব বা ভারতে তাদের জনগণের খেয়াল খুশির অনুসরণে রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে। সেই ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও জনগণ পরস্পরকে জবাবদিহি করে। এর সুফল কুফলও তারা নিজেরাই ভোগ করছে।

কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, উপরে যেসব রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে উদাহরণ দিয়েছি সেখানে কিন্তু প্রকৃতির যিনি স্রষ্টা তার আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করা হয়নি। তাদের রাষ্ট্র কি স্রষ্টার আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়??? একারণে এসব দেশের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে আপনারা সবাই জানেন। মানুষ যেহেতু প্রাকৃতিক সেহেতু প্রকৃতির স্রষ্টা প্রদত্ত আইনদ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা কি অধিকতর যুক্তিযুক্ত নয়???

প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনস্থ শিক্ষা ব্যবস্থাঃ শিক্ষা মানব জাতির জীবন ধারণে অন্যতম খুঁটি। কাঠামোর এঅংশে যখন কুশিক্ষা অশিক্ষা মধ্যযুগীয় শিক্ষা বা বাস্তবতা বিবর্জিত ধানাইপানাই শিক্ষা দেওয়া হয় তখন সে জাতির মন মগজে ধীরে ধীরে পচন ধরে। এছাড়াও এশিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের যৌনজীবন সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন কোনো ধারণা দেওয়া নেই। কোনটি বৈধ যৌনতা কোনটি অবৈধ যৌনতা তার কোনো শিক্ষা আমরা পাইনি। উল্টো বহুবিবাহকে খারাপ হিসেবে এবং বহুগামিতাকে ভালো হিসেবে প্রমোট করা হয়। তা না হলে লাইসেন্সকৃত পতিতালয় সৃষ্টি করার কারণ কি? একজন যৌবনযোগ্য মানবকে কেনো ১৮ বা ২৫ বছরের আগে বৈধ যৌনাচারে নিষিদ্ধ করা হয় কিন্তু অবৈধ প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ককে উৎসাহিত করা হয়? কেনো শেখানো হয়না নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্কে “মাহরিম-গায়রে মাহরিম” কি ও কেনো!!! মাথা মোটা হুজুররাও শুধু শুধু কেনইবা বোরকা আর ব্রা এর মাঝে ধর্ষণের কারণ খুঁজে বেড়ান আমার বুঝে আসেনা। মাস্টার মশাইদেরও দেখেছি গন্ডমূর্খ্যরে মতো মন্তব্য করতে। সুশিক্ষিত সুশীলরাও বলছেন এর কারণ কারণ নাকি ফেসবুক, টুইটার, ইমো, হোয়াট্সঅ্যাপ, অ্যান্ড্রয়েট সেট বা স্মার্টফোন। আপনাদের দেওয়া এসব কারণ আর অজুহাত শুনলে মনে হয়, “আমার মাথাটাই কেটে ফেলে দিই; কেননা আমার মাথায় ব্যাথা”। এই ব্যধি কোনোভাবেই শুধুমাত্র বোরকা, ব্রা, ফেসবুক বা এন্ড্রয়েট সেটের কারণে সৃষ্টি হয়নি। নিজেদের অপদার্থ প্রমাণ করতেই কি আপনারা এমন অজুহাত সৃষ্টি করেন আর জাতিকে তামাশা দেখান??? ইদানিং দেখা যায় শিক্ষাগুরু শিক্ষকেরাই ধর্ষণ করেন। ইমাম সাহেব মসজিদের ভিতরে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন শিক্ষক যৌনপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। আমি এতে অবাক হইনা। কারণ গোড়ায় গলদ। মুল জায়গায় পরিবর্তন না আসলে কোনোদিনও এইকথা সেই কথা বলে ধর্ষণ বা যৌনাপরাধ রোধ করা যাবেনা।

আইনী ব্যবস্থাঃ প্রিয় পাঠক, আপনারা ভালোভাবেই অবগত আছেন মানুষের যৌনজীবন নিয়ে প্রচলিত ব্যবস্থায় কেমন হাস্যকর আইনগুলো রয়েছে। তদ্রুপভাবে যৌনাপরাধ নিয়েও তেমন কার্যকর কোনো আইন বিদ্যমান নেই। যার ফলে যেটুকু আইন কানুন রয়েছে তাও আবার টাকা বা শক্তির কাছে হার মেনে যায়। একারণে মানুষ যৌনাপরাধ করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহ পাচ্ছে। এমনকি কোনটা যৌনাপরাধ আর কোনটা যৌনাপরাধ নয় সেটা পর্যন্ত মাথায় নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে আপনারাই বলুন স্রষ্টার আইনই কি মানুষের যৌনজীবন সুশৃঙ্খল করতে এবং যৌনাপরাধ রোধ করতে অধিকতর শ্রেয় নয়???

শিল্প ও সংস্কৃতিঃ একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের যৌনজীবনে সেদেশের চাপিয়ে দেওয়া বা প্রচলিত শিল্প ও সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। এককথায় শিল্প ও সংস্কৃতি যৌনজীবনকে ব্যাপক ভাবে শাসন করে। একারণে শিল্প ও সংস্কৃতিকে পারত পক্ষে যৌনতামুক্ত রাখতে হবে। আর যদি তা সম্ভব না হয় তবে বৈধ যৌনতার উপর ভিত্তি করেই শিল্প ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে জাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে “একখান চুমাআআআ দিয়ে যা” বা একপাল নর্তকীর “পানিওয়ালা ডেন্স”কে প্রমোট করা হয় সেদেশের তরুণ তরুণী কিশোর কিশোরী বিবাহিত অবিবাহিত আবাল বৃদ্ধ বনিতা এরা ইভটিজিং, অ্যাডামটিজিং, ধর্ষণ, অযাচিত গর্ভপাত, পরকিয়া, বহুগামিতাসহ আরোও যতধরণের যৌনাপরাধ রয়েছে সবকিছুতেই লিপ্ত হবে। কারণ এরা সংস্কৃতি থেকে এসব ভালোভাবেই শিখছে, রপ্ত করছে। স্বাভাবিকভাবেই নারীর অর্ধনগ্ন দেহ একজন পুরুষের জন্য যৌনাচার সহায়ক। তদ্রুপভাবে নারীর জন্যেও। যে যখন যেভাবে সুযোগ পায় তখন সেটা চর্চা করে বসে। মাথায় তখন সে এটা রাখে না যে- এটা কি বৈধ না অবৈধ যৌনাচারে আমি লিপ্ত হয়েছি। এখান থেকেই সৃষ্টি হয় যৌনাপরাধগুলো। এমনকি এটি হত্যা খুন পর্যন্ত গড়ায়। জনৈক অভিনেতার মন্তব্যটি অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। সে বলেছে, নারী কি স্বাধীনভাবে পোশাক পরিধান করবেনা? হ্যাঁ শুধু নারী কেনো; নারী পুরুষ উভয়েই অবশ্যই অবশ্যই স্বাধীনভাবে পোশাক পরিধান করবে। মানুষের পোশাক আশাকও সংস্কৃতির অংশ। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বা দেশের মানুষের স্ব স্ব চাহিদার উপর ভিত্তি করে প্রথা অনুযায়ী পোশাক আশাক বিদ্যমান রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকৃতির ¯্রষ্টার বিধান অনুযায়ী বলা যেতে পারে “তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম পোশাক”। যে পোশাক আমাকে অহংকারী করবেনা, শরীরের নির্ধারিত নিষিদ্ধ জায়গায় আবরণ দেওয়া যাবে ঐটাই সর্বোত্তম পোশাক। ঐ পোশাক মানুষ অবশ্যই স্বাধীনভাবে পরিধান করতে পারবে। মানুষ তার ¯্রষ্টার ইচ্ছার বাহিরে গিয়ে অতিরিক্ত স্বাধীনতা চাওয়া কি ঠিক? এটাকি মানব সমাজে যৌনশৃঙ্খলা নষ্ট করবে না? অবশ্য এর মানে এই নয় যে, একজন মেয়ে বাপ ভাইয়ের সামনে যে পোশাক পরিধান করবে; সেটিই আবার তার স্বামীর সামনে পরিধান করে বসে থাকতে হবে। তদ্রুপভাবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সামনে জাইঙ্গা পরিধান করে বা খালি গায়ে যৌবন প্রদর্শন করা যেমন সওয়াবের তেমনি অন্য নারীর সামনে নিষিদ্ধ জায়গা আবৃত রেখে চলাফেরা করাও সওয়াবের। এবিধান একইভাবে মেয়েদের জন্যও। তারা স্বামীর সামনে একধরণের, বাপ ভাইয়ের সামনে একধরণের এবং অন্যপুরুষের সামনে স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত বিধান মেনে স্বাধীনভাবে পোশাক পরিধান করবে। মনে রাখবেন, স্বামীর সামনে বোরকা পরে বসে থাকার নাম স্বাধীন ভাবে পোশাক পরিধান নয়। তাকে আপনার রুপ লাবণ্য যৌবন ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করাই সওয়াবের। এতে আল্লাহ্ খুব খুশি হন। আপনারাই বলুন, স্বামীর সামনে যে ব্রা পড়ে আপনি স্বাধীনভাবে বসেন সেই ব্রা পড়ে অর্ধনগ্ন অবস্থায় মোশাররফ করিমের সামনে বসা কি অভদ্রতা নয়? তিনি কি এতে বিব্রতবোধ করবেন না? সম্ভবত এটাকেই সীমালঙ্গন বলা হয়। আপনারাই বলুন এই পোশাক সংস্কৃতির সীমালঙ্গনের কারণে কত নারী পুরুষ আজ দেউলিয়া হয়েছে! শৈল্পিকভাবে সম্ভ্রম হারিয়েছে! যৌন অনুভূতিতে আঘাত পেয়েছে! অত্যাচারিত হয়েছে! এখানে বোরকা টোরকা এগুলো কোনো বিষয় না। আসল কথা হলো সবাইকে তাকওয়ার পোশাক পরিধান করতে হবে। এটা মন ও দেহ উভয়কেই পরিধান করাতে হবে।

প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন যৌনাপরাধ হিসেবে ধর্ষণ ব্যাধি কি। এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে। এগুলো সব আমার ক্ষুদ্র মগজে লেখা। এরপরে এজমানার স্টিফেন হকিংরাও কিছু লিখবেন, ডারউইন প্রজাতি বান্দররাও লিখবেন, তেতুল মোল্লা ওয়াজ করবেন, শিক্ষক হিসেবে বিজ্ঞানি স্যাররাও যার তার যুবতী মেয়েকে চুমা দিয়ে বুঝিয়ে দিবেন আমাদের যৌনশিক্ষা কেমন হওয়া উচিৎ। আমি আপাতত তাদের লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকবো। এখানে আরোও একটি বিষয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা ছিলো সেটা হচ্ছে ‘কাবিন ও মাহরানা : পতিতা ও পতিতাবৃত্তি’। আপনাদের আগ্রহী দেখলে এবং উৎসাহ পেলে এবিষয়ে আগামী পর্বে লিখবো। ইনশাআল্লাহ।

২০.০৫.১৮ ইং