– মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল 
“ ওলট-পালট করে দেয় মা- লুটে পুটে খাই-এ যেন আল্লাহ্ ছাড়া দেখার কেউ নাই”
কতটি লাশ পড়লে কত জন মানব সন্তান নিহত হবার বিনিময়ে চকরিয়া বাসী একটি ব্রিজ পাবে? এই ব্রিজ কি শুধুমাত্র চকরিয়া বাসীর জন্য প্রযোজ্য?যখন পড়বে লাশ,যখন স্বজনের চিৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হবে মরা মানুষের দুর্গন্ধে এক ঝাঁক কাঁকের কাঁ কাঁ শব্দে স্থব্দ হয়ে যাবে চকরিয়া তথা কক্সবাজারের মেঠো পথ তখন হয়ত টনক নড়বে বড় কর্তাদের!
চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে ১৯৬০ সালে নির্মিত গার্ডার ব্রীজটি চকরিয়া উপজেলায় চিরিঙ্গা মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে জাপানি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় চার বছর ধরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উম্মুক্ত করে দেয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এই সেতুর দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এখন মারাত্মক ঝুঁকি পূর্ণ। দীর্ঘ ৫৮ বছর আগে নির্মিত ব্রীজের উপর দিয়ে সারাদিন-সারারাত চলছে হাজার হাজার পণ্য ও যাত্রী বোঝাই গাড়ি মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। ব্রীজের ছাদের নীচে ধরেছে ফাটল।
বলতে গেলে অনেকটা মাতামুহুরী নদীর ব্রীজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়ার কতিপয় অলস কর্মচারীদের “ঘুমভাঙ্গানো কামান্যাপুত”। কারন হিসাবে জানা যায়, সড়ক কর্মচারিদের টাকার প্রয়োজন দেখা দিলেই এ ব্রীজে চলে ব্যন্ডিজকর্ম। আবার নতুন কোন ঠিকাদারের ইন্টার্নির প্রয়োজন হলে জোড়াতালী দিয়ে এটির ব্যবহার হয় ঠিকাদারী শেখানোর আঁতুড় ঘর হিসাবে। মালম্যাটারিয়াল সরকারী খরছে হয় তবে বিল ভাওচার হয় একে তিন অর্থাৎ লাখে তিন লাখ। ইমার্জেন্সির খাতের নামে বিল করে চলে ভাগবাটোয়ারা। স্থায়ী মেরামতে নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। প্রচার রয়েছে এর মেরামত ব্যয় থেকে উঠে আসে কতিপয় কর্মচারীর ইমার্জেন্সী বোনাস। তাই মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজারের প্রবেশ দ্বারের এ ব্রীজটি এখন “সওজ’ (সড়ক ও জনপথ) বিভাগের চকরিয়া অফিসের অলস কর্মচারীদের “ঘুমভাঙ্গানো কামান্যাপুত” বা দুধের গাই’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করলে ও এই “পুতের এখন করুন দশা চলছে। ভারবহনে অক্ষমতা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করছে এ ব্রীজ। যে কোন মুহুর্তে এ ব্রীজ উপহার দিতে পারে বিগত দিনের মত লাশের মিছিল। ভেঙ্গে তলিয়ে যেতে পারে যাত্রীবাহী বা পর্যটকবাহী গাড়ী।
অর্ধশত বছর আগে নির্মিত এ ব্রীজটি ঝুঁকিতে রয়েছে। মেরামতের উপর মেরামতে হারগুর ভেঙ্গে বিকলাঙ্গ অবস্থা বিরাজ করছে বিগত এক যুগের ও অধিক কাল ধরে। প্রচার রয়েছে মহাসড়ক হয়ে পর্যটন সমৃদ্ধ কক্সবাজারের প্রবেশ দ্বারের এ ব্রীজটি দেখভাল ও মেরামত হয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী দিয়ে। “সওজ”র চতুর্থ শ্রেণীতে কর্মরত উন্নয়ন খাতের কর্মচারী। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ভাগ্যপরিবর্তন হয় এ ব্রীজের। ভগ্নদশার এ ব্রীজ রক্ষায় চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ব্রীজের উপরে কয়েকটি কবর তৈরীর পর চলতি অর্থ বছরে সরকার ব্রীজ ঝুঁকি মুক্ত রাখতে বরাদ্ধ দেয়া দুই কোটি চল্লিশ লক্ষ টাকায় “টেম্পোরারি ডি-প্লেটিং ওয়ার্ক ” নামে তৈরী হচ্ছে “ব্রীজের তিন পয়েন্টে তিনটি সাপোর্ট পিলার। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিজবাহ্ এসোসিয়েট ওই কাজটি পায়।তারা ইতি মধ্যে ব্রীজের নিচে ৩টি পিলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রতিটি পিলারের সারিতে রয়েছে ৩টি জমানো খূঁটি। বাকী কাজ হচ্ছে ব্রীজের ছাদের কয়েকটি স্থানে ফুটু হয়ে যাওয়া জায়গায় স্টীলের সীট বসিয়ে উপরে কার্পেটিং কাজ করা। চল্লিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পর কাজ হচ্ছে ঠিক অাছে, তবে কাজের পর, অাবার “ফাটল” তবে প্রশাসনের টনক কি তখনই নড়বে, অভিজ্ঞ মহলের মতে এই প্রকল্পটি ঝুঁকি পূর্ণ মাতামুহুরী ব্রীজকে ঝুঁকি মুক্ত করা নয় ! মূলত অর্থলোভী ঠিকাদার ও দূনীতি পরায়ন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের পকেট ভারী করা।সরকারের ঝুঁকি মুক্ত রাখতে বরাদ্ধ দেয়া দুই কোটি চল্লিশ টাকায় তৈরী হচ্ছে সাপোর্ট পিলার” নামের নতুন পিলার। যেটি সরকারী টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
একটি সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার কর্তৃক সাইড এলাকায় প্রকল্পে বিস্তারিত তথ্য চিত্র তুলে ধরে সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর নিয়ম থাকলেও অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল কিন্তুু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জনগণের দৃষ্টি এড়িয়ে এ পর্যন্ত কোন সাইনবোর্ড প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করেননি। এতে কি প্রতীয়মান হয় না আসলে এটি পুকুর চুরি না সমুদ্র চুরির প্রকল্প।
সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারীরা বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। দিনের বেলায় তেমন সমস্যা না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার বাসগুলো সেতুটি পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অতিদ্রুত এই সমস্যা স্থায়ী সমাধান করে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জোর দাবি জানান তারা। অন্যথায় যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।গত চার বছর ধরে সেতুটির এই দুরবস্থার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ইতঃপূর্বে দূরপাল্লার একটি পিকনিক বাস দেবে যাওয়া অংশ দিয়ে পারাপারের সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয় বাসটি। এতে একসাথে ২০ জনের মতো নারী-পুরুষ প্রাণ হারান এবং আহত হন অনেকে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্র ঝুঁকি এড়াতে সেতুর নিচে মাটির ওপর থেকে গার্ডারের তলানী পর্যন্ত বালুর বস্তা দেয়া হয়েছে। বালুর বস্তার চারদিকে ইটের গাঁথুনি দেয়া হয়েছে যাতে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে। এ ছাড়াও সেতুর উপর দিয়ে যাতে ১০ টন ওজনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারে সে জন্য সেতুর দুই দিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে সেতুর মাঝখানে আবারো দেবে যাওয়া শুরু হয়। দেবে যাওয়ার অংশের ওপর ইতঃপূর্বে বসানো পাটাতনগুলো সরে যায়। এ অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্যস্ততম এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সার্বণিক নজরদারী বাড়ায়। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে সরে যাওয়া পাটাতনগুলো নতুন করে কয়েকবার বসানো হয়েছে এবং সেতুর গার্ডারের নিচে বালুভর্তি বস্তা দেয়া হয়। বালুর বস্তার চারদিকে ইট দিয়ে গাঁথুনি দেয়া হয় যাতে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে।
তাহলে স্থায়ী সমাধান কখন হবে, এমন প্রশ্নে কক্সবাজার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া এপ্রতিবেদকে বলেন, ‘যতটুকু জানি, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি চারলেনের সড়কে উন্নীত করার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছ এবং মাতামুহুরী নদীর ওপরও চারলেনের সেতু হবে। এ কারণে এখনই নতুন কোনো সেতু নির্মাণ হচ্ছে না।
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে এ ব্রীজটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারসহ ২৫টি উপজেলার অর্ধকোটি মানুষ তাদের ব্যবসা বাণিজ্য ও জীবন যাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ১টি নতুন ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অতীব দুঃখের বিষয় হলে ও সত্য কক্সবাজার জেলার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব সরকার এ কোষাগার এ জমা হয়, প্রতি বছর।কিন্তুু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে দেখার মত শুরু করেননি। তাই সচেতন মহলের প্রশ্ন, কখন ঘুম ভাঙবে সরকারের কৌশলীদের? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে মাতামুহুরী ব্রীজ নির্মাণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোরদাবী জানিয়েছেন। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ মাতামুহুরী ব্রীজকে ঝূঁকিমুক্ত রাখতে বরাদ্ধ দেয়ার অর্থের যেন হরিলুট না হয় তৎ জন্য একটি সৎ অভিজ্ঞ টিম দিয়ে কাজটি সরেজমিনে পরিদর্শনের দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।