তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম:

জীবিত কন্যা শিশু’র বদলে মৃত ছেলে দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না চট্টগ্রামের গোলপাহাড় এলাকায় অবস্থিত বেসরকারী চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের। মামলার পর জীবিত উদ্ধার করে ওই শিশুকে ফেরত দিতে হলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। বুধবার (১৮ এপ্রিল) চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালী জেলার মাইজদি এলাকার রোকসানা আক্তার (২১) ফেনীর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ১৪ এপ্রিল। জন্মের পর শিশুটির নিউমুনিয়া ধরা পরলে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামে আনার পর প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় চাইল্ড কেয়ার নামক হাসপাতালে ভর্তি করেন গত ১৫ এপ্রিল। কন্যা সন্তান হিসেবেই চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর পাশ্ববর্তী দুটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা নিরীক্ষাতেও শিশুটিকে কন্যা শিশু হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলাবার (১৭ এপ্রিল) চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কন্যা শিশুটিকে মৃত ঘোষনা করে শিশুর লাশটি প্যাকেট করে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

নবজাতকের মা রোকসানা আক্তার বলেন, ডাক্তারদের কথা মেনে নিয়ে আমরা লাশ নিয়ে নোয়াখালী নিজ বাড়িতে ফিরে যাই। গতকাল সন্ধ্যার (১৭ এপ্রিল) দিকে নবজাতককে কবর দেয়ার জন্য জানাযার পূর্বে লাশের গোসল দেওয়ার জন্য প্যাকেট খোলা হয়। তখন দেখতে পায় সেটি মেয়ে নয়, একটি ছেলে শিশুর লাশ। এরপর আত্বীয় স্বজন সবাই ছুটে আসে। রোকসানা বলেন, আমি কন্যা শিশুর জন্ম দিয়েছিলাম এবং কন্যা শিশুটিকেই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। ছেলে শিশুর লাশ দেখে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষনিক পুনরায় অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে শিশুটির লাশসহ রাতেই চট্টগ্রামে ফিরে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে যোগাযোগ করি।

আমার কন্যা শিশুকে ফেরত দিতে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আকুতি করি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার শিশুটিই মারা গেছে বলে জানান। এরপর আমি পাচলাইশ থানায় গিয়ে একটি সাধারন ডায়েরি করি। অয়িযোগের পর ঘটনাটি তদন্তে পুলিশ মাঠে নামে।
পরে আজ বুধবার দুপুরের দিকে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোকসানা আক্তারকে জীবিত অবস্থায় তার কন্যা সন্তানটি ফেরত দেন।

এক প্রসঙ্গে রোকসানা বলেন, চাইল্ড কেয়ার নাম দিলেও সেটি টাকা বানানোর মেশিন ছাড়া কিছু নয়। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা যেন আর কোনো মায়ের সঙ্গে না হয়। ওদের আইসিইউতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। তারা হয়তো আমার বুকের ধনকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। যদি আমাকে অন্য কোনো কন্যার মরদেহ দেওয়া হতো আমি বুঝতেই পারতাম না। এ ধরনের ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া উচিত সরকারের। আমি এ ঘটনায় জড়িত ডাক্তারসহ চাইল্ড কেয়ারের সবার শাস্তি চাই।

তিনি বলেন, চাইল্ড কেয়ারে ভর্তি করানোর পর শেভরন ও ট্রিটমেন্টে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে উল্লেখ আছে মেয়ে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে লেখা আছে মেয়ে। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে শুধু ছেলে লেখা ছিল। যখন বাবুর মরদেহ প্যাকেট করে দেওয়া হয় তখন তারা বলেছিল,মা যেন বাবুর চেহারা না দেখে। বাবুর মুখে রক্ত লেগে আছে। তা দেখলে হার্ট অ্যাটাক করতে পারে।

জানতে চাইলে পাচঁলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের একটি টিম তদন্তে নামে। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বিকার করে। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা মৃত শিশুর ডিএনএ টেস্ট করানোরও উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ মৃত ছেলে শিশুর লাশ ফেরত দিয়েছে। আমরা ওই বাচ্ছাটির মায়ের কোলে শিশুটি ফেরত দিয়েছে।।

এ ব্যাপারে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাহিম হাসান রেজা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্যে করেননি। কিন্তু এর আগে মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেছিলেন, ওই মা ছেলে সন্তানই জন্ম দিয়েছিলেন। রেজিস্ট্রার ও ডেথ সার্টিফিকেটে ছেলে লেখা আছে। প্রতিটি শিশুর শরীরে ট্যাগ লাগানো থাকে। তাই ভূল হওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে চাইল্ড কেয়ার থেকে জীবিত অবস্থায় কন্যা শিশুটিকে উদ্ধারের পর তাকে নগরীর রয়েল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রয়েল হাসপাতালের আইসিইউতে নবজাতককে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ডা. বিধান রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, শিশুটির বেশ অসুস্থ। জন্মের পর ব্রেনে অক্সিজেন পৌছেনি। খিচুনি ও ইনফেকশন আছে। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম বলেন, ঘটনাটি শুনার পর আমি হাসপাতালে গিয়েছি। শিুশুটি বর্তমানে রয়েল হাসপাতালে আছে। তিনি বলেন, এটি সাধারন কোন ঘটনা নয়। হয়তো একটা জানাজানি হয়েছে। এরকম আরো ঘটনা ঘটেছে, যা ধামাচাপা পড়ে গেছে। তিনি ঘটনা সুষ্ঠু দতন্তে করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।