নিউজ ডেস্ক:
জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। রোহিঙ্গা মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জাতিসংঘ এ পদক্ষেপ নিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থেনিও গুতেরেস আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেশ করেছেন। প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের হাতে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা মুসলমান নারী ও কিশোরী যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং এখন তারা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। জাতিসংঘ মহাসচিব তার প্রতিবেদনে আরো বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে হুমকি, অবমাননা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সেনা সদস্যরা ইচ্ছা করেই নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাত যাতে তারা মিয়ানমার ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় এবং ফিরে আসার চিন্তাও করতে না পারে। এ খবর দিয়েছে পার্সটুডে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বিভিন্ন প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের হাতে রোহিঙ্গা মুসলমান নারীদের যৌন নির্যাতনের খবর তুলে ধরেছে। এমনকি কন্যা শিশুরাও ওই নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি বলে এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘ যদিও অনেক দেরিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে কিন্তু তারপরও এ থেকে বোঝা যায়, জাতিসংঘ অন্তত বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছে।
মিয়ানমারের জনগণ মনে করেন, কেবল প্রতিবেদন প্রকাশ করেই জাতিসংঘের দায়িত্ব পালন শেষ করা উচিত হবে না বরং এই সংস্থার উচিত উগ্র বৌদ্ধ ও অপরাধী সেনা সদস্যদেরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালানো। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলী ফাতোউ বোম বেনসৌদা বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্মম গণহত্যা কোনো ছোটখাট বিষয় নয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উচিত এ বিষয়ে বিচারিক তদন্ত শুরু করা।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির সরকার বিশ্বজনমতকে ধোঁকা দেয়ার জন্য অপরাধী কিছু সেনা সদস্যকে লোক দেখানো বিচার করেছে। অবশ্য মিয়ানমারের সর্বোচ্চ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে যে সিদ্ধান্ত এসেছে সে অনুযায়ী রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। ফলে মূল অপরাধীদেরকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার যে কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারেও জাতিসংঘ সবার আগে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে।
যাইহোক, রোহিঙ্গা মুসলমানরা চায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কেবল প্রতিবেদন প্রকাশ কেই যেন দায়িত্ব শেষ না করে বরং তারা চায় প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে যাতে তারা নিজ দেশে ফিরে নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।