তানভিরুল মিরাজ রিপন
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সাতচল্লিশ বছর।বিভিন্ন বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলার জন্য সর্বশ্রেণী, সর্বস্থরের, সকল জনপদের নারী পুরুষ এবং শিশুরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলো।যুদ্ধটা সকলের ছিলো কিন্তু যুদ্ধগ্রস্থ দেশকে নির্মান করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু নয়া বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক গোষ্টীগুলো নিয়ে নয়া একদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছেন।কারন ছিলো যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশে বৈষম্য,শ্রেণী,উচু্ নিচু ফারাকের হারটা বাড়ছে।তিঁনি মনেকরেছেন “এই মুহুর্তে বাংলাদেশের রাজনীতি দরকার নয়,বাংলাদেশকে বিনির্মাণ দরকার।” সাংবাদিক উরিয়ানা ফালাচি যখন মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু হাস্যোজ্জল ভাবে উত্তর দিয়েছেন “এই রাষ্ট্রকে একটা কাঠামোতে আমি নিয়েই যাবো। যেতে পারবোই।”খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে তিনি রাষ্ট্রকে গড়ে তুলছিলেন তখনকার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত রাষ্ট্র আর সদ্যজন্ম নেওয়া একটা বাংলাদেশ নামের ভূখন্ডের মাথাপিছু আয় ঈর্ষনীয় ভাবে বেড়েছিল।মানুষের অধিকারের রাজনীতির সমাপ্তি ১৯৭৫ সালে শেষ।বঙ্গবন্ধুর পরে স্বাধীনতা বিরোধী  ও স্বাধীনতা স্বপক্ষের দ্বন্দ তর্ক ৪৭ বছরেও পুরানো হয়নি। এমনকি সঠিক ইতিহাস প্রকাশে এখনো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জাতিকে দলাদলিতে আজও ব্যস্ত দেখা যায়।বাঙালি স্বত্বা কিংবা বাঙালি সংস্কৃতি অথবা বাঙালি রীতিতে মানুষের ধর্মীয় দ্বন্দ কিংবা অমিলের দ্বন্দ খুজতে দেখি।তাহলে এই রাষ্ট্রে কি যৌক্তিকতা আছে?সে দ্বন্দমুখর জাতির প্রজন্মের হাতে বাংলাদেশ এখন কিন্তু তারা করছে সংস্কার আন্দোলন।সংস্কার আন্দোলন কর্মীরা এখন ব্যস্ত শুধুই মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারে।এই মুহুর্তের ফাঁসকৃত প্রশ্ন দিয়ে পাস করা কথিত মেধাবীদের আন্দোলন।রাষ্ট্র ভুল পথে গেলো কি না,রাষ্ট্রের শিক্ষা সমস্যা চলছে কিনা ,যৌন নিপীড়ন,রাষ্ট্রের দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যাওয়া,রিজার্ভ চুরি বা অন্যান্য প্রসঙ্গতে যৌক্তিক কর্মীদের দেখতে পাওয়া যায়না।এখন তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে যৌক্তিক আন্দোলন করছে।করুক গনতন্ত্রের রাষ্ট্রে আন্দোলন হওয়া উচিত।কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ কোটা দিয়ে চাকরি হয় কয়জনের? বাস্তব চিত্রতো উল্টো।বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ চাকরি-ই অপ্রাতিষ্ঠানিক।অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে চাকরি হয় ৬ কোটি ২৫ লাখ মানুষের,অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে কোঠা আছে?প্রতিবছরে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানে যোগদান করছে তবে সংখ্যাটা অনেক কম।৪৭% স্নাতকের চাকরি নেয় তার মাঝে ১৪.২৭% প্রকৌশলী এবং ডাক্তার বেকার।প্রতিবছরই নতুন নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।স্নাতক পাশওয়ালা বাড়ছে-কিন্তু কর্মক্ষেত্রতো বাড়ছে না।২০১৬ সালের একটি জরিপ মতে “বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.৪% “দক্ষিন এশিয়ার যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও সামরিক রাহুগ্রস্ত  আফগানিস্থান এবং গৃহরাজনৈতিক দ্বন্দে ভোগা দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ বাংলাদেশ উপরে। এই দুটি বাদ দিলে বাংলাদেশ সবার ওপরে।তাহলে এই বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ার কারন কি একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা?মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কয়জন?এক কোটি তো না,এমনকি পাঁচ লাখো না।তাহলে ২৬ লাখ  মানুষের বেকারত্বের কারন কি?কর্মসংস্থান নেই।আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতিপুতিরাতো সবাই একদিনে চাকরি নিতে যাচ্ছে না।তাহলে ২৬ লাখ বেকার কি করে হলো?জনসংখ্যা এবং শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়াতে হলে এবং উচ্চশিক্ষিত জনশক্তি বাড়াতে হলে তো উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্টান লাগবেই।তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে এটার একটা যুক্তিতো আছে।
বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের তরুণদের আগ্রহ  কাস্টমস এ।কাস্টমসে আবেদন জমা পড়ে ৭০০০০ থেকে ৮০০০০ হাজার।এমন কিছু কর্মস্থান আছে যেগুলো তিন চারটা আবেদনের চেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়ে না।তাহলে এই তরুণদের আগ্রহ কিসে? রাষ্ট্র গবেষনা খাতকে উন্নত করছে না।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর গেইট থেকে ওয়াশরুম পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে।কোন ক্ষেত্রে বাজেট দেওয়া হচ্ছে না মানসম্মত। সেকারনে দেশের গুনগত শিক্ষার মান শূন্যে।তাই তারা লোভনীয় পেশা বেছে নিচ্ছে।কাস্টমস তার বড় উদাহরন-যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করছে তারা বেশির ভাগই চাকরি নিবে কাস্টমসে বা পররাষ্ট্র দপ্তরে এসবে লাভ আছে দুর্নীতি করা যায়।এই যৌক্তিক আন্দোলন কর্মীরা দেশের তরুন প্রজন্মের অংশ।তারা চাইলে দেশ বদলাবে। কিন্তু কখনো দেশে এতো দুর্নীতি রাজনৈতিক খুন, গুম,ধর্ষন,বিচার ব্যবস্থার দলীয় করন সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধ কখনো দাড়িয়েছে। স্পষ্টত দাড়ায়নি-না দাড়ানোটার মানে হলো তারও দেশটার কোষকে ভোগ করতে চাই।তারা সকলে আগে শপথ বদ্ধ হোক তারা দুর্নীতি করবে না।তারা সাধারন মানুষের ভোগান্তির ভূমিকা হবে না।কেউ আশ্বাস দিতে পারবে?এরা যদি সত্যিকার্থে দেশটাকে ভালবাসে তাহলে তারা কাস্টমস মুখী হতো না।দেশের সংস্কার চায় তাহলে রাষ্ট্রের সকল কর্মক্ষেত্রের জন্য কথা বলতো।তার বিসিএস ক্যাডারে শীতিলতা চায়।মুল সমস্যা কোটায় মোটও না।মৌলিক সমস্যা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ-বিএনপির আমলে বিএনপির সমর্থকদের চাকরি এবং আওয়ামীলীগের আমলে আওয়ামীলীগ সমর্থকদের চাকরির হারবাড়ানোটা মৌলিক সমস্যা।এই মুহুর্তে প্রার্থীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্যেও বিএনপির রাজনীতি করে-তার মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়ে চাকরি হবে না।একেবারে শতভাগ নিশ্চিত।বিসিএস ক্যডার বা অন্যান্য চাকরিতে কোটাভুক্তরা এতো সুবিধা করতে পারে না।যা বর্তমান আওয়ামীলীগ বা অতীতের বিএনপির রাজনীতিক হস্তক্ষেপ করে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াতো কারো সরকারি চাকরি হয় না।এই পুলিশ ভেরিফিকেশনে অবশ্যই রাজনৈতিক মতাদর্শেরও তদন্ত হয়।মতাদর্শ যদি উলটপালট হয়, সে মুক্তিযোদ্ধা হলেও চাকরি হয় না।আমাদের জরুরী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত করা।কোটা সংস্কার তুচ্ছ বিষয়-যেটা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত হলে মাত্রই বদল হয়ে যাবে।
এখন কোটা সংস্কার অযৌক্তিক।মুল সমস্যা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।
লেখকঃতানভিরুল মিরাজ রিপন